স্কুলের চাকরি থাকা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে গৃহশিক্ষকতা করার অভিযোগ উঠছে অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ৷ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে গৃহশিক্ষকদের সংগঠন ৷ এবার এ নিয়ে কঠোর বার্তা দিল রাজ্যের শিক্ষা দফতরও ৷ জারি করা হল নয়া নির্দেশিকা ৷ সম্প্রতি, গৃহশিক্ষকদের একটি সংগঠন স্কুল শিক্ষা দফতরে প্রমাণ সহ ৬১জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে অভিযোগ জানায় বলে খবর। সেই অভিযোগের পরপরই এবার রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের এই বিজ্ঞপ্তি। সোমবার রাত থেকেই সেই নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে। ‘রাইট অব চিল্ড্রেন টু ফ্রি এন্ড কম্পালসারি এডুকেশন অ্যাক্ট ২০০৯-এর আওতায় এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ২৭ জুনের সেই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, সরকারি স্কুলে কর্মরত যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিয়ম ভেঙে প্রাইভেট টিউশন দেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ এমনকী, দোষ প্রমাণে শাস্তির মুখেও পড়তে হতে পারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৷ নির্দেশিকা অনুযায়ী, স্কুল শিক্ষা দফতরের এই নিয়ম অমান্য করলে সেই শিক্ষক বা শিক্ষিকার চাকরিও পর্যন্ত চলে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, আটকে যেতে পারে ওই ব্যক্তির পেনশনও। এই নির্দেশ যাতে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হয় তার জন্য রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে ওই সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে নোটিশও পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। রাজ্য সরকারের এমন পদক্ষেপে খুশি গৃহশিক্ষকরা ৷ শিক্ষা দফতরের নয়া নির্দেশিকা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সভাপতি হীরালাল মণ্ডল বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই এই অনিয়মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি ৷ শিক্ষা দফতর থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি ৷ করোনাকালে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা টানা প্রায় দু’বছর কার্যত বাড়িতে বসেই বেতন পেয়েছেন ৷ পাশাপাশি, তাঁদের অনেকেই অনলাইনে প্রাইভেট টিউশনও চালিয়ে গিয়েছেন ৷ কিন্তু, আমাদের ক্ষেত্রে সেই উপায় ছিল না ৷ কারণ, আমরা যেসব বাড়িতে কোচিং চালাই, সেখানে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হত না ৷ উপরন্তু, স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ থাকায় প্রাইভেটে পড়ার উৎসাহও কমে গিয়েছিল ৷ ফলে আমরা খুব বেশি হলে ১০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পেয়েছিলাম ৷ তাদের নিয়েই অনলাইন ক্লাস করিয়েছি ৷” এই অবস্থায় সরকারি নির্দেশিকা জারি হলেও স্কুলগুলি আদৌ অভিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কি না, তা নিয়ে সন্দীহান গৃহশিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা ৷ তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করবেন ৷ কিন্তু, তারপরও যদি অনিয়ম বন্ধ না হয়, তাহলে সরকারের নয়া নির্দেশিকাকে হাতিয়ার করে নিয়মভঙ্গকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও জোরাল করবেন তাঁরা ৷ প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে গিয়ে নিজেদের প্রতিবাদ জানাবেন ৷