বিনিয়োগের গন্তব্য হোক বাংলা। এই মন্ত্র নিয়েই বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করেছে রাজ্য সরকার। একেবারে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে সেই সম্মেলন পরিচালনা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের সামনে রাজ্যের শিল্পবান্ধব পরিবেশ তুলে ধরার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধেই। বাংলায় শিল্প বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে সুনিপুণভাবে তুলে ধরলেন তিনি। জানালেন, বাংলার অগ্রগতি ৮টি স্তম্ভের উপর নির্ভরশীল। বিশ্ব দরবারে বাংলাকে শ্রেষ্ঠ আসনে পৌঁছে দিতে নিরন্তর কাজ করছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের উন্নতির জন্য মূলত ৮টি বিষয়ে নজর দিয়েছে রাজ্য সরকার। গোটা বক্তব্যে সেই আটটি স্তম্ভের উল্লেখের পাশাপাশি প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ করছে, তাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন ‘আপনারা বিনিয়োগ করুন। আমার সরকার আপনাদের সবরকম সহযোগিতা করবে’। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে শিল্পপতিদের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আমাদের মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু আপনি যখন বাংলায় থাকবেন, জানবেন আপনি আমাদের পরিবারের অংশ’। করোনা জেরে বন্ধ ছিল গত ২ বছর। ২০১৯-র পর ফের এবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। আজ, বুধবার থেকে নিউটাউনের কনভেনশন সেন্টারে শুরু হল এই সম্মেলন। চলবে ২ দিন। বিশ্বের ৪২ টি থেকে দেশ থেকে প্রতিনিধিরা এসেছেন। সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২ বছর পর বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হচ্ছে। গত বছরগুলিতে ১২ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। আশা করি, এবারে সম্মেলনও সফল হবে’। কেন বিনিয়োগ করবেন এ রাজ্যে? শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্বমানের পরিকাঠামো তৈরি করেছি। নারী ক্ষমতায়ণে কাজ করছে বাংলা। সামাজিক
সুরক্ষায় বাংলা দেশের সেরা’। সঙ্গে যোগ করেন, ‘রাজ্যে বনধ হয় না, কর্মদিবস নষ্ট হয় না। আমরা পুরোপুরি কাজের দিন দিতে পেরেছি। জিডিপি বেড়েছে ৩.৫ গুন। আমাদের রাজস্ব আয় বেড়েছে ৪ গুন’। আটটি স্তম্ভ কী কী? তা ব্যাখ্যা করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। আটটি স্তম্ভ হল, পরিকাঠামো তৈরি, পরিকাঠামোর প্রসার, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস, ডিজিটালাইজেশন, কর্মদিবস নষ্ট না করা। পরিকাঠামো তৈরির উপরে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যজুড়ে সার্বিক পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। একদিকে তৈরি হয়েছে তাজপুর বন্দর। অন্যদিকে রয়েছে ডানকুনি থেকে অমৃতসর পর্যন্ত তৈরি ইস্টার্ন ফ্রেট করিডোর। জঙ্গলমহলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে শিল্প পার্ক ‘জঙ্গল সুন্দরী’। ২০২৩ সালের মধ্যে জাতীয় গ্যাস পাইপ লাইনের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাও। সিলিকন ভ্যালিতে তৈরি হচ্ছে অনুসারী শিল্পও। রাজ্যে এই পদক্ষেপগুলিই শিল্পক্ষেত্রে পরিকাঠামো আরও শক্ত করছে।আর এক স্তম্ভ শিক্ষার উপরে জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। কন্যাশ্রীর মতো একাধিক প্রকল্প শিক্ষার উন্নয়নে সাহায্য করছে। তৃতীয় স্তম্ভ সামাজিক সুরক্ষা। সমাজের পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়, মহিলা-সহ বহু মানুষের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বহু প্রকল্প এনেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি, পরিকাঠামোর প্রসারেও জোর দিচ্ছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে শিল্প-বাণিজ্যে বিনিয়োগ আরও সহজ করতে কর কাঠামো-সহ একাধিক ব্যবস্থাকে সরল করা হয়েছে। সিঙ্গল উইন্ডো ব্যবস্থা চালু করেছে সরকার। চালু হয়েছে ডিজিটালাইজেশনও। শেষে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, রাজ্যে একটা কর্মদিবসও যেন নষ্ট না হয়। রাজ্যে হরতাল হয় না। তাই বিনিয়োগের গন্তব্য হোক বাংলা। স্রেফ শিল্পপতিদেরই নয়, এদিন বক্তৃতার শেষ লগ্নে রাজ্যপালকে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে হাতজোড় করে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে সব রকমের সাহায্য চাই। আমি রাজ্যপালকে অনুরোধ করব, আপনি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলুন। বিভিন্ন এজেন্সি দিয়ে যেন শিল্পপতিদের হয়রান না করা হয়’।