জেলা

‘নন্দীগ্রামে মহিলাকে নগ্ন করে বর্বর অত্যাচারে অভিযুক্ত বিজেপির বুথ সভাপতি, শিশুকন্যাকেও যৌন নির্যাতন’, নির্যাতিতা পাশে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল

নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে মহিলার উপর অকথ্য অত্যাচার। মারতে মারতে বাড়ি থেকে বের করে এনে নগ্ন করে এলাকা ৩০০ মিটার ঘোরানোর মতো বর্বরোচিত কাজ করেছে বিজেপির গুন্ডাবাহিনী। শনিবার বিকেলের সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা নন্দীগ্রাম হাসপাতালে বসে বলছিলেন নির্যাতিতা। গোটা শরীরে এমন কোনও অংশ নেই যেখানে মারের দাগ নেই। ফুলে গিয়েছে শরীর। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। ট্রমায় আক্রান্ত। বলতে বলতে মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের বেডে বসে যখন নির্যাতিতা নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল অবাক, বিস্মিত। তেরো বছরের শিশুকন্যার যৌন নির্যাতনের পর মুখে কোনও শব্দ নেই। আর ছোটে ছেলেটি গোটা ঘটনায় হতবাক। গোকুলনগরে যেখানে নির্যাতিতার বাড়ি, সেই বাড়িতে এর আগেও দু’-দু’বার হামলা চালায় বিজেপি। ভাঙচুর করে বাড়ি। সেই কারণে বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। বিজেপির দুর্বৃত্তরা ক্যামেরা ভেঙে বাড়িতে ঢোকে। প্রায় ৪০ জনের দল ছিল। দফায় দফায় তারা আক্রমণ করে। স্থানীয়দের ক্ষোভ, বিজেপি পঞ্চায়েত কর্তা এই আক্রমণে জড়িত। বিজেপি পার্টি অফিসে বসে এই পরিকল্পনা হয়েছিল। দুর্বৃত্তরা বাড়ি থেকে টানতে টানতে বাইরে এনে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে নির্যাতিতাকে। মারধরের মাঝেই বিবস্ত্র করা হয়। তেরো বছরের মেয়ে বাধা দিতে গেলে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়। ছোট ছেলে ভয় পেয়ে সবজি খেতে লুকিয়ে পড়েছিল। ঘটনার কথা জানতে পেরেই চেন্নাইয়ে কর্মরত নির্যাতিতার স্বামী গোকুলনগরে চলে আসেন। এই ঘটনায় তিনি লিখিত অভিযোগ থানায় দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় বিজেপির বুথ সভাপতি তাপস দাসকে গ্রেফতার করেছে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ। যদিও এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ পারিবারিক বলে দাবি করেছে বিজেপি। তৃণমূলের প্রতিনিধি দল এদিন দুপুরে সরাসরি নন্দীগ্রাম হাসপাতালে যায়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন মন্ত্রী শিউলি সাহা, বীরবাহা হাঁসদা, সাংসদ দোলা সেন, মমতাবালা ঠাকুর, সায়নী ঘোষ, উত্তরা সিং, দেবাংশু ভট্টাচার্য ও কুণাল ঘোষ। মহিলারা গিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলেন। কুণাল এবং দেবাংশু চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। চিকিৎসক জানান, ভয়াবহ ভাবে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে মহিলাকে। গোটা ঘটনায় গভীর আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন নির্যাতিতা। কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করানো যায় কি না সে নিয়েও কথা হয়। চিকিৎসক জানান, সেটাই যথাযথ হবে। এরপর প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রীকে পুরো বিষয়টি জানান এবং কলকাতায় এনে চিকিৎসা করানোর কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী সবুজ সংকেত দিলে নির্যাতিতা তাঁর শিশুকন্যা এবং স্বামীকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স পিজিতে নিয়ে আসে। সেখানেই তার চিকিৎসা হবে। গোকুলনগর ছাড়ার আগে নন্দীগ্রাম থানায় যায় প্রতিনিধি দল। ওসিকে জানানো হয় অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। ওসির বক্তব্য, কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। প্রতিনিধি দলের দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা করতে হবে। নির্যাতিতার স্বামী গোটা ঘটনায় কার্যত বিস্মিত। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমার কাছে বিজেপির প্রভাবশালীরা ফোন করছে। যেমন করে হোক বিষয়টি তারা মিটমাট করে নিতে চায়। আমি করব না। আত্মসমর্পণ করব না ওই গুণ্ডাবাহিনীর কাছে। শেষ দেখে ছাড়ব। গোটা পরিবারটিকে প্রশাসনের তরফ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।