চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর জামিনের আবেদন মঞ্জুর হল না আদালতে। ২ জানুয়ারির শুনানিতে ফের জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে গেল চট্টগ্রাম আদালতে। অর্থাৎ ফের জেলেই থাকতে হবে ইসকনের সন্ন্যাসীকে। ২৫ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। একমাসেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচার প্রক্রিয়ায় জেলবন্দি চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভু। আজ, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালতে অনুষ্ঠিত হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিনের শুনানি। চিন্ময় প্রভুর থেকে ওকালতনামা সংগ্রহ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট ও চট্টগ্রাম আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ায় স্থানীয় আইনজীবীর পরামর্শর প্রয়োজন নেই বলে সাফ জানিয়েছিলেন অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য। এদিন চট্টগ্রাম আদালতের তরফে অবশ্য জানানো হয়, সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগের যাবজ্জীবনের সাজার বিধান রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী জানান, আজকের শুনানির নাকি শান্তিপূর্ণ ভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, আজও আদালতে বিশৃঙ্খলা ছিল। এদিকে আজ আদালতের তরফ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যে মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভু গ্রেফতার হয়েছেন, তাতে যাবজ্জীবনের সাজা হয়। উল্লেখ্য, আজ চট্টগ্রামের আদালতে জামিনের শুনানিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবীর একটি দল সওয়াল করেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে। এর আগের দিন রবীন্দ্র ঘোষ চট্টগ্রামে গিয়ে চিন্ময় প্রভুর হয়ে সওয়াল করার চেষ্টা করলেও হেনস্থার শিকার হয়েছিল। সেই জায়গায় আজ অপূর্বকুমার ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এই ১১ জন আইনজীবী গিয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর হয়ে সওয়াল করতে। এর আগে চট্টগ্রাম বারের ৬০ জন হিন্দু আইনজীবীর বিরুদ্ধে সাইফুল হত্যার মামলায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। অনেককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল। তবে এর মধ্যে অনেকেই চট্টগ্রাম আদালতে স্বাভাবিক ভাবেই প্র্যাক্টিস করছেন। তবে সাহস করে কেউ আর চিন্ময় প্রভুর হয়ে মামলা লড়তে সম্মত হননি। অভিযোগ, এই আইনজীবীদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। যদিও বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। সেই খুনের ঘটনায় অন্তত ১০ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে কোনও আইনজীবী যাতে মামলা না লড়েন, তার জন্যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এদিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত চন্দন দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চন্দন দাসই নাকি কিরিচ হাতে আইনজীবীকে কুপিয়েছিলেন। সেই সময় তার পরনে ছিল কমলা রঙের গেঞ্জি আর কালো প্যান্ট। কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেল স্টেশনের কাছ থেকে চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ দাবি করে, ঘটনার দিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রবিন। বাকি আরও অনেকে সাইফুলকে মারতে থাকেন। পুলিশ দাবি করছে, তারা নাকি খুনের ভিডিয়ো হাতে পেয়েছে। সেই ভিডিয়ো ফুটেজ দেশে শনাক্ত করা হয়েছে ধৃতদের। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন সেই আইনজীবীকে মারছে। এর মধ্যে দু’জন হেলমেট পরে থাকা ব্যক্তি কুপিয়েছে সাইফুলকে।