মেরুদণ্ডে বিঁধেছে বুলেট। আজও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না নিগমপ্রিয় চক্রবর্তী। কাশ্মীরের এক জঙ্গি হামলা কেড়ে নিয়েছে নদীয়ার নবদ্বীপের বাসিন্দা এই সিআরপিএফ জওয়ানের জীবনের ছন্দ। জঙ্গিদের অবশ্য ছেড়ে দেননি তিনি। বুলেটবিদ্ধ অবস্থাতেও নিকেশ করেন দু’জনকে। এত কিছুর পরেও মেলেনি প্রাপ্য সম্মান। অধরা কেন্দ্রীয় সাহায্য। তাই এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন তিনি। ঘটনাটি ২০১৬ সালের ২৫ জুনের। পুলওয়ামা জেলার লেথপোরা ক্যাম্প থেকে অনুশীলন সেরে শ্রীনগরে ফিরছিল সিআরপিএফের ১৬১ নম্বর ব্যাটালিয়ন। সামনে তিনটি, পিছনে একটি গাড়ি। মাঝের চতুর্থ বাসে জওয়ানরা। দরজার পাশে ডানদিকে সিটে ছিলেন নিগমপ্রিয়। পাম্পোরে পৌঁছতেই হামলার মুখে পড়ে কনভয়। শুরু হয় জঙ্গিদের গুলিবৃষ্টি। হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মস্তিষ্কপ্রসূত এই নাশকতায় সেদিন প্রাণ হারান ৮ জওয়ান। জখম হন ১৮ জন। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ছিলেন নিগমপ্রিয়। একটি গুলি বাঁ হাতের কব্জি ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। একটি বুকের বাম দিক দিয়ে ঢুকে পাঁজরার হাড়ে ধাক্কা দিয়ে ফুসফুস ছুঁয়ে নাভির কাছে পৌঁছে যায়। আর পিছন দিক দিয়ে আসা আরেকটা বুলেট গেঁথে যায় মেরুদণ্ডে। ওই অবস্থাতেও লড়াই ছাড়েননি তিনি। বাকি জওয়ানদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। নিজে অবশ্য কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচেন ১১টি অস্ত্রোপচারে। এতকিছুর পরও বঞ্চিত এই বাঙালি জওয়ান। ব্যাটালিয়নের অনেকেই ‘গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ পেলেও শিকে ছেঁড়েনি তাঁর ভাগ্যে। কারণ, নিয়মমাফিক ‘কোর্ট অব এনকোয়ারি’র সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাঁকে ইতিমধ্যেই ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ঘোষণা করেছে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু সিআরপিএফ কর্তৃপক্ষ সেই রিপোর্ট মানতে নারাজ। ফলে যে বিশেষ আর্থিক সুবিধা পাওয়ার কথা, তা মেলেনি। শুধু বেসিক বেতন পান তিনি। এমনকী, দিল্লি এইমসে চিকিৎসা করাতে পর্যন্ত যেতে হয় নিজের খরচেই। তাই শেষপর্যন্ত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন এই জওয়ান। বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে সমস্ত বৃত্তান্ত তুলে ধরেন তাঁর আইনজীবী সুদীপ্ত পান্ডা। এরপরই বিচারপতির নির্দেশ, সিআরপিএফ কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি যাচাই করতে হবে। অক্ষমতার হার নির্ধারণ করে দিতে হবে প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা। নতুন করে কোর্ট অব এনকোয়ারিতে বসার সুযোগও দিতে হবে নিগমপ্রিয়কে। আর যতদিন না শারীরিক অক্ষমতার হার নির্ধারণ হচ্ছে, ততদিন তাঁকে চিকিৎসা সংক্রান্ত যাতায়াত খরচ সহ যাবতীয় প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।