কলকাতা

‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ মামলার রায় স্থগিত রাখল হাইকোর্ট

ভোট পরবর্তী হিংসার মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে শেষ হল মঙ্গলবার। তবে রায়দান স্থগিত রেখেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। হাইকোর্টের নির্দেশে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে মানবাধিকার কমিশন। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনে। সেই নিয়ে রাজ্যের জবাব চায় কোর্ট।

এদিন বিজেপি ও কমিশনের তোলা অভিযোগ খণ্ডন করে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত দাবি করেছেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দলের অভিযোগ ছাড়াও ২৬৮টি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশ। কমিশনের প্রতিনিধিরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আদালতকে ভুল পথে চালনার জন্য মনগড়া রিপোর্ট পেশ করেছে।  অ্যাডভোকেট জেনারেল অভিযোগ তোলেন, এই কমিটি তার সীমার বাইরে গিয়ে কাজ করেছে। তিনি বলেন, খুন, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তার তালিকাও পেশ করা হবে। এমনটা নয়, যে কমিশনের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই শুধু মামলা দায়ের হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোটের ফলাফলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন বহু ঘটনার উল্লেখ এই রিপোর্টে আছে। বহু ক্ষেত্রেই আক্রান্তদের অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। 
অন্যদিকে, কমিশনের অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজির হয়ে সওয়াল করেছেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন, ‘‌জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দলের এই রিপোর্ট একটা ধাঁধার মতো এবং ত্রুটিপূর্ণ। আমরা এই কমিটির দু’‌ তিনজন সদস্যের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছি। সহজাতভাবেই বোঝা যায়, যে এরা পক্ষপাত দুষ্ট।’‌ সিঙ্ঘভির অভিযোগ, ‘‌এই কমিটির অপর একজন সদস্য শ্রী দেশাই সরাসরি বিজেপি–র সঙ্গে যুক্ত। সে কারণেই পক্ষপাতিত্বের উপযুক্ত কারণ রয়েছে বলে আমরা মনে করছি। এই কমিটি এবং তার রিপোর্ট গোটা প্রক্রিয়াকে কলঙ্কিত করছে। অভিযোগ পত্রের ধরন দেখে মনে হচ্ছে যেন এগুলো আগে থেকেই তৈরি করা ছিল, এই রিপোর্টে ২৯ এপ্রিলের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা ভোটের ফল ঘোষণার আগে হয়েছে।’‌  
তিনি এও বললেন, রিপোর্টে যে অভিযোগগুলোর কথা বলা হয়েছে তার বেশির ভাগেরই ভোট-পরবর্তী হিংসার সঙ্গে কোন যোগ নেই। অভিযোগকারীরা বাংলায় তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন, কমিটির সদস্যরা সেগুলিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। বাংলা থেকে ইংরেজি করার সময় প্রায় সম্পূর্ণ বক্তব্য পাল্টে ফেলা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিটির কাছ থেকে পুলিশ ১,৪২৯ টি অভিযোগ পেয়েছে, তার মধ্যে ১,৩৩৮ টি অভিযোগের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুলিশ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ কমিটির কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের আগে রাজ্য পুলিশ কী করছিল? প্রশ্ন তোলে আদালত। 
ডিজি–র তরফে জানানো হয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ কমিটির তরফ থেকে ১,৯৭৯ অভিযোগ জমা পড়েছিল, যার মধ্যে ৮৬৪টি অভিযোগের কোনও তারিখ উল্লেখ করা নেই। যে ৫২ টি খুনের অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যে আটটি ক্ষেত্রে কোনও তারিখের উল্লেখ নেই। যে ৭২টি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যে ৯টি ক্ষেত্রে কোনও তারিখের উল্লেখ নেই। চারটি অভিযোগ ২ মে থেকে ৫ মের মধ্যে ঘটেছে।  কেন্দ্র সরকারের আইনজীবী ওয়াই. জে. দস্তুর বলেন, ‘‌আদালত যদি গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেয়, তাহলে আমরা তদন্ত করতে প্রস্তুত। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে সাহায্য করতেও প্রস্তুত।