কলকাতা খেলা

নজিরবিহীন পদক্ষেপ, মেসির অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলায় রাজ্য় পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে শো-কজ

লিওনেল মেসির অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার জেরে শো-কজ করা হল রাজ্য় পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে ৷ শো-কজের নোটিশ পাঠানো হয়েছে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমারকেও। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড হয়েছেন আরও এক আইপিএস অফিসার ৷ যুবভারতীর সিইও-কেও দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি কোপ পড়েছে ক্রীড়া দফতরের আধিকারিকদের উপরেও। যুবভারতী কাণ্ডে ক্রীড়া সচিব রাজেশ কুমার সিনহাকেও শো-কজ করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, স্টেডিয়ামে যে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা দেখা গিয়েছিল, তার দায় এড়াতে পারেন না তিনিও। সবমিলিয়ে সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে গত ১৩ ডিসেম্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাজ্য সরকার যে কঠোর অবস্থান নিল, তা প্রশাসনিক ইতিহাসে কার্যত বিরল।​মঙ্গলবার মুখ্যসচিবের দফতর থেকে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, সোমবার জমা পড়া তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই এই কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে প্রশাসনিক মহলে ‘নজিরবিহীন’ বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের আবেগের কথা মাথায় রেখে এবং আন্তর্জাতিক মানের একটি ইভেন্টে রাজ্যের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে সরকার যে বিন্দুমাত্র আপস করতে রাজি নয়, তা এই পদক্ষেপে পরিষ্কার। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ডিজিপি রাজীব কুমারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে ৷ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে জানাতে হবে, ১৩ ডিসেম্বর স্টেডিয়ামে কেন এমন চরম অব্যবস্থাপনা এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটল। পাশাপাশি, বেসরকারি আয়োজক-সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে কেন সঠিক সমন্বয় রাখা হয়নি, যাতে অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়— সেই বিষয়েও কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে রাজ্যের পুলিশ প্রধানের কাছে। একইভাবে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমারকেও শোকজ করে 24 ঘণ্টার মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে কমিশনারেটের ভূমিকা নিয়ে।অন্যদিকে, স্টেডিয়ামের সার্বিক অব্যবস্থাপনার দায় সরাসরি বর্তেছে যুবভারতীর সিইও (CEO) দেবকুমার নন্দের উপর। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা এবং গাফিলতির অভিযোগে তাঁকে অবিলম্বে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তাঁর সার্ভিস বা পরিষেবা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার দিন মাঠের দায়িত্বে থাকা ডিসিপি (DCP) অনীশ সরকারের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ‘রিপোর্টেড নেগ্লিজেন্স’ বা কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ এনে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সাসপেন্ড বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ​সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই ঘটনার তদন্তে রাজ্য সরকার যে চার সদস্যের ‘সিট’ (SIT) গঠন করেছে, তা তৈরি হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের পরামর্শে। যুবভারতী কাণ্ডের জট খুলতে এবং তদন্ত যাতে নিরপেক্ষ ও সঠিক পথে এগোয়, সে কারণেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে খবর। সেই পরামর্শ মেনেই রাজ্যের চারজন দাপুটে আইপিএস অফিসার- পীযূষ পান্ডে, জাভেদ শামিম, সুপ্রতিম সরকার ও মুরলীধরকে নিয়ে এই বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে। এই বিশেষ তদন্তকারী দল গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখবে যে ঠিক কোথায় গলদ ছিল, আয়োজকদের সঙ্গে পুলিশের বোঝাপড়ায় কোথায় ফাঁক ছিল এবং কারা এই ঘটনার জন্য দায়ী। লিওনেল মেসির মতো মহাতারকার উপস্থিতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমন বিশৃঙ্খলা রাজ্যের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে আঘাত হেনেছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সেই কারণেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে একেবারে শীর্ষস্তর থেকে নিচুতলা পর্যন্ত কাউকেই রেয়াত না করে কঠোর বার্তা দিল নবান্ন।