দেশ

‘আজকের তারিখটা লিখে রাখুন, আগামী দেড় বছরের মধ্যে ত্রিপুরায় সরকার গড়বে তৃণমূল’, চ্যালেঞ্জ অভিষেকের

“আজ পা দিলাম। দেড় বছরের মধ্যে এই ত্রিপুরাতেই উন্নয়নের সরকার গড়ে দেখিয়ে দেব, কথা দিলাম।” ঠিক এই ভাষাতেই সাংবাদিক বৈঠকে সোচ্চার হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সকাল থেকে ত্রিপুরায় তৃণমূলের ঝড় অব্যহত। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগরতলা ঢুকতেই কনভয় ঘিরে বিক্ষোভ, গাড়িতে লাঠির বাড়ি, ‘‌গো ব্যাক’‌ স্লোগান, পথ অবরোধ। বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কিন্তু পাল্টা গান্ধী গিরির পথে হাঁটলেন অভিষেক। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের উক্তি ধার করে অভিষেক বললেন, “অতিথি দেব ভব, বাংলায় আসার আমন্ত্রণ রইল ওঁকে”। অভিষেক এদিন শুরু থেকেই ছিলেন নিজের মেজাজে। একদিকে বিজেপিকে আক্রমণ আর অন্যদিকে ত্রিপুরাবাসীর জন্য “উন্নত ত্রিপুরা” মডেল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে অর্থনীতি এবং সামাজিক সুরক্ষা। ঘুরে ফিরে সব এসেছে অভিষেকের বক্তব্যে। ঠিক কী বললেন অভিষেক?
১)আগামী দেড় বছরের মধ্যে ত্রিপুরায় সরকার গড়বে তৃণমূল কংগ্রেস। উন্নয়নের সরকার হবে, দাবি করে অভিষেক বলেন “বাংলায় দুয়ারে রেশন চালু হয়েছে। ত্রিপুরায় দুয়ারে গুন্ডা চলছে”। ইস্তফা দিন বিপ্লব দেব।
২) ত্রিপুরায় ৮ টি জেলা। ৫৮টি ব্লক। ৩,৩২৪ টি বুথ। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বুথ কমিটি তৈরি করবে তৃণমূল কংগ্রেস। 
৩) মাসে চারবার করে ত্রিপুরা আসবেন বলে জানিয়েছেন এই সাংসদ। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তিনি বলেন, “বার বার আসব ত্রিপুরায়। ত্রিপুরা এখন তৃণমূল কংগ্রেসের পাখির চোখ।
দিল্লির নেতাদের থেকে বেশি আসব। পারলে আমাকে আটকে দেখান”।
৪) ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে “বলির পাঁঠা” বললেন অভিষেক। তিনি বলেন, ত্রিপুরার মানুষ শিক্ষিত। কিন্তু দিল্লি থেকে এমন এক জনকে এখানে মুখ্য মন্ত্রী করা হয়েছে যিনি আসলে দিল্লির তল্পিবাহক। এই রাজ্যটা এখন রিমোট কন্ট্রোলে চলে।
বিপ্লব দেবকে অভিষেকের পরামর্শ, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লেটারহেড ছাপিয়ে ফেলুন”।
৫) ২০১৮–তে বিজেপি সরকার গঠন করার পর “মিসড কল” দিয়ে চাকরির কথা বলেছিল। অভিযোগ অভিষেকের। তাঁর হিসাব, গত তিন বছরে চাকরি পাওয়ার বদলে চাকরি চলে গেছে বহু মানুষের। ১০০ জনেরও বেশি শিক্ষক এই রাজ্যে চাকরি হারিয়ে মারা গেছেন।
৬) পশ্চিমবঙ্গে যে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে তার উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, ত্রিপুরার মানুষের ও অধিকার আছে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী পাওয়ার। কিন্তু ডবল ইঞ্জিন সরকার থাকার পরেও এখানকার মানুষ বঞ্চিত।
৭) তবে রাজনৈতিকভাবে সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা নিঃসন্দেহে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানানো। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ এ দিন বলেন, ২০১৬ সালে তিনি আগরতলা এসেছিলেন। তাঁর মতে বাম আমলে এই রাজ্যের অবস্থা অন্তত বিজেপি শাসনের থেকে ভাল ছিল। আলাদা করে বাম কর্মী, সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাংলায় রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের পরেও লেনিন বা কার্ল মার্কসের মূর্তি ভাঙ্গা হয়নি। সিপিএমের পার্টি অফিস ভাঙা হয়নি। অন্য কোন বিরোধী না পেয়ে ত্রিপুরার মানুষ সিপিএমের বদলে বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। সিপিএম, কংগ্রেস সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে অনুরোধ করব একমঞ্চে থাকার জন্য”।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ত্রিপুরায় সংগঠন করার ক্ষেত্রে তৃণমূল নেত্রী সবথেকে বেশি জোর দিচ্ছেন বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিষয়ে এখানকার মানুষ কে অবগত করার  দিকে। একই সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী’ বিলক্ষণ জানেন, পার্বত্য ত্রিপুরায় উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সংগঠন তৈরি করতে সময় লাগবে। এই রাজ্যের এক প্রাক্তন  মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী বছরের পর বছর ওইসব এলাকায় ঘুরে বাম সংগঠন তৈরি করেছিলেন। ফলে, পাশের রাজ্য হলেও এখানে সংগঠন তৈরি করতে যথেষ্ট মেহনত করতে হবে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই কারণেই তৃণমূল নেত্রী আলাদা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই এই রাজ্যের যাবতীয় সাংগঠনিক বিষয় দেখার ক্ষেত্রে একক দায়িত্ব দিয়েছেন।

https://www.facebook.com/AITCofficial/videos/242097481072854
https://www.facebook.com/AbhishekBanerjeeOfficial/videos/620279278952176