দীর্ঘ সময়ের লকডাউন মানুষকে করেছে গৃহবন্দি আর প্রকৃতির জীবদের দিয়ে উন্মুক্ত বিচরণের অধিকার। একই সঙ্গে বদলে গিয়েছে অনেকেরই শৈশব। কোভিডকালেই স্কুলপড়ুয়াদের চাঙ্গা রাখতে মালদা জেলার শোভানগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস কেন্দ্র সরকারকে জানিয়েছিলেন ‘হাইব্রিড লার্নিং’ পদ্ধতির কথা। আর তার জেরেই আগামী শিক্ষক দিবস মানে ৫ সেপ্টেম্বরে তাঁর হাতেই জাতীয় শিক্ষকতার পুরষ্কার তথা সম্মান তুলে দিতে চলেছেন রাষ্ট্রপতি রমানাথ কোবিন্দ। মালদার শিক্ষক আজ তাই বাংলার গর্ব। কোভিডকালে ঘরবন্দি স্কুলপড়ুয়াদের পড়াশোনা কীভাবে চলবে তা নিয়ে প্রথম থেকেই উদ্বিগ্ন ছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। কার্যত ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে সেই যে রাজ্যের সব স্কুল বন্ধ হয়েছে তারপর থেকে এখনও তা খোলেনি। এই সুদীর্ঘকালে হরিস্বামীবাবু লকডাউনের মধ্যেও নিত্যদিন সহ–শিক্ষকদের নিয়ে পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এমনকি তাঁরা কথা বলেছেন তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গেও। একেই হরিস্বামীবাবু ‘হাইব্রিড লার্নিং’ হিসাবে গণ্য করেছেন যা মূলত স্কুলপড়ুয়াদের কাউন্সেলিং। সেই সঙ্গে এই পদ্ধতিতেই তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে স্কুলের অর্ধেক পড়ুয়া স্কুলে এসে ও বাকি অর্ধেক বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতে পারবে। এই পদ্ধতির কথাই তিনি কেন্দ্র সরকারকে জানিয়েছেন। হরিস্বামীবাবুর এই পদ্ধতি পছন্দ হয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের। আর তার জেরেই এবার শিক্ষক দিবসে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে চলেছেন তিনি। ঘটনাচক্রে এবার তিনিই বাংলার একমাত্র শিক্ষক হতে চলেছেন যিনি এই বছর রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পাচ্ছেন। তিনি ছাড়াও দেশের আরও ৪৩জন শিক্ষক এই সম্মান পাচ্ছেন। হরিস্বামীবাবুর সব থেকে বড় কৃতিত্ব তিনি রাজ্যের মধ্যে প্রথম শিক্ষক যিনি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেকটি বইয়ের কিউআর কোড তৈরি করেছেন। ফলে শোভানগর হাইস্কুলের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী যে কোনও জায়গায় থেকেই মোবাইল মারফত বই খুলে পড়ে ফেলতে পারছে। রাজ্যের আর কোনও স্কুলের পড়ুয়াদের এই সুবিধা নেই। আর এই পদ্ধতিকেই এখন মোদি সরকার হাতিয়ার করতে চাইছে দেশজুড়ে স্কুলের পাঠ্যবইকে কিউআর কোডের আওতায় নিয়ে এসে। হরিস্বামীবাবুর হাতধরেই শোভানগর হাইস্কুল ২০১৫ সালে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার পেয়েছিল। ২০১৮ সালে পেয়েছিল শিশুমিত্র পুরস্কার। পরের বছর পায় যামিনী রায় পুরস্কার। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক ইতিমধ্যেই হরিস্বামীবাবুকে জল সংরক্ষণ ও নিখরচায় শিক্ষণ সামগ্রী তৈরির জন্য দু’বার জাতীয় পুরস্কার দিয়েছে। এবার তাঁকে দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারও। তবে কোভিড কালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ভারচুয়ালি হবে। মালদার জেলাশাসকের কার্যালয়ে বসে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছ থেকে সম্মান গ্রহণ করবেন শোভানগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস।