লোকসভা ভোটে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট বা আসনরফা যে হচ্ছে না, বুধবার তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩০০ আসনে লড়ে বাকিগুলি মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক আঞ্চলিক দলগুলির জন্য ছাড়ুক কংগ্রেস – তাঁর দেওয়া এই ফর্মুলা অগ্রাহ্য করায় তিনি যে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, এদিনও তাও জানিয়ে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘আমি তো কংগ্রেসকে বলেছিলাম, ৩০০ আসনে লড়তে। বাকিটা সবাই মিলে লড়তাম! কিন্তু তা ওরা মানেনি।’ একইসঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোর সাফ বার্তা, ‘তবে আমরা ইন্ডিয়া জোটে আছি। শুধু লায় কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।’ ক্ষুব্ধ মমতার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘আমরা আঞ্চলিক দলগুলো.. ভোটের পরেই জোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’ মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র আসন রফা এবং বাছাই করা কয়েকজন নেতার আলপটকা মন্তব্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে রীতিমতো ক্ষুব্ধ, তা আর গোপন থাকছে না। মঙ্গলবার দলের বীরভূম জেলার সাংগঠনিক বৈঠকেও তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, বাংলায় বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের সাহায্য তাঁর প্রয়োজন নেই। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা পর্বে গুয়াহাটিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সেই ক্ষোভে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তার প্রমাণ মিলেছে এদিন। কারণ, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে আসন রফার ব্যাপারে রাহুল আশা প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মমতা বার্তা দিয়েছেন একলা চলার। আর তাই তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। আজ, বৃহস্পতিবারই ন্যায় যাত্রা নিয়ে বাংলায় ঢুকছেন রাহুল গান্ধী। তার আগে এআইসিসির মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘মমতাজি ছাড়া ইন্ডিয়া জোট কল্পনাই করা যায় না। জোটের অন্যতম স্তম্ভ তৃণমূল। আমাদের মধ্যে আসন রফার আলোচনা চলছে। আশা করি সব সমস্যা মিটে যাবে।’ দিল্লির দরবারের খবর, মমতা জোট থেকে সরে গেলে তার প্রভাব দেশজুড়ে পড়বে। আর তা কংগ্রেস হাইকমান্ড কোনও মূল্যেই চায় না। তাই মমতাকে ‘সন্তুষ্ট’ করতে শেষ পর্যন্ত মল্লিকার্জুন খাড়্গে এবং স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী আসরে নামতে পারেন। একইভাবে অবশ্য তৃণমূল সুপ্রিমোকে তুষ্ট করতে জোটের অন্য শরিক এনসসিপি, শিবসেনা (ইউটি), আপ, আরজেডির মতো দলের নেতা-নেত্রীরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিবসেনার (ইউটি) নেতা আদিত্য থ্যাকারে বলেছেন, ‘সিংহীর মতো লড়াই করেন মমতাজি। বাংলা তথা ইন্ডিয়া জোটের জন্য যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলের কথায়, ‘উনি (মমতা) আমাদের দিদি। আমরা সবাই তাঁকে ভালোবাসি, সম্মান করি। উনি থাকলে, জোটের কোনও ক্ষতি হবে না।’ দিল্লির আপ মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজের কথায়, ‘আসন রফাটা চ্যালেঞ্জিং। তবে মমতাজি-রাহুলজি দু’জনেই জোট নিয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস।’ প্রশ্ন হল, এতেও কি চিঁড়ে ভিজবে? সন্দিহান রাজনৈতিক মহল। কারণ রাহুল গান্ধীর নাম না করে মমতা এদিন বলেছেন, ‘একবারও কি জানিয়েছেন, দিদি, আমি আপনার রাজ্যে যাচ্ছি? বাংলা নিয়ে ওদের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।’