আঞ্চলিক নেতাদের পরিবর্তে শাসন ক্ষমতা কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে তুলে দিলে গোটা দেশের মতো বাংলারও সামাজিক অবক্ষয় ঘটবে। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঘটলে তাদের হাতে গিয়েই পৌঁছবে, যাদের আর্থ-সামাজিক নীতি ‘অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ’। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের মাঝে নাম না করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বিঁধলেন নোবেল-জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
বাংলার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের নিরিখে এবারের নির্বাচনে যেভাবে ‘পরিচিতির রাজনীতি’র কুত্সিত রূপ মাথাচাড়া দিয়েছে, তার তীব্র সমালোচনা করেন অমর্ত্য সেন। শুধু তাই নয়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুদের কঠোর পরিশ্রমের কথা মনে করিয়ে দিলেন তিনি। একুশের নির্বাচনে যেভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অস্ত্রে শান দেওয়া হচ্ছে, তা দায় সরাসরি হিন্দুত্ববাদীদের ঘাড়েই ঠেলে দিলেন অর্থনীতিবিদ। তাঁর কথায়, ‘১৯৪৬ সালের পর সাম্প্রদায়িক বিভাজনের এই ভয়ঙ্কর রাজনীতি আগে দেখা যায়নি, তা এখন ঘটছে। চল্লিশের দশকে গান্ধীজি যা করেছিলেন, তা মুছে ফেলতে চাইলে বাংলার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এই বিষয়টিকে অস্বীকার করার প্রবণতাকেই যেন আরও বেশি করে উত্সাহ দেওয়া হচ্ছে এবারের নির্বাচনে। গান্ধীজি স্পষ্ট ভাষা বুঝিয়েছিলেন, বাংলা একতা চায়, বিভাজন নয়।’ তৃণমূলের ‘বহিরাগত’ তত্ত্বের সমালোচনা করলেও তাঁর বক্তব্য, ‘যখন বড় কোনও রাজনৈতিক দল বাংলার মোট জনসংখ্যার একাংশকে, আরও স্পষ্ট করে বললে, বাঙালি মুসলিমদের সমর্থন না নিয়ে শুধু হিন্দুদের (যাঁরা আদতে বাইরে থেকে এসেছে) সমর্থনে ক্ষমতায় আসতে চায়, তখন বিভাজন রেখাটা আরও বেশি করে স্পষ্ট হয়।’ মমতা সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প, মূলত মেয়েদের জন্য যে প্রকল্প চালু হয়েছে, তার প্রশংসা করার পাশাপাশি গ্রামীণ পরিকাঠামো এবং খাদ্য সুরক্ষা ব্যবস্থারও প্রশংসা করেন অমর্ত্য সেন। সে বিষয়ে বলতে গিয়ে গুজরাটের প্রসঙ্গও টানেন তিনি। বলেন, ‘পারিবারিক রোজগার কম হলেও বাংলার শিশুদের স্বাস্থ্য গুজরাটের শিশুদের চেয়ে অনেক ভালো। যা এখানকার সরকারের ভাল কাজেরই প্রমাণ।’ ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’, এই স্লোগানের কাছাকাছি গিয়ে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা স্থানীয় নেতাদের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।