হক জাফর ইমাম, মালদা: কংগ্রেস এবার কেন্দ্রে সরকার গড়বে, মোদি বড়লোকদের চৌকিদার, কটাক্ষ কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধীর। বললেন, পাঁচ বছর আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার । তার একটিও পূরণ করতে পারেন নি তিনি। বরং দেশে বিভাজন, জাতপাত, ধর্মের রাজনীতি এনে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরীর চেষ্টা করছে বিজেপি। শনিবার মালদার চাচোল মহকুমার চাচোল ১ ব্লকের কলমবাগান মাঠে প্রথম নির্বাচনী সভাতে বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী । এদিন দুপুর তিনটায় এই নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, কংগ্রেস কখনো বিভাজনের রাজনীতি করে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে শিখিয়েছে কংগ্রেস। মাত্র পাঁচ বছর ক্ষমতায় এসে সারাদেশে দুই বিচারধারা তৈরি করে ফেলেছে মোদি সরকার । মোদি বলেছিলেন ক্ষমতায় আসার পর বছরে দুই কোটি বেকারের চাকরির ব্যবস্থা করবে। প্রতিটি গরিবদের ব্যাংক একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে ।কৃষকদের ঋণ মুকুব করা হবে। চৌকিদার হিসাবে দেশের
সেবা করবেন। এখন তিনি চোর সেজে সারা দেশের মানুষকে চৌকিদার বানিয়ে ফেলেছেন । চৌকিদার কাদের থাকে। গরীব মানুষের বাড়িতে চৌকিদার থাকে না । থাকে বড়লোকদের বাড়িতে। রাফায়েল কান্ডে চৌকিদার অনিল আম্বানিকে ৩০ হাজার কোটি টাকা পাইয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও নিরব মোদী , ললিত মোদী দেশের টাকা মেরে পালিয়ে গিয়েছে। তাদের পালাতে সাহায্য করেছে মোদি সরকার। এরকম একের পর এক উদাহরণ তুলে মোদিকে কার্যত বৃদ্ধ করেন রাহুল গান্ধী।এদিন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢালাওভাবে করে দিবে । গরিব মানুষেরা যাতে কাজ পান তারও ব্যবস্থা করে দিবে। সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে তাদের টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। মোদি এসে যে পাঁচটি কর বসানোর কথা বলেছেন রাহুল গান্ধী তাকে গব্বর সিং ট্যাক্স বলে কটাক্ষ করেছেন। রাহুল গান্ধী বলেন, ইচ্ছামতো নোট বন্দি করে দিল মোদি। জিএসটি বসিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কঠিন সমস্যার মুখে ফেলে দিয়েছেন । অথচ জিএসটি কি তা বহু মানুষই জানেন না। কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে এই গব্বর সিং ট্যাক্স তুলে দিয়ে একটি করের ব্যবস্থা করবে কংগ্রেস সরকার।এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, মালদার মানুষ আপদে-বিপদে সবসময় কংগ্রেসের পাশে থেকেছে । এখানে আপনারা কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে এনেছেন । যাকে জিতিয়ে এনেছিলেন, তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। প্রতারণা করে উন্নয়নের কাজ করা যায় না । এদিন ভাষণে নাম না করে উত্তর মালদার সংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী মৌসুম নূরকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন , রাজনীতির উর্ধ্বে মালদার সঙ্গে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে । দিল্লিতে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় এলে যে কোন সাহায্য করবো । এত প্রখর রৌদ্রে আপনারা এসেছেন । আপনার আবার বোতাম টিপেও ভোট দিবেন। আপনাদের এই আবেগ আমি জীবনে ভুলবো না। এটাই হচ্ছে ভালোবাসার সম্পর্ক । আম , রেশমের জেলা মালদা। কেন্দ্রে ক্ষমতায় কংগ্রেস এলে মালদায় আম , রেশমের কারখানা করে দেওয়া হবে ।চাষিরা সঠিক দাম পাবেন । মালদার আম, রেশম শিল্প বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে। রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের নিশানা ছিল কেবলমাত্র মোদি আর মোদী । এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নিয়ে বলতে গিয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন , বাংলায় আপনারা সিপিএম সরকারকে দেখেছেন। এক দলের সরকারের কাজ-কর্মে মানুষ সন্তুষ্ট ছিল না বলেই তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসে। সেই সরকারের সময় যে অত্যাচার হত এখন মমতা সরকারের সময় অত্যাচার হচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আনুন । তবে বাংলার উন্নতি সম্ভব। আমরা ক্ষমতায় এসে বাংলার উন্নতি করব।এদিনের উত্তর মালদার কংগ্রেস প্রার্থী ঈসাখান চৌধুরীর সমর্থনে নির্বাচনী সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সৌমিত্র। দলের পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক তরুণ গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য । ছিলেন রায়গঞ্জ , উত্তর ও দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীরা । এদিনের সভায় যাতে লোকজন আসে। তার জন্য দুপুর একটা থেকে শুরু হয়ে যায় কর্মসূচি । দুপুর তিনটায় পূর্ণিয়া থেকে হেলিকপ্টার করে চাচোলের কলমবাগান মাঠে নামেন রাহুল গান্ধী । এরপর তিনি সভা মঞ্চে এসে কুড়ি মিনিট বক্তব্য রেখে পুনরায় পুরনিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।