কলকাতা

১৫ দিন টানা জেরার পর অবশেষে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার ডঃ সন্দীপ ঘোষ

অবশেষে গ্রেপ্তার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। টানা ১৫ দিন জেরার পর সোমবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। জানা গিয়েছে, তরুণী চিকিৎসককে খুন বা ধর্ষণের মামলা নয়। আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ধৃত সন্দীপ ঘোষ। তার বিরুদ্ধে আইপিসি ৪২০ (চিটিং) এবং ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারা দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল থেকেই টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে। এর পরই আচমকা সন্দীপ ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সিবিআইয়ের অ্যান্টি করাপশন ব্রাঞ্চের কর্তারা। জল্পনা শেষে  নিজাম প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানেই গ্রেপ্তার করা হয় সন্দীপকে। এর পাশাপাশি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবৈধ পার্কিং-এর সহ একাধিক অভিযোগে। এদিকে, সন্দীপ ঘোষ গ্রেপ্তার হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের কথায়, সন্দীপ ঘোষের গ্রেপ্তারি নৈতিক জয়। ইতিমধ্যেই তাঁকে একাধিকবার তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। দফায় দফায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এমনকি তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি চালায় সিবিআই। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাঁর মোবাইল ফোন। পাশাপাশি, আদালতের সম্মতিতে তাঁর পলিগ্রাফ টেস্টও করা হয়েছে। এই আবহে হাসপাতালের বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ম বর্হিভূতভাবে বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে সন্দীপের বিরুদ্ধে।সূত্রে খবর, হাসপাতালের বর্জ্য সংরক্ষণ ও নষ্ট সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি, আর জি করের বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়েও তাঁর কাছ থেকে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে বলে খবর। প্রসঙ্গত, সন্দীপকে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ। বাতিল করা হয়েছে তার সদস্যপদও। অভিযোগ, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময়েও আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষের মধ্যে সংবেদনশীলতার অভাব ছিল। সূত্রের খবর, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পরই স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে সন্দীপকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় আইএমএ।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষের গ্রেফতারির পরে তৃণমূল কংগ্রেসের তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, ‘সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার। দারুণ খবর। শুধু মাথায় রাখবেন দুটো জিনিস। প্রথমত, খুন এবং ধর্ষণের মামলায় সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতার হননি। তিনি গ্রেফতার হয়েছেন দুর্নীতির অভিযোগে।’  সেইসঙ্গে দেবাংশু বলেন, ‘উনি যেই কেসে গ্রেফতার হয়েছেন, যেই কেসে এফআইআর দায়ের করেছিল রাজ্য সরকার। বাকি রইল সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারি, আমি ভীষণ খুশি। কিন্তু শেষ প্রশ্ন যেটা এখন জীবিত, এখনও প্রাসঙ্গিক; খুনের মামলায় সঞ্জয় ছাড়া আর কেউ কবে গ্রেফতার হবে?’ সন্দীপ গ্রেপ্তার হতেই প্রতিক্রিয়ায় কুণাল ঘোষ বলেন, ‘তদন্ত CBI করছে। সম্ভবত দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। এ বিষয়টা সন্দীপ বা তাঁর আইনজীবীরা বলতে পারবেন। দলের কোনও বক্তব্য নেই। কিছু অভিযোগ অনেক আগেই শোনা গিয়েছিল। তখন পদক্ষেপ নিলে এখনকার অস্বস্তি এড়াতে পারত স্বাস্থ্যভবন।’ অন্যদিকে, দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ গ্রেপ্তার হতে অনেকটাই স্বস্তি দেখছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘এই গ্রেপ্তারি বহু কাঙ্খিত। আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম, খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হবেন কিনা জানি না, তবে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হবেন। সেটাই হয়েছে। যাই হোক, নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো। সারা বাংলার মানুষ এটা চাইছিল।’ বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘এতদিন গ্রেপ্তার হচ্ছিলেন না কেন, সেটাই আশ্চর্য। এই দুর্নীতির সঙ্গে আরও কারা যুক্ত, এর মাথা কে আছে, সেটাও খুঁজে বের করা দরকার বলে আমি মনে করি। সন্দীপ ঘোষকে এতদিন কারা প্রশয় দিয়ে রেখেছিল, দুর্নীতির ফাইল কেন চাপা পড়েছিল, সেই প্রশ্নগুলো থাকবে।’