জ্যোতিষ পুজো

 Guru Purnima : গুরু পূর্ণিমার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য! 

হিন্দুশাস্ত্রমতে জুলাই মাসের পূর্ণিমা তিথি গুরু পূর্ণিমা হিসাবে পরিচিত। এই দিনটি ব্যাস পূর্ণিমা নামেও বিখ্যাত, কারণ বেদ সংকলনকারী এবং মহাভারতের মতো মহাকাব্য রচনাকারী মহর্ষি বেদ ব্যাসের জন্মও এই দিনে হয়েছিল।তাঁর প্রকৃত নাম কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন, কিন্তু বেদকে বিভক্ত করার কারণে তিনি বেদব্যাস নামে পরিচিত হন। ২০২৫ সালের গুরু পূর্ণিমা তিথি আর কয়েকদিন পরই শুরু হচ্ছে। প্রতি মাসেই পূর্ণিমা তিথির আলাদা মাহাত্ম্য থাকে।  লক্ষ্মীবার হওয়াতে এই পূর্ণিমার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। এই বিশেষ তিথিতে সত্যনারায়ণ পুজো আয়োজিত হয় বহু বাড়িতে। মনে করা হয়, সনাতন ধর্মে গুরু পূর্ণিমা তিথি অত্যন্ত ফলদায়ী। এই বিশেষ তিথিতে গুরুকে আলাদা করে শ্রদ্ধার্ঘ জানানো হয়। মনে করা হয়, এই তিথিতে ব্রত রেখে গুরুকে পুজো করলে, তা ফলদায়ী হয়। এই দিনে গুরুর বিশেষ পুজো করলে, তা সুফল দিয়ে থাকে বলে বিশ্বাস করা হয়। এক দিকে যেমন, প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যমতে, এদিন আদিগুরু ঋষি বেদব্যাসের জন্মবার্ষিকীর দিন হিসেবেও পালিত হয়। অন্যদিকে, বৌদ্ধদের জন্যও গুরু পূর্ণিমা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এদিন বুদ্ধজ্ঞান লাভের পর সারনাথে প্রথম ধর্মোপদেশ প্রদান করেছিলেন গৌতম বুদ্ধ। যা ধর্মচক্র প্রবর্তন নামেও পরিচিত। হিন্দু ও বৌদ্ধদের পাশাপাশি জৈনদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। ২৪ তম তীর্থঙ্কর মহাবীর প্রথম ও প্রদান শিষ্য হিসেবে গৌতম স্বামীকে বেছে নেন। শিক্ষা ও নির্দেশনার প্রকাশকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে এদিন গুরু পূর্ণিমা পালিত হয়। প্রাচীন কাল থেকে গুরুর বিশেষ মাহাত্ম্য পরিলক্ষিত হয়েছে । তাঁরাই আমাদের সঠিক পথ দেখিয়ে থাকেন । তাই এইদিন গুরুর চরণে অর্পন করা হয় ৷ পাশাপাশি শাস্ত্রে গুরুকে বিষ্ণু ও বৃহস্পতির রূপ মনে করা হয়। আসন্ন এই গুরু পূর্ণিমার তিথি কবে পড়ছে, দেখা যাক।

পঞ্জিকা অনুসারে, জুলাই মাসে গুরু পূর্ণিমা ২০২৫র তিথি ১০ জুলাই ২০২৫ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে পড়ছে। উল্লেখ্য, লক্ষ্মীবারে এবার পূর্ণিমা তিথি শুরু হচ্ছে। ১০ জুলাই রাত ১ টা ৩৬ মিনিটে পড়ে যাচ্ছে গুরু পূর্ণিমার তিথি। আর ১১ জুলাই রাত ২ টো ৬ মিনিটে তিথি ছেড়ে যাচ্ছে। চলতি বছরে ১০ জুলাই পালিত হবে গুরু পূর্ণিমা তিথি।

চলতি বছরে গুরু পূর্ণিমার অভিজিৎ মুহূর্ত পড়ছে দুপুর ১১ টা ৫৯ মিনিট থেকে। আর তা চলবে ১২ টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত। গোধূলি মুহূর্ত সন্ধ্যা ৭ টা ২১ মিনিট থেকে ৭ টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত চলবে। অমৃতকাল রাত ১২ টা ৫৫ মিনিট থেকে ১১ জুলাই রাত ২ টো ৩৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে। বিজয় মুহূর্ত রাত ২ টো ৪৫ মিনিট থেকে রাত ৩ টে ৪০ মিনিট পর্যন্ত হবে। গুরু পূর্ণিমার ব্রহ্ম মুহূর্ত তিথি ১০ জুলাই ২০২৫ র ১০ জুলাই ভোর ৪ টে ১০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৪.৫০ মিনিট পর্যন্ত থাকবে।

সম্ভব হলে এইদিন খুব ভোরে উঠে গঙ্গাস্নান করুন ৷ স্নান করে মা বাবাকে প্রণাম করুন এতে জীবনে চলার পথে আর্শীবাদ লাভ হয় ৷ নিজের সাধ্যমতো গরীবদের দান করতে পারেন ৷ যদি দীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবেন এইদিন অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় ৷ এইদিন স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে গুরুর চরণে হলুদ বা সাদা ফুল অর্পন করুন ৷ স্নান করে ধর্মগ্রন্থ পাঠ বা ধ্যান করা করলে শান্তি পাওয়া যায় ৷ ” গুরুপূর্ণিমার দিন লক্ষী ও নারায়নের পুজো করলে সংসারে অর্থের প্রাপ্তি হয় ৷ সন্ধ্যের সময় ঘি এর প্রদীপ জ্বালান ৷ বাড়িতে সুখ-শান্তির জন্য গুরু পূর্ণিমার দিন বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে একটি ঘি-এর প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা ভালো । এই প্রদীপে সামান্য হলুদ মিশিয়ে দিন । এতে বাড়ির সুখ শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য় করে ৷

  • গুরু বা শিক্ষকের পায়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ
  • ধর্মগ্রন্থ পাঠ, ধ্যান করা
  • গুরুকে উপহার দেওয়া
  • সামাজিক ও আধ্যাত্মিক কাজে অংশগ্রহণ করা

দেবগুরু বৃহস্পতির মন্ত্রঃ ॐ ব্রহ্ম বৃহস্পতৈ নমঃ (Om Bram Brihaspataye Namah)।

ভগবান বিষ্ণু মন্ত্রঃ ॐ নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় (Om Namo Bhagavate Vasudevaya)।

জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, এই বছর গুরু পূর্ণিমায়, বৃহস্পতি মিথুন রাশিতে থাকবে, তাই ৪টি রাশির মানুষ বিশেষ সুবিধা পাবেন। বৃহস্পতির এই গোচরের কারণে কোন রাশির জাতকরা আধ্যাত্মিক এবং পেশাদার সাফল্যের আশীর্বাদ পাবেন তা জেনে নিন।

জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, বৃহস্পতি ৯ জুলাই উদিত হচ্ছে এবং তারপর ১১ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে পশ্চাদগামী হবে। এই স্বর্গীয় ঘটনাগুলি কিছু রাশির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে বৃহস্পতি পূর্ণিমার দিনে, বৃহস্পতি মিথুন রাশিতে থাকা কিছু রাশির জন্য নতুন আশা, সম্পর্ক এবং সুযোগের দ্বার খুলে দিতে পারে।

মিথুন রাশি
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, এই সময়কাল মিথুন রাশির জাতকদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে। বৃহস্পতি আপনার নিজের রাশিতে থাকা একটি ইতিবাচক লক্ষণ। আপনার চারপাশে একটি নতুন শক্তি প্রবাহিত হবে যা আপনার চিন্তাভাবনা এবং কাজের ধরণ পরিবর্তন করবে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক মধুর হবে এবং আপনি যদি লেখালেখি, শিক্ষকতা বা বক্তৃতা ক্ষেত্রে থাকেন তবে এই সময়কাল অগ্রগতির নতুন উচ্চতায় আরোহণের সুযোগ হতে পারে।

কন্যা রাশি
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, এই সময়টি কন্যা রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়। আপনার নতুন জিনিস শেখার ইচ্ছা পূরণ হতে পারে। এটি কোনও কর্মশালা, অনলাইন কোর্স বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হোক – এই সময়ে অর্জিত জ্ঞান ভবিষ্যতে আপনার পথকে সহজ করে তুলবে। মনে রাখবেন, ব্যবহারিক হোন এবং আপনার দৈনন্দিন রুটিনে শৃঙ্খলা অন্তর্ভুক্ত করুন।

ধনু রাশি
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, ধনু রাশির জাতকদের জন্য এই সময়কাল মানসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং গুরুর মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। কোনও সিনিয়র বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির দিকনির্দেশনা আপনার জীবনের দিকনির্দেশনা পরিবর্তন করতে পারে।

কুম্ভ রাশি
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, বৃহস্পতির গোচর কুম্ভ রাশির জাতকদের জন্য বিশেষভাবে ফলপ্রসূ হবে। আপনার সামাজিক সংযোগ দৃঢ় হবে এবং আপনি মানুষের কাছ থেকে সম্মান পাবেন। আপনি যদি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কোনও নতুন প্রকল্প শুরু করার কথা ভাবছেন, তবে এটি সঠিক সময়। সহযোগিতা সাফল্যের পথকে সহজ করে তুলতে পারে।