পুজো

জন্মাষ্টমী-র শুভ তিথি

কথিত আছে দ্বাপর যুগে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার রূপে দেবকীর গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্ম হয় ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষ, অষ্টমী তিথি, রোহিণী নক্ষত্র, বুধবার ও বৃষ রাশিতে। এ কারণে প্রতিবছর এই তিথিতে কৃষ্ণ জন্মোৎসব পালিত হয়। এটি কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত। এবছর ৬ না ৭ সেপ্টেম্বর জন্মাষ্টমী, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তবে এবার বুধবার জন্মাষ্টমী। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি উপলক্ষে পুজো অর্চনায় মেতে উঠবেন পুণ্যার্থী ও ভক্তরা। এই তিথিতে কী করবেন, কী করবেন না জেনে নিন। মনে করা হয় এই তিথিতে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম পালন করলে জীবন অর্থ, সমৃদ্ধি ও সম্পদে ভরে ওঠে। ২০২৩ সালের জন্মাষ্টমীর শুভক্ষণ, রোহিণী নক্ষত্রের সময় ইত্যাদি সমস্ত খুঁটিনাটি জেনে নিন।

জন্মাষ্টমীতে রোহিণী নক্ষত্রের সময়– ৬ সেপ্টেম্বর রোহিণী নক্ষত্র শুরু হবে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে। ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত এই নক্ষত্র থাকবে।

জন্মাষ্টমী পুজোর শুভক্ষণকৃষ্ণ পুজোর সময়: ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৫৭ মিনিট থেকে ১২টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত। পুজোর মোট সময়ে ৪৬ ঘণ্টা। মধ্যরাত্রি ক্ষণ- ১২টা ০২ মিনিট।

জন্মাষ্টমী তিথি – ভাদ্রপদ কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তিথি শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩টে ৩৭ মিনিট থেকে। শেষ হবে ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৪টে ১৪ মিনিটে।

৬ সেপ্টেম্বর – এই তারিখে গৃহস্থরা জন্মাষ্টমী পালন করতে পারেন। এ দিন রোহিণী নক্ষত্র ও রাত্রি পুজোর শুভক্ষণ পাওয়া যাবে। মাঝরাতে মথুরায় কংসের কারাগৃহে কৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। চলতি বছর ৬ সেপ্টেম্বর মথুরায় জন্মাষ্টমী পালিত হবে।

৭ সেপ্টেম্বর – পঞ্জিকা অনুযায়ী এ দিন বৈষ্ণব সম্প্রদায় জন্মাষ্টমী পালন করবে। সাধু, সন্ত ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে কৃষ্ণ পুজোর পৃথক বিধান রয়েছে। শাস্ত্রে পঞ্চদেবের উপাসক, অর্থাৎ স্মার্ত সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের কৃষ্ণ উপাসনার পৃথক পদ্ধতি সম্পর্কে উল্লেখ করা রয়েছে।

ব্রত ভঙ্গের সময় – যাঁরা জন্মাষ্টমীতে ব্রত পালন করেন তাঁরা কোন সময়ে পালন করবেন জেনে নিন।

ধর্ম শাস্ত্র অনুযায়ী বৈকল্পিক পারণ সময়ে ৭ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা ২ মিনিটে। বর্তমান প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কৃষ্ণ পুজোর পর মাঝ রাতেই ব্রত পারণ করেন অনেকে।

জন্মাষ্টমী পুজোর নিয়ম – জন্মাষ্টমীতে উপবাস ব্রত পালন করলে সঙ্কল্প করুন। জন্মাষ্টমীর রাতেই অভিষেক হয় মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণর। এই তিথিতে শ্রীকৃষ্ণকে দুধ ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। তার পর নতুন পোশোক পরান। কৃষ্ণের প্রিয় ময়ূরপঙ্খ, বাঁশি তাঁর পাশে রাখুন। মুকুট ও বৈজয়ন্তী মালা পরান। কৃষ্ণকে অবশ্যই তুলসী দল নিবেদন করবেন। মাখন, দুধ এবং দই জন্মাষ্টমী পালনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাড়িতে তৈরি মিষ্টান্ন ও প্রসাদ দিয়ে উপাসনা করুন শ্রীকৃষ্ণের। এছাড়া নাড়ু ফল, মিষ্টির ভোগ নিবেদন করুন। এর পর তাঁর সামনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন। সারা দিন শ্রীকৃষ্ণের নাম ও জপতপ করুন। পুজো হয়ে যাওয়ার পর সকলের মধ্যে কৃষ্ণের প্রসাদ বিতরণ করুন। এই পুণ্যতিথিতে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র দান করুন। মনে করা হয় এই কাজ করলে শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ থেকে কখনও বঞ্চিত হতে হয় না। জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি প্রবাহিত হয়। এই তিথিতে নারকেল জল বা ফলের রস পান করে উপবাস ভঙ্গ করতে পারেন। সাত্তিক আহার ভোজন করুন। এড়িয়ে চলুন রসুন, পেঁয়াজ, মাংস এবং সুরার মতো আহার। কারণ এগুলিকে তামসিক খাবার বলে মনে করা হয়। এই আহারগুলি বর্জন করে সাত্তিক আহার গ্রহণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ইস্কন মন্দিরেও একই রকম ভাবে পালিত হয় জন্মাষ্টমীর উৎসব। আগের দিন উৎসবের সূচনা হয় মহাস্নানের প্রস্তুতি পর্ব দিয়ে। কয়েক হাজার দেশি বিদেশি ভক্ত গঙ্গা থেকে আনেন মহাভিষেক বারি। জন্মাষ্টমীর ঠিক মুহূর্তে দুধ, ঘি, মধু, দই প্রভৃতির সঙ্গে এক হাজার কলস গঙ্গাজল দিয়ে সম্পন্ন হয় মহাভিষেক পর্ব। তবে জন্মাষ্টমীতে ইস্কনের অন্যতম আকর্ষণ ‘পুষ্পবৃষ্টি’। বৃষ্টিধারার মতো বিগ্রহের উপর ঝরে পড়তে থাকে গোলাপ-জুই-বেলি-কামিনী-চাঁপা ফুলের পাপড়ি। চার ফুটের বিগ্রহ ঢাকা পড়ে যায় ফুলে ফুলে। বলা হয়, এই উৎসবের নির্দেশিকা নাকি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের তৈরি করা। কুরুক্ষেত্রের শেষে যুধিষ্ঠির সখা কৃষ্ণের জন্মদিন সাড়ম্বরে উদযাপনের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ নাকি বলেছিলেন কেমন ভাবে তাঁর জন্ম উৎসব পালন করতে হবে। সেই প্রথা মেনেই নাকি জন্মাষ্টমী পালিত হয়ে আসছে।