প্রথমে ঘোষণা ছিল ৭৫টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের। পরে সংখ্যাটা বাড়িয়ে করা হয় ৪০০। কিন্তু সবই কথার কথা। বাস্তবে এই অমৃতকাল পর্যন্ত দেশে চালু হয়েছে মাত্র ৮টি। তবে ঘোষণার এই চমক বন্ধ করতে রাজি নয় মোদি সরকার। কারণ, বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে যে কোনও মূল্যে ভোট নিশ্চিত করতে হবে। ফলে আবার বন্দে ভারতের স্বপ্ন ফেরি শুরু করছেন প্রধানমন্ত্রী। এবার সংখ্যাটা অন্তত ৫০০। রেলমন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রে খবর, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের সাধারণ বাজেটেই এই ঘোষণা করা হতে পারে।
প্রথম ঘোষণাটা করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই। দিনটা ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন—পরবর্তী ৭৫ সপ্তাহে দেশের ৭৫টি প্রান্ত থেকে চালানো হবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। যদিও সেমি হাইস্পিড এই ট্রেনের বাস্তবায়ন সেই গতিতে হয়নি। তবে মোদির দেওয়া সেই সময়সীমা শেষের আগেই আসরে নামেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের সাধারণ বাজেটে ঘোষণা করেন ৪০০টি নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে মোট ৪৭৫টি সেমি হাইস্পিড ট্রেন চালুর কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেশের মাত্র আটটি রুটে তার দেখা মিলেছে। এর মধ্যে একটিমাত্র বাংলার— হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি। বাকিগুলি কবে চালু হবে? উত্তর নেই রেলমন্ত্রকের কাছে। তবে একটি বিষয় এখনই পরিষ্কার, সীমিত পরিকাঠামো নিয়ে শয়ে শয়ে বন্দে ভারত ট্রেন চালানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রেল বোর্ডকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আবার ৫০০টি সেমি হাইস্পিড ট্রেনের ঘোষণার সম্ভাবনায় চোখ কপালে উঠছে তথ্যাভিজ্ঞ মহলের। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বাস্তবে সেগুলি চালানো সম্ভব হোক বা না হোক, ভোটবাক্স ভরাই লক্ষ্য মোদি সরকারের? লোকসভায় বাজিমাত করতেই কি আমজনতার নাকের সামনে এই চমক ঝুলিয়ে রাখা হবে? রেলমন্ত্রকের পক্ষ থেকে অবশ্য সম্ভাব্য বাজেট ঘোষণা নিয়ে সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে রেল বোর্ড সূত্রে দাবি, বন্দে ভারত ট্রেন পরিচালনাতেই এই মুহূর্তে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র। ফলে লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত দেশের আরও বেশ কয়েকটি রুটে এই সেমি-হাইস্পিড ট্রেন চালু করে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। গত ১৫ জানুয়ারি সর্বশেষ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু করা হয়েছে বিশাখাপত্তনম-সেকেন্দ্রাবাদ রুটে। বর্তমানে চলা এই ট্রেনগুলির পুরোটাই চেয়ার কার। তাই এখন সেগুলি চালাতে শতাব্দীর রুটগুলিকে বাছা হচ্ছে। রেল বোর্ড সূত্রের খবর, আগামী দিনে স্লিপার ক্লাস-যুক্ত বন্দে ভারত ট্রেন আসতে চলেছে। তখন রাজধানী এবং দুরন্তের রুটগুলিতে সেগুলি চলবে। অর্থাৎ ইঙ্গিত স্পষ্ট—বন্দে ভারতকে কেন্দ্র করে চমকের রাজনীতি থেকে কোনওমতেই সরছে না মোদি সরকার। রেল সূত্রে আরও খবর, এবারের সাধারণ বাজেটে রেলের রোলিং স্টকে বিপুল বরাদ্দ হতে পারে। শুধু ৫০০টি বন্দে ভারত ট্রেন নয়, ৫ হাজার এলএইচবি কোচ, সাড়ে ৫ হাজার ওয়াগন, অন্তত ৩৫টি হাইড্রোজেন ট্রেন তৈরিও লক্ষ্য। তাই রেলের রোলিং স্টকে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বরাদ্দ হতে পারে প্রায় তিন লক্ষ কোটি টাকা।