ইস্টবেঙ্গল – ৫ (বোরহা, ক্লেইটন-২, নন্দকুমার-২)
নর্থইস্ট – ০
আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম। কার্লেস কুয়াদ্রাতের কোচিংয়ে সবচেয়ে বড় জয় পেল লাল হলুদ। চলতি আইএসএলে দ্বিতীয় জয় তুলে নিল ইস্টবেঙ্গল। সোমবার যুবভারতীতে নর্থ ইস্টকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিল লাল হলুদ। জোড়া গোল ক্লেইটন সিলভা এবং নন্দকুমারের। বাকি গোলটি করেন বোরহা হেরেরা। হায়দরাবাদের পর দ্বিতীয় জয়। এখনও পর্যন্ত মরশুমের সেরা ফুটবল কুয়াদ্রাতের দলের। দু”মাস পরে আইএসএলে জিতল কলকাতার প্রধান। তাও আবার পাঁচ গোলে। জোড়া জয়ই ঘরের মাঠে। আগের দিন চেন্নাইনের বিরুদ্ধে এগিয়েও ড্র করে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। এদিন সেই ভুল করেনি। প্রথমার্ধে দু”গোলে এগিয়ে থাকার পর বিরতির পর আরও তিন গোল। দীর্ঘদিন পর দাপুটে এবং একপেশে ফুটবল খেলল ইস্টবেঙ্গল। যুবভারতীতে জ্বলল মশাল। স্টেডিয়াম গর্জে উঠল বোরহা, ক্লেইটন ধ্বনিতে। সপ্তাহের প্রথম দিন হলেও সমর্থকদের হাজিরা ভালই ছিল। দীর্ঘদিন পর প্রিয় ক্লাবের নাম জপার সুযোগ পেল লাল হলুদ সমর্থকরা। গোটা ৯০ মিনিট সুন্দর ফুটবল। বিশেষ করে দুই উইংয়ে মহেশ এবং নন্দকুমারের কম্বিনেশন অনবদ্য। সঙ্গে ক্লেইটনের নিখুঁত প্লেসিং। শেষ কবে ইস্টবেঙ্গলকে এমন দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলতে দেখা গিয়েছে মনে করা সম্ভব নয়। স্বস্তির রাতে কুয়াদ্রাতের চিন্তা বোরহার চোট। মাথায় আঘাত পেয়ে ম্যাচের ৬০ মিনিটে মাঠ ছাড়েন স্প্যানিয়ার্ড। এদিন দলে একটাই পরিবর্তন করেন লাল হলুদ কোচ। পার্দোর পরিবর্তে প্রথম একাদশে ফেরেন বোরহা। কোচের সিদ্ধান্তের মান রাখেন। ইস্টবেঙ্গলের পাঁচ গোলের প্রথমটি আসে তাঁর পা থেকেই। প্রথমার্ধে জোড়া গোল খেলেও ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায়নি নর্থ ইস্ট। প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে পুরো আত্মসমর্পণ। প্রথম থেকেই পজেশনাল পাসিং ফুটবল খেলার চেষ্টা করে লাল হলুদ। ম্যাচের ১৪ মিনিটে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। বিষ্ণুর থ্রু থেকে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে গোল করেন বোরহা হেরেরা। এক গোলে লিড নেওয়ার পরও কপালে ভাঁজ ছিল কুয়াদ্রাতের। পুরনো রোগের আতঙ্ক তাঁকে তাড়া করছিল। কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ম্যাচের ২৪ মিনিটে ২-০ করে ইস্টবেঙ্গল। মন্দারের ক্রস থেকে নিখুঁত হেডে বল জালে রাখেন ক্লেইটন সিলভা। ব্যবধান কমানোর সুযোগ ছিল হাইল্যান্ডারদের। ৩৫ মিনিটে প্রথম সুযোগ নর্থ ইস্টের। ইবসনের মাইনাসে পা ছোঁয়াতে পারেনি নেস্টর। সিটার মিস। বিরতির আগেই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনেও। কিন্তু বিপক্ষের পায়ের জঙ্গলে আটকে যান মহেশ। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে বিষ্ণুর শট বাঁচান মিরশাদ। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল নর্থ ইস্ট। কিন্তু নেস্টরের শট বাঁচান প্রভসুখন গিল। দ্বিতীয়ার্ধ অনবদ্য। মাঠে যেন স্প্যানিশ অর্কেস্ট্রা চলল। মহেশ ছিলেনই, সঙ্গে যোগ দিলেন নন্দকুমার। তাতেই শেষ নর্থ ইস্ট। ম্যাচের ৬২ মিনিটে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করে ইস্টবেঙ্গল। ডানদিক থেকে নন্দকুমারের উদ্দেশে ক্রস রাখেন মহেশ। রিসিভ করে ডান পায়ের টোকায় গোল ডার্বির নায়কের। তার ৪ মিনিট পর নিজের জোড়া এবং দলের চতুর্থ গোল করেন ক্লেইটন। নন্দর ভাসানো ক্রস থেকে গোল। সত্যিই সোম রাতে চোখের সুখ দিল ইস্টবেঙ্গল। চেন্নাইয়ে মাঝারি মানের ফুটবলের পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাতারাতি দলকে কীভাবে এতটা বদলে দিলেন কুয়াদ্রাত? কোন ম্যাজিক ওয়ান্ডের ছোঁয়ায় পুরো ভোল বদলে গেল? ম্যাচের ৮১ মিনিটে ৫-০। মহেশের ঠিকানা লেখা মাইনাস থেকে ডান পায়ের পুশে গোল নন্দকুমারের। অনেকদিন পরে সেলিব্রেট করার সুযোগ পেল লাল হলুদ গ্যালারি। ম্যাচের অন্তিমলগ্নে হিজাজির ভুলে পেনাল্টি পেয়েছিল নর্থ ইস্ট। কিন্তু গোল হয়নি। নেস্টরের শট ক্রসপিসে লাগে। রাতটা যে ছিল শুধুই ইস্টবেঙ্গলের। কুয়াদ্রাতের কোচিংয়ে আজ থেকেই স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করতে পারে লাল হলুদ।