প্রায় ২ বছর পর জাতীয় কর্মসমিতির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সেরে ফেলল বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিল্লির NDMC কনভেনশন সেন্টারে রবিবার বিকেলে শেষ হল বৈঠক। সমাপ্তি ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দীর্ঘ প্রায় ৫০ মিনিটের ভাষণে আগামী দিনে দলকে( পথনির্দেশিকা দিলেন তিনি। সেবাই মূল মন্ত্র, মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছতে হবে – এসব নীতির বাস্তবায়নে আরও জোর দেওয়ার বার্তা দিলেন দলের সদস্যদের। কিন্তু উল্লেখযোগ্য, গোটা বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রে বাংলা থাকলেও, শেষবেলায় বাংলার কথা একটিবারও উচ্চারিত হল না মোদির বক্তব্যে।২০২২ সালে দেশের পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশ । এছাড়া ভোট হবে গোয়া, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাবে। সেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী রণকৌশল প্রাথমিকভাবে স্থির হয়েছে এই বৈঠকে। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে এ বছরের মধ্যেই দেশের ১০০ কোটির মানুষকে করোনা টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা সম্পূর্ণ হয়েছে। ৫ রাজ্যের প্রচারে এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করতে চায় বিজেপি।এদিন বৈঠকের মাঝে সাংবাদিক সম্মেলনে দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেন, ”করোনা প্রতিরোধে ভারতের টিকাকরণ গোটা বিশ্বে সমাদৃত। অথচ বিরোধীরা প্রশংসার বদলে একে হেয় করে দেখছেন, এ নিয়ে নানা অপপ্রচার করছেন। যে মোটেই কাম্য নয়। আমরা সঠিক তথ্য তুলে ধরে মানুষের কাছে প্রচার করব।” পাঞ্জাবের ভোটকে সামনে রেখে কৃষক আন্দোলন সামলাতে তিন নয়া কৃষি আইন নিয়ে জোরদার প্রচারে ঝাঁপাতে চায় কেন্দ্রের শাসনাধীন দল। এছাড়া CAA চালু, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়েও প্রচার চলবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে।জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের শেষদিন উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সমাপ্তি ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। প্রায় ৫০ মিনিট ধরে বক্তব্য পেশ করেন তিনি। করোনাকালে কীভাবে দেশের সেবায় সরকার নিজেকে যুক্ত করেছে, তা উল্লেখ করেন মোদি। তাঁর বার্তা, এই পথেই এগিয়ে যেতে হবে। মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ মিনিটের ভাষণে কোথাও বাংলার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক পরিস্থিতি, যেখানে তৃণমূলকে চাপে ফেলতে রাজনৈতিক হিংসা ইস্যুকেই হাতিয়ার করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাবড় বিজেপি নেতারা, সেখানে স্বয়ং মোদি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করেই খানিকটা হতাশ বাংলার বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা। যদিও আশ্বাসের বাণীই শোনালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ৷ তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি বঙ্গবাসীর আস্থা রয়েছে ৷ গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে ঠিক হবে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের রণকৌশলও ৷ বাংলায় সংগঠনকে আরও মজবুত করার দিকেই মনোযোগী নাড্ডা-শাহরা ৷ ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যে বুথস্তরের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন নাড্ডা ৷ তাঁর কথায়, “বুথস্তরে প্রত্যেক বুথের মানুষের মন কি বাত শুনতে হবে ৷” পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিটি নির্বাচনেই বিজেপির ভোটের শেয়ার বেড়েছে বলে দাবি করেন নাড্ডা ৷ স্বাস্থ্য ও কৃষিক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রকল্পগুলিকে এর জন্য কৃতিত্ব দেন তিনি ৷ এদিনের বৈঠকে মোদি ও নাড্ডা ছাড়াও রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ ১২৪ জন জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য ৷ বহু মন্ত্রী ও সদস্য ভার্চুয়ালিও বৈঠকে যোগ দেন ৷ বৈঠকে মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান মহামারির সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ৷ বলেন, “মহামারির সঙ্গেই এসেছে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং ক্ষুধা ৷ তবে সঠিক সময়ে কঠিন সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷” দেশে ১০০ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য এদিন প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানান বিজেপি নেতারা ৷