দেশ

মোরাটোরিয়ামের উপরে সুদ চাপানোর বিরুদ্ধে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াকে নোটিস শীর্ষ আদালতের

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও তার জেরে লকডাউনে বহু ব্যক্তি ও সংস্থার আয় বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে প্রথমে তিন মাস ও পরে আরও তিন মাসের জন্য মোরাটোরিয়াম ঘোষণা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এর ফলে যে কোনও টার্ম লোনের ইএমআই দেওয়া বন্ধ রাখতে পারেন গ্রাহকরা। যদিও এই সুযোগ যাঁরা নিচ্ছেন তাঁদের থেকে এর জন্য ব্যাঙ্ক বা অন্য আর্থিক সংস্থা বাড়তি সুদ নেবে। এই সুদ নেওয়ার বিরোধিতা করেই একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এদিন সেই মামলা গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে নোটিস পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হবে। গত ২৫ মার্চ প্রথম দফার লকডাউন ঘোষণার পরেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তিন মাসের জন্য টার্ম লোনের উপরে মোরাটোরিয়াম ঘোষণা করে। ২৭ মার্চ সাংবাদিক বৈঠক করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ঘোষণা করেন, সমস্ত রকম টার্ম লোনের উপরে তিন মাস মোরাটোরিয়াম থাকবে। সব কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক, নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি, গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে অনুমতি দেওয়া হয়, তারা তিন মাস ইনস্টলমেন্ট পেমেন্ট নেওয়া স্থগিত রাখতে পারবে। এর পরে সব সংস্থাই জানায়, ১ মার্চ থেকে যে ইনস্টলমেন্ট পেমেন্ট বকেয়া রয়েছে তা তিন মাস পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসার ঋণের জন্য যে ইজি মান্থলি ইনস্টলমেন্ট (ইএমআই) তথা সহজ মাসিক কিস্তি দিতে হয় তা তিন মাস স্থগিত থাকবে। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কোনও ইএমআই কাটা হবে না। যাঁরা সেই সুযোগ নেবেন তাঁদের ঋণ শোধ দেওয়ার মেয়াদ পিছিয়ে যাবে। তবে এই সময়ের জন্য অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে।এই ঘোষণার সময়ে দেশে ২১ দিনের লকডাউন জারি হয়। এর পরে দফায় দফায় বেড়েছে লকডাউনের মেয়াদ। সেটা দেখেই গত ২৩ মে ফের তিন মাসের জন্য টার্ম লোনের উপরে মোরাটোরিয়াম ঘোষণা করে আরবিআই। এক্ষেত্রেও নিয়ম একই থাকে। ঋণ গ্রহীতাদের এখন ইএমআই দিতে না হলেও পরে বাড়তি সুদ দিতে হবে। প্রথমবার মোরাটোরিয়াম ঘোষণার পরেই বাড়তি সুদ দিতে হওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন আগ্রার বাসিন্দা গজেন্দ্র শর্মা। তাঁর আইনজীবী রাজীব দত্ত চলতি মাসের গোড়ায় মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলাতেই বিচারপতি অশোক ভূষণ, সঞ্জয় কিষাণ এবং এম আর শাহর বেঞ্চ নোটিস পাঠিয়েছে কেন্দ্র ‌এবং আরবিআইকে। সুপ্রিম কোর্ট আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হবে বলে জানিয়েছে। মামলাকারী অভিযোগে বলেন, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে তাঁর ৩৭ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। লকডাউনের সময়ে তাঁর আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি কোনও ইএমআই জমা দিতে পারছেন না। তাঁর আরও বক্তব্য, দেশজুড়ে মানুষ অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে রয়েছেন এই মহামারী ও লকডাউনের ফলে। এই সময়ে মোরাটোরিয়াম খুবই কার্যকর। কিন্তু তার জন্য যদি বাড়তি সুদ দিতেই হয় তবে মোরাটোরিয়ামের উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যাবে। তাঁর আবেদন, সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে এই সময়ের জন্য সুদ মকুব করতে নির্দেশ দিক।