বাড়লঃ জামাকাপড়, চামড়ার জিনিস, সোলার ইনভার্টার, কটন, সিল্ক, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বিদেশি মোবাইল ফোন, মোবাইল ফোনের চার্জার। কমলঃ লৌহ-ইস্পাতের ওপর আমদানি শুল্ক, সোনা-রুপো-তামাজাত পণ্য
আজ বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার লক্ষ্যে আজ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি ট্যাব হাতে নিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন তিনি। এটি দেশের প্রথম পেপারলেস বাজেট। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে বাজেট পেশ শুরু হয়। করোনা কালে বিধ্বস্ত রয়েছে দেশ। ধুঁকছে অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত তথা দেশবাসী কী সুবিধা পাবে তা জানতে আমজনতা টিভির সামনে মুখিয়ে ছিলেন। অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানিয়েছিলেন, এই বাজেট হবে মানুষের প্রত্যাশার কথা মাথায় রেখে। সব কা সাথ, সব কা বিকাশের কথা মাথায় রাখা হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে দিশা দেখাতেই এদিন বাজেট পেশ বলে দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু বাজেট পেশের শুরু থেকেই হতাশ হয়ে পড়েন মানুষ। মধ্যবিত্তদের করছাড়ের বিষয়ে এদিন কোনও নতুন ঘোষণা করেননি অর্থমন্ত্রী। গৃহঋণে কর ছাড়। এছাড়া ৭৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ইন্টারেস্ট ইনকামের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ করছাড়। এইদুটি ছাড়া এদিন সেভাবে কোনও চমক ছিল না। স্বাস্থ্য খাতে ২ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে। বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রী জানান, কোভিড পরিস্থিতিতে আত্মনির্ভর হয়েছে ভারত। ইতিমধ্যেই দুটি টিকা তৈরি করা হয়েছে। করোনা টিকার জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশের প্রায় সমস্ত জেলায় স্বাস্থ্য ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হবে বলে এদিনের বাজেটে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ভারতে প্রস্তুত টিকা দেশবাসীদের পাশাপাশি প্রায় ১০০টি অন্য দেশে পাঠানো হবে। সামনেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। সেটাকে পাখির চোখ করে বাংলার জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেট বক্তৃতায় এ রাজ্যের জন্য ৬৭৫ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণের ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী সীতারমন। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত করা হবে। উত্তরবঙ্গে গেরুয়া শিবিরের ভালো ফল বলেই এই বাড়তি পাওনা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, খড়্গপুর-বিজয়ওয়াড়া, ডানকুনি-গোমা ফ্রেট করিডর তৈরি করা হবে। মোদ্দা কথা নির্বাচনের আগে সড়ক থেকে রেল কোনও ক্ষেত্রেই এই বাজেট বাংলাকে নিরাশ করেনি। চা শিল্পেও বাংলা অন্যতম। সেকথা মাথায় রেখে চা শিল্পের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি তামিলনাড়ু ও কেরালাতেও রাস্তা নির্মাণ, সম্প্রসারণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। চালু করা হচ্ছে এক দেশ, এক রেশন কার্ড। বায়ু দূষণের পাশাপাশি জ্বালানি বাঁচানোর ক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। জানানো হয়েছে ২০ বছরের পুরোনো গাড়ি বাতিল করা হবে। তবে এই বছরের বাজেটে বেসরকারিকরণের বাড়বাড়ন্ত রয়েছে। তাই জোর চটেছেন বিরোধী তথা জনগণের একাংশ। বাজেটে বলা হয়েছে, যে সব সরকারি সংস্থা লোকসানে চলছে তা বিক্রি করে দেওয়া হবে। এর ফলে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা মিলবে। এয়ার ইন্ডিয়া, পবনহংস, বিপিসিএল-এর বেসরকারিকরণ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। বলা হয়েছে এলআইসি-র শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলা লাভজনক এই সংস্থা বেকায়দায় পড়তে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। জানানো হয়েছে, বিমাক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৪ শতাংশ করা হয়েছে। জিএআইএল, আইসি, এইচপিসিএল -এর বিলগ্নিকরণ করা হবে। এছাড়া রাজ্যগুলিকে তাদের উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করার কথাও বলা হয়েছে। জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে। বন্দর ব্যবস্থাপনাতেও থাকছে বেসরকারি সংস্থার আধিক্য। পর্যটনের উপর জোর দিয়ে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক সড়ক নির্মাণের ভাবনা-চিন্তা করা হয়েছে। রেলের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা। নজর দেওয়া হয়েছে মেট্রো রেল পরিষেবাতেও। মেট্রো লাইট, মেট্রো নিউ নামের দুটি নতুন প্রকল্প চালু হচ্ছে। জাপান থেকে জাহাজ এনে সেটি ভারতে পুননির্মান করা হবে। এতে প্রায় দেড় লক্ষ কর্মসংস্থান বাড়বে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী। শহরের গ্যাস বণ্টন পদ্ধতিও উন্নত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। কর্পোরেট সংস্থার কথা মাথায় রেখে জানানো হয়েছে, এবার পিএফ-এর টাকা জমায় দেরি হলেও বাড়তি টাকা কাটা হবে না। যে ৪০০টি পুরনো ছাড় রয়েছে সেগুলি পুনর্বিবেচনা করা হবে। পরিবর্তন করা হবে সেআইনেও। ছোট কোম্পানি এবং স্টার্ট আপ সংস্থাগুলিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কোম্পিনজ অ্যাক্টে সংশোধন আনা হবে। এছাড়া কাঁচা মালের ওপর কাস্টমস ডিউটি কমানো হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত লোহা-ইস্পাত শিল্পের উপর আমদানি কর ২.৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। পাশাপাশি নাইলন ফাইবার, রাসায়নিক পণ্যের উপরেও আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে এই বাজেটে। কৃষিক্ষেত্রে কৃষকদের ঋণ বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ১৬.৫ লক্ষ কোটি। কৃষি আইনের জেরে দেশজুড়ে চলছে আন্দোলন। দিল্লি সীমানায় লাগাতার গোলমাল চলছে। বিগত কয়েক মাস ধরে রাস্তায় বসে রয়েছেন কৃষকরা। সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে কৃষকদের কথা মাথায় রেখে অর্থমন্ত্রী এদিন বাজেট বক্তৃতায় জানান, কৃষক কল্যাণে বদ্ধপরিকর সরকার। ২০২০-২১ সালে কৃষকদের ৭৫ হাজার ৬০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। গমের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসেবে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, এর ফলে নাকি ৪৩.৬ লক্ষ কৃষক উপকৃত হবেন। তবে এতসবের মধ্যেও এটি জনমোহিনী বাজেট বলতে নারাজ অনেকেই। অধিকাংশ সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণ। এলআইসির শেয়ার বাজারে ছাড়ার পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের জন্য এবারেও তেমন কিছুই দিতে পারেনি কেন্দ্র। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই জনগণের মন কাড়তে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। বাজেটে একাধিক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ৷
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাজেট ২০২১
দাম বাড়ল | দাম কমল |
ইলেকট্রনিক দ্রব্য | লোহা |
মোবাইলের চার্জার | স্টিল |
মোবাইল ফোন | নাইলন কাপড় |
চামড়ার জুতো | তামার দ্রব্য |
কাবলি ছোলা, ডাল | বিমা |
ইউরিয়া | বিদ্যুতের খরচ |
মদ এবং অ্যালকোহল মিশ্রত পানীয় | স্টিলের বাসন |
রত্ন পাথর | ড্রাই ক্লিনিং |
স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাংশ | কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ |
🔴 ডিজেলে লিটার পিছু ৪ টাকা কৃষি সেস এবং পেট্রোলে লিটারপিছু ২.৫ টাকা কৃষি সেস ধার্য করা হয়েছে।
🔴 দাম বাড়ছে ইলেকট্রনিক দ্রব্য-এর।
🔴 দাম বাড়ছে মোবাইলের৷
🔴 মোবাইলের সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ছে পাওয়ার ব্যাঙ্কেরও৷
🔴 মোবাইল চার্জারেরও দাম বাড়ানো হয়েছে এই নতুন বাজেটে৷
🔴 তন্তুর আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে৷ তাই দাম বাড়তে চলেছে তন্তুজাতীয় পণ্যের৷
🔴 এটোমোবাইল পার্টসেরও দাম বাড়ানো হয়েছে নতুন বাজেটে৷
🔴 দাম বাড়ছে রত্ন-পাথরের।
🔴সোলার ইনভাটার দাম বাড়ল।
🔴 দাম বাড়ছে কাবলি ছোলার৷
🔴 টানেল বোরিং মেশিনের দামও বাড়ছে৷
🔴 চামড়াজাত পণ্য, যেমন ব্যাগ, জুতা, বেল্ট ইত্যাদি পণ্যের দাম বৃদ্ধি হয়েছে৷