দেশ

নির্বাচন হলেও ভারতে স্বৈরতন্ত্র বহাল: রিপোর্ট

ভারতের সংবিধানেই দেশকে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আজকের ভারত সম্বন্ধে এই বিশেষণগুলোর একটাও ব্যবহার করা মুশকিল। অন্তত সুইডিশ ইনস্টিটিউট ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসি (ভি-ডেম)-র সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ভারত ‘ইলেক্টরাল অটোক্রেসি’ বা ‘নির্বাচন সত্ত্বেও স্বৈরতন্ত্র’ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। অর্থাৎ, দেশে নির্বাচন হলেও গণতন্ত্রের মূল উপাদান যেমন- ব্যক্তি স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নেই অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভি-ডেমের ডেমোক্রেসি রিপোর্ট ২০২৫ অনুসারে, বিশ্বের ১৭৯টি রাষ্ট্রের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেসি ইনডেক্সে (উদারনৈতিক গণতন্ত্র সূচক) ভারত নেমে এসেছে ১০০ নম্বরে। যা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং নির্বাচনের নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে দুর্বলতারই পরিচায়ক বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। শুধু তাই নয়, রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইলেক্টরাল ডেমোক্রেসি ইনডেক্সেও (নির্বাচনী গণতন্ত্র সূচক) ভারত ১০৫ তম স্থানে নেমেছে। এটা নির্বাচনের স্বচ্ছতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংগঠনের অধিকারের মতো বিষয়ে পিছিয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া ভারতীয় সমাজে ক্ষমতা ও সম্পদের সমবণ্টন নিয়ে বড় সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছে ভি-ডেম। এক্ষেত্রে তাদের ইগালিটারিয়ান কম্পোনেন্ট ইনডেক্স বা সমতার সূচকে ভারতের স্থান হয়েছে ১৩৪ নম্বরে। রিপোর্টের বেশিরভাগ সূচকে ভারতের অবনতি হলেও একমাত্র এই সমতা সূচক এবং জনগণের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ সূচকে দেশ স্থিতিশীল রয়েছে। ভারতে গণতন্ত্রের অবনতির নেপথ্যে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে ভি-ডেমের রিপোর্টে। প্রথমত, মতপ্রকাশ, সংবাদমাধ্যম, এবং সুশীল সমাজের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনের মতো স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনে কোপ পড়েছে। তৃতীয়ত, নির্বাচনের স্বচ্ছতা-নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাও গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। এর সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক বিভাজন, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও বিরোধীদের উপর দমন-পীড়ন বৃদ্ধির বিষয়টিও রয়েছে। ভারতের এই অবনমনের প্রেক্ষিতেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ব ইউরোপ এবং এশিয়ার বহু দেশেই স্বৈরাচারের প্রবণতা বাড়ছে। ভারতের ঠিক উপরেই জায়গা হয়েছে পূর্ব ইউরোপের দুই দেশ হাঙ্গেরি ও সার্বিয়ার।