হক জাফর ইমাম, মালদাঃ সোমবার মালদা জেলা পুলিশ সুপারের গাড়ির চালকের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন মালদা জেলা আদালতের এক আইনকর্মী। বাধা দিতে গিয়ে আরও এক আইনজীবী মার খেলেন। ঘটনাটি ঘটেছে ছিল মালদা জেলা কোর্ট আদালত এলাকায়। আইনজীবীদের অভিযোগ, ঘটনায় অভিযোগ জানাতে গেলে মালদা ইংরেজবাজার থানার আই সি তাঁদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পরেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ সুপারের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ইংরেজবাজার থানার আই সির ও কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। আই সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আইনজীবীরা আদালত বয়কটের হুমকি দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার মালদা জেলা পুলিশ সুপারের গাড়ি আদালত চত্বরে ঢুকছিল। সেই সময় জেলা আদালতের এক মহুরি পার্থসারথি সরকার ওই এলাকা থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি পুলিশ কোর্ট থেকে ফিরছিলাম। সেই সময় পুলিশ সুপারের গাড়ি আদালত চত্বরে ঢোকে। পুলিশ সুপার গাড়ি থেকে নেমে নিজের দপ্তরে চলে যান। গাড়ি আসতে দেখে তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন। হঠাৎ পুলিশ সুপারের গাড়ির চালক বলতে শুরু করেন, আমি নাকি অশান্তি সৃষ্টি করছি। একথা বলেই তিনি গাড়ি থেকে নেমে কোনও কারণ ছাড়াই আমাকে মারতে শুরু করেন। তিনি হুমকি দিতে থাকেন, আমি এসপির গাড়ির ড্রাইভার। কে কী করবে দেখে নেব। আমার কোমর ও ঘাড়ে আঘাত লেগেছে।অভিযোগ, শুধু পার্থবাবুকেই নয়, পুলিশ সুপারের গাড়ির চালক জেলা আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী সুদীপ্ত গঙ্গোপাধ্যায়কেও বেধড়ক মারধর করেন। সুদীপ্তবাবু জানান, পার্থসারথিকে মারছে দেখে তিনি তাঁকে বাঁচাতে যান। পুলিশ সুপারের গাড়ির চালককে তিনি বলেন, পার্থকে এভাবে মারধর করছে কেন? সেকথা শুনেই সে সুদীপ্তবাবুকে আক্রমণ করে। তাঁর হাতে আঘাত করে। এমন কী ওই কনস্টেবল আইনজীবীদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করতে থাকে। এবিষয়ে আইনজীবীরা আইসির কাছে অভিযোগ জানাতে যান। তখন আই সি তাঁদের বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন। না হলে তিনি আইনজীবীদের জেলে ভরে দেওয়ার হুমকি দেন। সুদীপ্তবাবুর প্রশ্ন, “পুলিশের কাছে আমাদের মতো আইনজীবীদেরই যদি এমন অবস্থা হয়, তবে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হতে পারে?”মালদা বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবকিশোর মজুমদার বলেন, “এই ঘটনা থেকেই পরিষ্কার আই সির মতো পুলিশকর্মীরা সাধারণ মানুষের উপর কেমন অত্যাচার করেন। আমরা আইসির কঠোর শাস্তি দাবি করছি। তা না হলে আমরা আগামীকাল আলোচনাসাপেক্ষে আদালত বয়কটের পথে নামতে বাধ্য হব। ইংরেজবাজার থানার আইসির ওই চেয়ারে থাকার যোগ্যতা নেই। তাঁকে অবিলম্বে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। আমরা গোটা ঘটনা জেলা বিচারককে জানিয়েছি। এই ঘটনায় পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইংরেজবাজার থানার আই সি শান্তনু মৈত্রর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ভোটের আগে এই ঘটনা পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলে প্রভাব ফেলেছে।