হক জাফর ইমাম, মালদাঃ বেঁচে থাকাটাই এখন একটা জীবন সংগ্রামের ছবি, সেখানে এক ভিখারিনীর মৃতদেহের পাশে থাকার মানবিক ছবিটা কতটা অমূল্য, তা একবার দেখিয়ে দিল মালদা শহরেরই একটি সংগঠন, অবসরের জীবনশিখা৷ সম্বলহীন এক ভিখারিনীর শেষকৃত্য মেটাতে এগিয়ে এলেন এই সংগঠনের সদস্যরা৷ মূল উদ্যোগ নেন কূণাল মুখার্জি৷ মালদা মেডিকেলের মর্গের সামনে তাঁকে জাপটে ধরে মৃতার বোনের আকূল কান্না আরও একবার মনে করিয়ে দল, মানুষ আছে মানুষেই৷ মৃতার নাম দেবি দে৷ বয়স ৪৫৷ ছোটোতেই বাবা-মায়ের হাত ধরে তাঁরা দক্ষিণবঙ্গ থেকে চলে এসেছিলেন মালদায়৷ তাঁরা দুই বোন, এক ভাই৷ একমাত্র ভাই প্রায় ১৫ বছর আগে এক ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় মারা যান৷ তার আগেই মারা গিয়েছিলেন বাবা-মা৷ ছোটো বোন পপিকে কোলেপিঠে মানুষ করেছিলেন দেবিদেবী৷ চেয়েচিন্তে, ভিক্ষে করে দিন গুজরান করতেন৷ যা উপার্জন করতেন, তার বেশিরভাগটা বাড়ি ভাড়া দিতেই চলে যেত৷ তাঁরা মালদা শহর সংলগ্ন মহেশপুর বাগানপাড়ায় জনৈক রতন সাহার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন৷ বেশ কিছুদিনধরে দেবিদেবীর পায়ে একটি ক্ষত হয়েছিল৷ রক্তে শর্করা থাকায় সেই ক্ষত সারছিল না৷ সেই অবস্থাতেও ভিক্ষে করে দিন কাটাতে হচ্ছিল তাঁকে৷ বোন পপিদেবী বলেন, ছোটোতে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর দিদিই ছিলেন তাঁর অভিভাবক৷ বুধবার তিনি বিকেল ৪টে নাগাদ দিদিকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসেন তিনি৷ ডাক্তার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন৷ কিন্তু দিদি হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি৷ ঘরের দরজার সামনে বসে পড়েন দিদি৷ জল খেতে চান৷ জল খাওয়ার পরেই কথা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর৷ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন এবং দিদির মৃতদেহের ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন৷ দিদি চলে যাওয়ার পর তিনি কীভাবে বেঁচে থাকবেন, বুঝতে পারছেন না৷ এই অবস্থায় অবসরের জীবনশিখাই তাঁর শেষ সম্বল৷ অবসরের জীবনশিখার অন্যতম সদস্য, আইনজীবী সুদীপ্ত গাঙ্গুলি এপ্রসঙ্গে বলেন, দুই বোন ভিক্ষে করেই জীবন অতিবাহিত করতেন৷ দু’দিন আগে দেবি দে হাসপাতালে মারা যান৷ তাঁর সৎকার করার মতো লোকবল কিংবা অর্থ, কোনোটাই ছিল না৷ পপিদেবীর পাশে এলাকার কেউ এগিয়েও আসেনি৷ তাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেই পপিদেবীর বাড়িতে ছুটে যান৷ আজ তাঁরা দেবিদেবীর ময়নাতদন্ত করিয়েছেন৷ একই সঙ্গে তাঁর মৃতদেহ সৎকারের সমস্ত ব্যবস্থা করেছেন৷ শহরবাসীর কাছে তাঁদের আবেদন, সবাই যেন পপিদেবীকে বাঁচার রসদ দিতে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান৷ দেখুন ভিডিও –