কলকাতা

জেলায় জেলায় তৃণমূলের চেয়ারম্যান ও সভাপতি পদে রদবদল

জেলার শীর্ষ নেতৃত্বে রদবদল করল তৃণমূল ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অপসারণের পর এবার দলের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ৷ সেখানে সবচেয়ে বড় রদবদল হুগলি-শ্রীরামপুরের সাংগঠনিক জেলায় । নতুন সভাপতি হলেন অরিন্দম গুঁইন ৷ রাজ্যের সমস্ত জেলার সভাপতি ও চেয়ারম্যান ঠিক করা হয়েছে নতুন ভাবে। উত্তর ২৪ পরগনা এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলা সভাপতির পদে আপাতত কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। অন্যদিকে, উত্তর কলকাতার জেলা চেয়ারম্যান পদ ফাঁকা।জানা গিয়েছে, সংগঠনে বিশেষ জোর দিতেই রদবদল করা হয়েছে। যেমন সরানো হয়েছে কাওকে কাওকে তেমনই এই পদে তুলে আনা হয়েছে অনেক মুখ। অন্যদিকে, অজিত মাইতি র‍য়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঘাটালের সার্বিক কো অর্ডিনেটর।বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী সাংসদ কাকলী ঘোষ দস্তিদার। কলকাতার দক্ষিণ কলকাতার জেলা চেয়ারম্যান করা হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী মনীশ গুপ্তকে। অন্যদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মণ্ড হারবার- যাদবপুরের জেলা সভাপতির পদে বসেছেন রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী। হাওড়ার হাওড়া আর্বানের জেলা চেয়ারম্যান পদে বসেছেন প্রাক্তন বাম নেতা লগন দেও সিং। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের জেলা সভাপতি মন্ত্রী সৌমেন কুমার মহাপাত্র। মালদার জেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানে জেলা সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। পশ্চিম বর্ধমানে জেলা চেয়ারম্যান প্রাক্তন মন্ত্রী বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে এদিনের সাংগঠনিক রদবদলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কোচবিহার, বনগাঁ ও হুগলি-শ্রীরামপুরের সাংগঠনিক রদবদল ৷ পাশাপাশি দমদম, বারাসত, তমলুক এবং দমদম-ব্যারাকপুরের সাংগঠনিক রদবদলও উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ কোচবিহারের তৃণমূল সভাপতি পদ থেকে পার্থপ্রতিম রায়কে সরিয়ে অভিজিৎ দে ভৌমিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে বনগাঁয় তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলকে ঘিরে ৷ গোপাল শেঠকে সরিয়ে সেখানে বিশ্বজিৎ দাসকে সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ এই বিশ্বজিৎ দাসকেই গতমাসে বিজেপি বিধায়ক বলে ঘোষণা করেছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর আজ সেই বিশ্বজিৎ দাসকে বনগাঁ মতো সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করলেন মমতা ৷ প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনের পর পর যেসব বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন বিশ্বজিৎ দাস ৷ তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে অধ্যক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ যে শুনানিতে বিশ্বজিৎ দাসকে অধ্যক্ষ বিজেপি বিধায়ক বলে উল্লেখ করেছিলেন ৷এখানেই শেষ নয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের সব পদ থেকে সরতেই হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠিক জেলার নেতৃত্বেও গুরুত্বপূর্ণ বদল করা হয়েছে ৷ অরিন্দম গুঁইনকে সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, অরিন্দম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ৷ প্রসঙ্গত, এর আগের রদবদলে অভিষেকের তালিকায় অরিন্দম গুঁইনের নাম ছিল ৷ কিন্তু, তৎকালীন তৃণমূল মহাসচিব অভিষেকের তালিকায় থাকা অরিন্দমের নাম বাদ দিয়েছিলেন ৷ তৃণমূল সুপ্রিমোও তাতে সিলমোহর দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, পার্থর অপসারণের পরেই হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠিক জেলার সভাপতি হলেন অরিন্দম ৷ যাতে রাজনৈতিক মহলের মত, ফের একবার তৃণমূলে অভিষেকের নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে ৷ বিশেষ করে, পার্থর নাম দুর্নীতিতে জড়ানোর পর, তৃণমূলের ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ এই তত্ত্ব কার্যত ফিকে হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক হুজহুরা ৷ দমদম-ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলাতেও রদবদল করা হয়েছে ৷ পার্থ ভৌমিককে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ তবে, তাঁর জায়গায় কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা জানানো হয়নি ৷ একইভাবে কলকাতা উত্তরে তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদ থেকে তাপস রায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ সেখানেও পরিবর্ত হিসাবে কাউকে আনেনি তৃণমূল ৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, তাপস রায় এবং পার্থ ভৌমিককে মন্ত্রী করা হতে পারে ৷ সেই কারণেই তাঁদের সভাপতি এবং চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয়েছে ৷ রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন, নতুন তালিকায় গুরুত্ব পেয়েছেন অভিষেক ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নেতারাই ৷