পুজো

ধনতেরাস কী! জেনে নিন পুজো ও কেনাকাটার শুভলগ্ন

দীপাবলির উত্‍সব ধনতেরাস দিয়ে শুরু হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, ধনতেরাস প্রতি বছর কার্তিক কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীতে উদযাপিত হয়। ধনতেরাস হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মানুষেরা মূলত এই দিন শুভ বলে মনে করেন। এই দিন শুভ মনে করা হয় বলে বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো করেন।  আর মাত্র কয়েকটা দিন পরই দীপাবলী। এবারে ১০ নভেম্বর ধনতেরাস। বর্তমানে অবাঙালিদের মধ্যেও এর প্রচলন ছড়িয়ে পড়েছে। দীপাবলীর সময় লক্ষ্মীপুজোর দিন দুই আগে ধনতেরাস হয়। সমুদ্র মন্থনের সময়, ভগবান ধন্বন্তরী পিতলের অমৃত পাত্র নিয়ে আবির্ভূত হন, এই দিনটিকে ধনতেরস হিসাবে পালন করা হয়। ধনতেরস কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে উদযাপিত হয়। এদিন ভগবান কুবের, দেবী লক্ষ্মী এবং আয়ুর্বেদের জনক ভগবান ধন্বন্তরীর পুজো করে সম্পদ ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে। এই দিন থেকে শুরু হচ্ছে দীপাবলির ৫ দিনের উৎসব। এই বছর ধনতেরাস ১০ নভেম্বর ২০২৩। ১৩ – সংখ্যাটিকে অনেকেই আনলাকি বলে থাকেন। ১৩ র সঙ্গে কোথাও রয়েছে দুর্ভাগ্যের যোগ – এমনি বিশ্বাস অনেকের। তবে ধনতেরসের দিনে ১৩ নম্বরটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। জেনে নিন ধনতেরসে কোন কাজগুলি ১৩ বার করা উচিত এবং এতে কী কী উপকার পাওয়া যায়। ধন মানে সমৃদ্ধি আর তেরাস মানে তেরো দিন। ধনতেরাস উৎসব সম্পদ এবং স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত। এই দিনে দেবী লক্ষ্মী ও কুবের দেবের আরাধনা করলে ধন-সম্পদ ও দ্রব্যাদি ১৩ গুণ বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে ভগবান ধন্বন্তরীর পুজো করলে তেরো গুণ স্বাস্থ্য উন্নতি হয় বলে বিশ্বাস। তাই এই দিনে ১৩ নম্বরটিকে শুভ বলে মনে করা হয়।

🔴 ধনতেরসে ১৩সংখ্যার বিশেষ গুরুত্ব

🟢 ১৩ টি দীপ জ্বালান – ধনতেরস থেকে আলোর উৎসব শুরু হয়। এই দিন সন্ধ্যায় ১৩ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে ঘরে এবং উঠোনের বাইরে রাখুন। এই উপাচার দেবী লক্ষ্মীকে তুষ্ট করবে। এতে চাকরি ও ব্যবসায় বাধা দূর হয়। ঘরের নেতিবাচক শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। ইতিবাচক শক্তি গৃহে প্রবেশ করে। 

🟢 পাত্রে ১৩ টি ধনে – কথিত আছে যে ভগবান ধন্বন্তরি তাঁর হাতে একটি পিতলের পাত্র নিয়ে সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন, তাই ধনতেরসের দিন একটি পিতলের পাত্র কেনা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। ধনতেরসের দিন এই নতুন পাত্রে শস্য, ধনে রাখা যায়।  এই নিয়ম মানলে ঘরে খাবার বা অর্থ, কোনও কিছুরই টান পড়ে না। এই দিনে রূপার পাত্র কেনাও শুভ। 

🟢 ১৩ টি মুদ্রা – ধনতেরসে সবাই সাধারণত স্বর্ণ ও রৌপ্যে গহনা বা মুদ্রা কিনে থাকে। এই পরিস্থিতিতে, এই দিনে একটি নতুন রৌপ্য মুদ্রা এবং কিছু পুরানো সাধারণ মুদ্রায় হলুদ ছুঁইয়ে নিন। তারপরে দেবী লক্ষ্মীর চরণে অর্পণ করুন। কথিত আছে, এই উপাচার দেবী লক্ষ্মীকে ঘরে ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর্থিক সংকট ও ঋণ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়।

🟢 ১৩ টি জিনিস দান করুন – ধনতেরসের দিনে খাদ্য, বস্ত্র, প্রদীপ, লোহা, নারকেল, মিষ্টি ইত্যাদি জিনিস দান করা খুবই শুভ। এতে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। কথিত আছে যে ধনতেরসে ১৩ টি জিনিস দান করলে দুর্ভাগ্য কখনই কাছে আসে না।

🟢 এই  মন্ত্র ১৩ বার জপ করুন –  ওম যক্ষে কুবেরায় বৈশ্রবণায় ধন্যা ধান্যাধিপতায় ধন শস্য সমৃদ্ধি মে দেহি দাপে দপে স্বাহা – এটি কুবের দেবের মন্ত্র।  বিশ্বাস করা হয় যে ধনতেরসের দিনে ১৩ বার কুবেরের মন্ত্র জপ করলে প্রচুর সম্পদের অধিকারী হওয়া যায়।  

এদিন সম্পদের দেবতা কুবেরও এ দিন পূজিত হন। কথিত আছে, রাজা হিমার ১৬ বছরের ছেলের এক অভিশাপ ছিল। তার কুষ্টিতে লেখা ছিল, বিয়ের চার দিনের মাথায় সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হবে। তার স্ত্রীও জানত সেই কথা। তাই সেই অভিশপ্ত দিনে সে তার স্বামীকে সে দিন ঘুমোতে দেয়নি। শোয়ার ঘরের বাইরে সে সমস্ত গয়না ও সোনা-রূপার মুদ্রা জড়ো করে রাখে। সেই সঙ্গে সারা ঘরে বাতি জ্বালিয়ে দেয়। স্বামীকে জাগিয়ে রাখতে সে সারারাত তাকে গল্প শোনায়, গান শোনায়। পরের দিন যখন মৃত্যুর দেবতা যম তাদের ঘরের দরজায় আসে, আলো আর গয়নার জৌলুসে তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যায়। রাজপুত্রের শোয়ার ঘর পর্যন্ত তিনি পৌঁছন ঠিকই। কিন্তু সোনার উপর বসে গল্প আর গান শুনেই তাঁর সময় কেটে যায়। সকালে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই চলে যান তিনি। রাজপুত্রের প্রাণ বেঁচে যায়। পরদিন সেই আনন্দে ধনতেরাস পালন শুরু হয়।ধনতেরাসের পরের দিন নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী।

🔴 ধনতেরাস পুজোর সময়

🟢 ১০ নভেম্বর শুক্রবার ধনতেরাস পুজো

🟢 কার্তিক মাসের ত্রয়োদশী তিথি ১০ নভেম্বর বেলা ১২ টা ৩৫ মিনিটে শুরু হবে, যা ১১ নভেম্বর দুপুর ১ টা ৫৭ মিনিটে শেষ হবে। এমন পরিস্থিতিতে ১০ নভেম্বর পালিত হবে ধনতেরাস উৎসব। এই দিন প্রদোষ কাল হবে বিকেল ৫ টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৮ টা ০৮ মিনিট পর্যন্ত। এই সময় দেবী লক্ষ্মী, কুবের দেব এবং ভগবান ধন্বন্তরীর পুজো করা শুভ হবে।

🟢 প্রদোষ কাল – ১০ নভেম্বর বিকেল ০৫:৩০ থেকে রাত ০৮:০৮ পর্যন্ত।

🟢 বৃষভ কাল – ১০ নভেম্বর বিকেল ০৫:৪৭ থেকে সন্ধ্যে ০৭:৪৭ পর্যন্ত।

🔴 দীপ দান কখন করা শুভ হবে –

এবারে ধনতেরাস উৎসব দুই দিন পালিত হওয়ায় কোন দিনটি প্রদীপ দান করা শুভ হবে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, ১০ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার সন্ধ্যায় দীপ দান করা শুভ হবে। ধনতেরাস পাঁচ দিনের আলোর উৎসবের সূচনা করে। এই দিনটি ধন ত্রয়োদশী এবং আয়ুর্বেদের জনক ভগবান ধন্বন্তরীর আবির্ভাব দিবস। এই দিনে কুবের ও ভগবান ধন্বন্তরীর পুজোর পাশাপাশি বাসনপত্র কেনার প্রথা রয়েছে। অকাল মৃত্যুর ভয় থেকে মুক্তি পেতে এই দিন সন্ধ্যায় প্রদীপ দানও করা হয়।

🔴 কেনাকাটার শুভলগ্ন

অভিজিৎ মুহুর্ত- ১০ নভেম্বর ধনতেরাসের সকাল ১১.৪৩ থেকে  বেলা ১২:২৬ পর্যন্ত।

বর্তমানে ধনতেরাস কেউ কিনছেন সোনা, তো কেউ কিনছেন রুপোর মূর্তি বা ছোট কয়েন। ও এই বিষয়ে বলে রাখি, অনেকেই মনে করেন এই দিনে সোনা-রুপা-পিতল কিনলে নাকি আর্থিক সঙ্গতি ক্রমশই বাড়তে থাকে। বেশিরভাগ জায়গায় এই দিনে লক্ষ্মী গণেশ এবং কুবেরের পুজো করা হয়। সঙ্গেই থাকে রুপোর সিঁদুর কৌটো এবং সুখের ঝাঁপি অবশ্যই থাকে। পরিবারের সুখ সমৃদ্ধি বজায় রাখার সাপেক্ষেই কিন্তু এইদিন বেশ কিছু সমৃদ্ধির চাবি অনেকেই কিনে থাকেন।

🔴 ধনতেরাসে কোন কোন জিনিস কিনতে নেই –

১) কালো রঙের কোনও জিনিস এইদিন বাড়িতে একেবারেই নিয়ে আসবেন না। এমনকি কালো প্লাস্টিক পর্যন্ত নয়। কালো রং এইদিনে একেবারেই চলে না।

২) কাচ অনেকের কাছেই শুভ বলে বিবেচিত হতে পারে, তবে নতুন কোনও কাচের জিনিস একেবারেই কিনবেন না। প্লাস্টার অফ প্যারিস কিংবা অন্য কোনও পদার্থের জিনিস কিনতে পারেন।

৩) ছুরি, কাঁচি, বটি অথবা কোনও ধারালো অস্ত্র এইদিন না কেনাই ভাল কারণ সমস্যা হতে পারে।

৪) তেল কিংবা ঘি। আগে থেকেই তেল কিংবা ঘি বাড়িতে মজুত করে রাখুন। কারণ সামনেই দীপাবলি এবং ভূত চতুর্দশী উপলক্ষে তেল লাগবেই। আগে থেকে প্রস্তুতি নিন।

৫) জেনে বুঝে তবেই সোনা কিনুন। নকল সোনা কিন্তু এদিনে একেবারেই কিনবেন না। পেটা সোনার জিনিস, অন্যান্য ধাতু বর্জিত হলে তবেই কিনুন।

৬) অ্যালকোহল কিংবা মাদক জাতীয় পানীয়। উৎসবে অনুষ্ঠানে এই পিপাসা সকলের থাকে। কিন্তু ধনতেরাস উপলক্ষে একেবারেই এগুলি কিনবেন না কিংবা ঘরে নিয়েও আসবেন না।

৭) বিশেষ করে ধনতেরাস এই দিনে কারওর জন্য কোনও উপহার কিনবেন না। এমনকি তাঁকে দেবেনও না সেই উপহার। সম্পর্ক একেবারেই উল্টে যাবে।

৮) খালি কোনও পাত্র অর্থাৎ কুঁজো কিংবা কোনও হাঁড়ি এগুলো একেবারেই এই দিনে কিনবেন না। এতে সুখের চাবি হারিয়ে যেতে পারে।

৯) লোহা দিয়ে তৈরি জিনিস কিনবেন না।

১০) তুলো সে সাধারণ তুলো হোক কিংবা শিমুল এই দিয়ে তৈরি জিনিস – বালিশ, তোষক এগুলি একেবারেই নতুন করে এইদিনে কিনবেন না।

১১) ঝাঁটাও কিনবেন না।