করোনাকালে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নিয়ে ঢাক পিটিয়ে ঘোষণা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ৩ বছর কাটতে না কাটতেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে সেই স্লোগান। প্রতিশ্রুতি ছিল, ভারত ক্রমেই আত্মনির্ভর হবে সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণে। কিন্তু সে কথা ভুলে দেশে দেশে ঘুরে হাজার হাজার কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম কিনেই চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বগুরুর ভাবমূর্তি তুলে ধরতে বিদেশি সংস্থাগুলিকে উপহার দিয়ে চলেছেন মুনাফার পাহাড়। সদ্য আমেরিকা সফর শেষ হয়েছে। সেখান থেকে একঝাঁক চুক্তি সেরে এসে এবার মোদির গন্তব্য ফ্রান্স। আরও রাফাল থেকে স্করপিন সাবমেরিন কিনতেই তাঁর এই মিশন প্যারিস। সূত্রের খবর, ভারত থেকে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সামরিক বরাত পেতে চলেছে ফ্রান্স। তালিকায় রয়েছে ২৬টি রাফাল এম নেভাল জেট, তিনটি স্করপিন সাবমেরিন। এর আগে রাফাল যুদ্ধবিমান এসেছিল ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য। এবার আসছে নৌবাহিনীর জন্য। এই নয়া রাফাল থাকবে আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্য নামক দেশের দুই প্রধান যুদ্ধজাহাজে। ভারত যত অস্ত্র আমদানি করে, তার ৮৫ শতাংশই তিন দেশ থেকে। ফ্রান্স, আমেরিকা ও রাশিয়া! সাধারণত রাশিয়ার সঙ্গে কোনওরকম বাণিজ্যিক লেনদেন থাকলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নিষেধাজ্ঞার রোষে পড়তে হয় সেই দেশকে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা হুঁশিয়ারি দেয়, রাশিয়া থেকে অস্ত্র অথবা জ্বালানি কিনলে সেই দেশকে কোণঠাসা হতে হবে আন্তর্জাতিক মহলে। ভারত কিন্তু তারপরও অবাধে মস্কোর জ্বালানি কিনেছে। অস্ত্র কিনেছে। আমেরিকা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। কেন? এর কারণ, আমেরিকা জানে দেড়শো কোটি জনসংখ্যা এবং স্থায়ী গণতন্ত্রের জোরালো অর্থনীতির ভারতকে বয়কট করা তাদের পক্ষে লোকসানের। মার্কিন কর্পোরেটই এর তুমুল বিরোধিতা করবে। বরং ভারতকে পাশে রাখলে মার্কিন অর্থনীতির সুবিধা অনেক বেশি। তার প্রমাণও পাওয়া যায় অহরহ। তাই উল্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সরকারিভাবে আমন্ত্রণ জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর তারই ফল একঝাঁক সামরিক সরঞ্জামের চুক্তি। এফ ৪১৪ ফাইটার জেট থেকে এম কিউ নাইন বি সি গার্ডিয়ান ড্রোন অথবা ফাইটার জেট ইঞ্জিন নির্মাণের বরাত। সঙ্গে সেমি কন্ডাক্টর চিপ অথবা হেলিকপ্টার ডিল। কোনও চুক্তি ২০০ কোটি ডলারের, কোনওটি ৩০০ কোটি ডলারের। অর্থাৎ মোদির সফরে আদতে বিপুল বাণিজ্যিক মুনাফা হতে চলেছে আমেরিকারই। ঠিক সেই ধাঁচেই বৃহস্পতিবার প্যারিসে পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ঠিক যেমন মোদিকে ব্যক্তিগত নৈশভোজে আমন্ত্রণ করে বিরল সম্মান দেখিয়েছেন জো বাইডেন, তেমনই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ বাস্তিল দিবসের জাতীয় প্যারেডে তাঁকে দেবেন গেস্ট অব অনারের সম্মান। আর তারপরই হবে নতুন অস্ত্র চুক্তি। শুধু রাফাল ও সাবমেরিন মিলিয়ে ৯০ হাজার কোটি টাকার সরঞ্জামের বরাত পাবে ফ্রান্স। অর্থাৎ, এবারও ‘আত্মনির্ভরতা’র মুনাফা পাবে বিদেশি সংস্থাই!