জেলা

গভীর নিম্নচাপের পর ডিভিসির ছাড়া জলে ভাসল জেলা, দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েকদিন টানা বৃষ্টি। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিভিসির ছাড়া জল। এই দুই কারণে দক্ষিণবঙ্গের সাত জেলার বিস্তীর্ণ অংশে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগের কারণে ইতিমধ্যে দু’জনের মৃত্যু ও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অতিবৃষ্টির জেরে বিঘার পর বিঘা কৃষিজমি জলের তলায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। সরকার দুর্গতদের পাশে রয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলিকে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া ও হুগলি জেলার বন্যা পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। শনিবার থেকে এই জেলাগুলিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়।  সোমবার সন্ধ্যার পর নিম্নচাপটি ঝাড়খণ্ডের উপর সরে গেলেও এ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে দিনভর প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। অজয়, দামোদর,  কংসাবতী, কেলেঘাই, দ্বারকেশ্বরী, গন্ধেশ্বরী, দ্বারকা, কুয়ো নদী ফুঁসছে। এর মধ্যেই আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের দামোদর অববাহিকা ও সংলগ্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত চলবে আরও কিছু সময়। এই পূর্বাভাসও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের। কারণ, ডিভিসির আওতাধীন মাইথন, পাঞ্চেত বাঁধ থেকে জল ছাড়ার হার ২৬ হাজার কিউসেক থেকে বাড়িয়ে এদিন ৪৬ হাজার কিউসেক করা হয়েছে। সেই জল দুর্গাপুর ব্যারেজে এসে জমা হওয়ায় এদিন সেখান থেকে ৮৪ হাজার ৫০০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ডে দামোদর অববাহিকায় আরও বেশি বৃষ্টি হলে ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়াতে বাধ্য হবে। সেক্ষেত্রে বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও হাওড়া জেলার নিম্ন দামোদর অববাহিকা এলাকা প্লাবিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা। এছাড়া, কংসাবতী নদীর উপর মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে ৩০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। সেচদপ্তর সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সোমবারই মাইথন, পাঞ্চেত, মুকুটমণিপুর, ম্যাসাঞ্জোর, তেনুঘাট, চান্ডিল বাঁধের জলস্তর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার কাছাকাছি চলে আসে।  এদিকে, দুর্যোগের জেরে পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জে দেওয়াল চাপা পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বীরভূমেও দেওয়াল চাপা পড়ে এক মহিলা মারা গিয়েছেন। এই জেলাতেই দেড়শোর বেশি মাটির বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। সতীপীঠ কঙ্কালীতলার মন্দির প্রাঙ্গণও এক কোমর জলের নীচে চলে গিয়েছে। তারাপীঠ শ্মশান জলমগ্ন হয়ে পড়ায় শবদাহ বন্ধ রাখতে হয় এদিন। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। মুর্শিদাবাদে নদীর জলস্তর বৃদ্ধির পাশাপাশি বাসিন্দাদের মধ্যে ভাঙনের আশঙ্কা চেপে বসেছে।