পুজো

জগদ্ধাত্রী পুজোর মাহাত্ম্য!

জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরে সাজো সাজো রব কৃষ্ণনগর থেকে চন্দননগরে। দেবী রূপে ত্রিনয়নী। তিনি চতুর্ভূজা, সিংহবাহিনী। অস্ত্র বলতে তাঁর হাতে শঙ্খ, চক্র ধনুক ও বাণ রয়েছে। গলায় নাগযজ্ঞোপবীত। তাঁর বাহন সিংহ দাঁড়িয়ে থাকে হাতির উপর। দেবীর গায়ের রঙের সঙ্গে তুলনা করা হয় উদীয়মান সূর্যের। আর এই জগদ্ধাত্রী দেবীর পুজোয় নবমী ২০২৩ সালের কোন তারিখে পড়ছে, তা দেখে নেওয়া যাক। জগদ্ধাত্রী পুজোর তিথি- ১৯ নভেম্বর রবিবার জগদ্ধাত্রী পুজোর সপ্তমী। ২০ নভেম্বর সোমবার পড়ছে অষ্টমী। ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার পড়ছে নবমী। ২২ নভেম্বর দশমী পড়ছে। তবে জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীর তিথিতে পুজোকেই মূল পুজো হিসাবে মনে করা হয়। দেখে নেওয়া যাক পুজোর শুভ মুহূর্ত।

শাস্ত্র মতে নবমীর দিনে জগদ্ধাত্রী পুজো করা হয়ে থাকে। হুগলির চন্দননগরে চার দিন ধরে ঠিক দুর্গা পুজোর মতোই হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। তবে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে একদিনে নবমী তিথিতেই জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে। জেনে নেওয়া যাক এই বছর কবে থেকে শুরু হচ্ছে জগদ্ধাত্রী পুজো।

  • ১৯ নভেম্বর ২০২৩ জগদ্ধাত্রী পুজোর সপ্তমী
  • ২০ নভেম্বর ২০২৩ জগদ্ধাত্রী পুজোর অষ্টমী
  • ২১ নভেম্বর ২০২৩ জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমী
  • ২২ নভেম্বর ২০২৩ জগদ্ধাত্রী পুজোর দশমীতে হবে দেবীর বিসর্জন।

পুরাণ অনুযায়ী মহিষাসুরের অত্যাচারে সকলে ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মহিষাসুরের হাত থেকে মুক্তির জন্য তাঁরা দুর্গার শরণে যান। মহিষাসুর বধ করেন দেবী দুর্গা। এদিতে দেবতারা উল্লসিত হয়ে ভাবতে শুরু করেন যে দুর্গা আসলে তাঁদের শক্তির সম্মিলিত রূপ, একা তাঁর কোনও অস্তিত্ব নেই।তারা মনে করেছিল যে দেবী দুর্গা অসুরদের বধের জন্য তাদের যন্ত্র হয়ে উঠেছেন। মহিষাসুর বধের পর দেবতাদের মধ্যে অহংকার আসে। দেবতাদের অহংকার ও গর্ব দেখে তাঁদের পরীক্ষা করতে উদ্ধত হন দুর্গা। তখনই দেবী স্বয়ং শক্তির প্রতীক হয়ে দেবতাদের উপলব্ধি করাতে আসেন যে তাদের প্রতিটি কর্মের মধ্যেই তার শক্তি লুকিয়ে আছে। দেবতাদের উদ্দেশে একটি তৃণখণ্ড নিক্ষেপ করেন। বজ্র দিয়ে ইন্দ্র সেই তৃণটি ধ্বংস করতে পারেননি। আবার অগ্নি দেবের মায়া সেই তৃণকে পুড়িয়ে ফেলতে অক্ষম হয়। পবনদেব সেই তৃণ ওড়াতে অসফল হন। বরুণদেবে সেই তৃণের সামান্য অংশও জলে ভাসিয়ে দিতে পারেননি। একইভাবে অন্যান্য দেবতারাও তাদের শক্তি দেখিয়েছিল, কিন্তু সবাই পরাস্ত হয়। তখন যক্ষ বললেন, তোমাদের সকল দেবতার শক্তি বাস্তবে কিন্তু তোমাদের নিজস্ব নয়। আদিশক্তি মা জগদ্ধাত্রী সর্বশক্তিমান। তিনিই সব শক্তির মূলে। তিনি এই পৃথিবীর কাঠামোর রক্ষক। তাই তাকে জগদ্ধাত্রী বলা হয়। এর পর দেবতাদের সামনে উপস্থিত হন দুর্গার সালঙ্করা, চতুর্ভুজা স্বরূপ জগদ্ধাত্রী। দেবতাদের বুঝিয়ে দেন যে তিনিই জগতের ধারিণী শক্তি।

অন্য দিকে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে উল্লিখিত রয়েছে যে, মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে দুর্গাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এই চেষ্টায় মহিষাসুর একবা হাতির রূপ ধারণ করে। সেই হাতিকে বধ করার চেষ্টা করেন দুর্গা। সেই উদ্দেশে এক চতুর্ভুজা স্বরূপে আবির্ভূত হন তিনি। চক্র দ্বারা সেই হাতির মুণ্ডচ্ছেদ করেন তিনি। দেবীর এই রূপটিই হল জগদ্ধাত্রী। তাই ধ্যানমন্ত্রে উল্লেখ না-থাকা সত্ত্বেও মূর্তিতত্ত্বে জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ এক হাতির মৃত শরীরের উপর দাঁড়িয়ে। সংস্কৃতে হাতিটির নাম করী, তাই সেই অসুরের নাম করীন্দ্রাসুর। তাকে বধ করেন জগদ্ধাত্রী পরিচিত হন করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।

এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে পড়ে। প্রধানত এই পূজা গোষ্টাষ্টমীতে পালিত হয়। চারদিন ধরে চলে মায়ের পুজো। এই পুজো সপ্তমী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত চলে। মা জগদ্ধাত্রীর উজ্জ্বল রূপের পুজো করা হয়। কথিত আছে, রামকৃষ্ণ মিশনে এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন রামকৃষ্ণদেবের স্ত্রী ম সারদা দেবী। এর পরই, এই উত্‍সবটি বিশ্বের প্রতিটি কোণে উপস্থিত রামকৃষ্ণ মিশনে পালিত হয়েছিল। এই উত্‍সবটি মা দুর্গার পুনর্জন্ম হিসাবে উদযাপন করা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে দেবী মন্দের বিনাশ করতে এবং তার ভক্তদের সুখ ও শান্তি দিতে পৃথিবীতে এসেছিলেন। এতে বিশেষ করে মানুষ তার ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করার জ্ঞান লাভ করে।অহংকার বিনাশই এই উৎসবের উদ্দেশ্য। দেবী জগদ্ধাত্রী এবং দেবী দুর্গার রূপ হুবহু একই। নবরাত্রির মতোই আয়োজন করা হয় পুজোর।