প্রিয়াংকা সেনগুপ্ত, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ ভোটের প্রচার চলার সময় একবার মুখোমুখি হয়েছিলেন দুজনেই। দুজনেই একে অপরকে নমস্কার জানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছিলেন। যে সময় তৃণমূল এবং বিজেপি একে অপরকে তীব্র আক্রমণ করছে সেই সময় অন্য রকম এক নজির সৃষ্টি করেছিলেন মেদিনীপুরের তৃণমূলের প্রার্থী , অভিনেত্রী জুন মালিয়া এবং বিজেপির প্রার্থী, দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি , শমিত দাশ। রাস্তায় দেখা হতে একে অপরকে এড়িয়ে না গিয়ে কথা বলেছিলেন দুজনেই। শমিত জুনকে জানিয়েছিলেন যে জুনের অভিনয় তাঁর ভালো লাগে। আর জুন তাকে বলেছিলেন যে পরে তিনি তাঁর বাড়িতে যাবেন। সেই জুন এখন বিধায়ক। আর আজ, যেদিন তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেদিন আবার সৌজন্যতা দেখল বাংলা। দেখল জুন মালিয়া এবং শমিত দাশের জন্যই। এদিন সৌজন্যতা নজির গড়লেন মেদিনীপুরের নব নির্বাচিত বিধায়ক জুন মালিয়া। বুধবার যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করলেন তখন মেদিনীপুর শহরে জয়েন্ট স্ক্রিনের সামনে বসে তা দেখলেন দেখেলন জেলার নির্বাচিত বিধায়কদের সাথে জুন মালিয়াও। তারপরে কয়েকজন বিধায়ক যান জেলাশাসকের সাথে দেখা করতে। আর, জুন মালিয়া? তিনি জেলাশাসকের কাছে না গিয়ে চলে গেলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শমিত দাশের বাড়িতে। শহরের বিধাননগর এলাকায় বাড়ি শমিত দাশের। জুন মালিয়া সার্কিট হাউস মোড়ের সামনে গাড়িতে নামার পর হেঁটে চলে যান শমিত দাশের বাড়িতে। সেই সময় বাড়িতেই ছিলেন শমিত দাশ। জুন মালিয়া তাঁর বাড়িতে আসছে জানতে পেরেই তিনি গেটের সামনে বেরিয়ে এসে চলে আসেন। ঘরে নিয়ে যান আমন্ত্রণ জানিয়ে। ফুল ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। জুনের জন্য প্লেটে মিষ্টি সাজিয়ে নিয়ে আসেন শমিত। নিজে সেই প্লেট ধরে থেকে মিষ্টি খাওয়ান জুনকে। সেই মিষ্টি নিজে খাওয়ার সাথে সাথেই জুন খাইয়ে দেন তার ‘ভাই’ শমিত দাশকেও। জুন এবং শমিত দুজনে কিছুক্ষণ কথা বলেন। এলাকাতে যাতে শান্তি বজায় থাকে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। রাজ্যে এখন নানা জায়গায় চলছে ভোট পরবর্তী হিংসা। বেশ কয়েকজন খুনও হয়েছেন। এই অশান্তির আঁচ লেগেছে এই জেলাতেও। এই ধরনের হিংসা বন্ধের আর্জি জানিয়েছেন শমিত। একই আবেদন জুন মালিয়ারও। দুজনেই বলেন, “আমরা চাই শান্তি বজায় রাখতে।” শমিতকে জুন মিষ্টি মুখ করিয়ে জানিয়ে গেলেন তিনি ভাইফোঁটা দিতে আসবেন আবার। শমিত দাশও জানান যে সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন তিনি। পরে জুন বলেন, “অশান্তি নয় আর। এবার শান্তি চাই। দুজনেই শান্তির বার্তা দিতে চাই দুই দলের কর্মী সমর্থকদের। উন্নয়ন তো একা করা যায় না, সবাই হাত মিলিয়ে কাজ করব।” আর শমিত বলেন, “জুন হচ্ছে আমার দিদি। তিনি এখন বিধায়ক। রাজনৈতিক সৌজন্য দেখাতে এসেছেন। শান্তি রক্ষা করতে হবে। ওনার অভিনয় ভালো লাগে। যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল সেদিন বলেছিলাম তার অভিনয় ভালো লাগে। আর আজ তিনি জানিয়েছেন যে ভাই ফোঁটার দিন আসবেন আমাকে ফোটা দিতে।”