কলকাতা

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরই আমরণ অনশন ও স্বাস্থ্য ধর্মঘট প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের

 আজ নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টার বৈঠকের পরই আমরণ অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। এমনকী আগামী কাল, মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ধর্মঘটের পথে তাঁরা হাঁটছেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে অনশন মঞ্চে ফিরে আসার পরই এই ঘোষণা করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। বলেন, সাধারণ জনগণ এবং অভয়ার বাবা-মায়ের প্রতি সম্মান রেখেই আমরা আমরণ অনশন প্রত্যাহার করলাম। তবে আগামী শনিবার আর জি করে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আজ ধর্মতলায় জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আর জি করে নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা। যদিও তাঁরা জনসমক্ষে আসেননি বা সাংবাদিকদের মুখোমুখিও হননি। এর আগে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ গত শনিবার জুনিয়র চিকিৎসকদের ই-মেল পাঠিয়েছিলেন। সেটিতে নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে আসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপর গতকাল অর্থাৎ, রবিবার জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে উত্তর দেওয়া হয়। বলা হয়, অনশন না তুলেই আজ, সোমবার বৈঠকে যোগ দিতে যাবেন তাঁরা। সেইমতো আজ নবান্ন সভাঘরে বিকেল ৫টার কিছু আগেই ১৭ জনের প্রতিনিধি দল এসে উপস্থিত হয়। আলোচনার বিষয়বস্তু পূর্ব নির্ধারিত সেই ১০ দফা দাবিই। প্রথমে ঠিক হয়েছিল এই বৈঠক হবে ৪৫ মিনিটের। যা শেষমেশ গড়ায় দু’ঘণ্টারও বেশি সময়ে। হল লাইভ স্ট্রিমিংও। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৭ জন জুনিয়র চিকিৎসক ছাড়াও ছিলেন ৫ মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি, বিশিষ্ট চিকিৎসকরা, রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপনিগম-সহ প্রমুখরা। বৈঠকের প্রথমে জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন দেবাশিস হালদার। পরে বক্তব্য রাখেন কিঞ্জল নন্দ, অনিকেত মাহাতো, হিমাদ্রী শেখর বেরারা। অভিযোগের সুরে অনিকেত বলেন, আমি আর জি করের পড়ুয়া। মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ নেই। একটা অপরাধমূলক প্রবণতা ক্যাম্পাসের ভিতরে কাজ করছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ অভিযোগ তোলেন, থ্রেট কালচারের পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতে যৌন হেনস্তাও চলে। অভিযোগ জানানোর মতো একটা জায়গা তৈরি হোক। কিঞ্জল বলেন, হাসপাতালে স্বাভাবিক পরিবেশ চাই। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। একাধিক দাবি দাওয়ার পাশাপাশি কলেজ লেভেল টাস্ক ফোর্স, রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য কী কী করণীয় এদিনের বৈঠকে সেগুলিও তুলে ধরা হয়।
জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে দীর্ঘ বক্তব্য রাখার পর মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, আজকের চিকিৎসক ভাই-বোনদের বক্তব্য নিয়ে এর আগেও কথা হয়েছে। আপনাদের একটা ই-মেল আইডি দেওয়া হয়েছে। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে সেখানে ই-মেল করতে পারেন। আপনাদের সঙ্গে গত শনিবার ফোনে কথা হয়েছিল। আমরা জানিয়েছিলাম মার্চ, ২০২৫-র মধ্যে কাউন্সিলের নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন হয়ে গেলেই কমিটিতে আপনাদের যে প্রতিনিধি থাকার কথা বলছেন সেটাও হয়ে যাবে। আমরা কিন্তু আপনাদের সমস্ত দাবিদাওয়া মতোই এগিয়েছি। পাশাপাশি রিক্রুটমেন্ট আমরাও চাইছি। যাতে কোনও শূন্যপদ না থাকে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি তোমাদের সঙ্গে একমত। কিছু অধ্যক্ষ তাঁদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেন না। কিছু অধ্যক্ষ রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়েও কাজ করেন। তবে মনে রাখবেন, চেয়ার সারাজীবন কিন্তু থাকে না। ডায়মন্ড হারবারের কথা আপনারা তুললেন। এইরকম ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। আপনাদের আন্দোলনের সময় উত্তরবঙ্গেই ঘটেছে। সেখানে একজন চিকিৎসককে চাপ দিয়ে পদত্যাগ করানো হয়। এটা কি থ্রেট কালচার নয়? আরজি করের প্রিন্সিপাল কেন ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করলেন? কী ভাবে নিজেই এই সিদ্ধান্ত নিলেন? রাজ্য সরকারকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না? এটা কি থ্রেট কালচার নয়?
সমস্যার সমাধান করতে গেলে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ করা উচিত নয়। তোমাদের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে বলেছেন, আমাদের হাসপাতালে না কী তুলো ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না! আমাদের কতটা মুখ পুড়ল বলো তো। কেউ আবার ইচ্ছে অনুযায়ী কাউন্সিল তৈরি করে নিচ্ছে। একটা আইন আছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে ওবিসিকে বাদ দিয়ে করা যায় না। তদন্তের ক্ষেত্রে আমাদের তরফ থেকে যা যা করার তা করা হয়েছে । তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টও পুরো বিষয়টির উপর নজর রেখেছে। শেষে আন্দোলনকারীদের অনশন তুলে নিতে বলেন মমতা। বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে অনশন তুলে, ধর্মঘট তুলে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে এস। আমিও কিন্তু ২৬ দিন অনশন করেছিলাম। কেউ আমার কোনও খোঁজ নেয়নি। আমি কিন্তু তোমাদের কাছে মুখ্যসচিব- স্বরাষ্ট্রসচিবকে পাঠিয়েছিলাম। ঘণ্টায় ঘণ্টায় তোমাদের খোঁজ নিয়েছি। তোমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক কর। আলোচনা করা আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নেব। এরপরই বৈঠক শেষ হয়ে যায়। যদিও প্রথমে অনশন তোলা হচ্ছে কি না তা নিয়ে কিছুই জানাননি জুনিয়র চিকিৎসকরা। তবে পরে অনশন মঞ্চে ফিরে তাঁরা আমরণ অনশন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন। জানান, আগামীকাল স্বাস্থ্য ধর্মঘটের পথেও হাঁটছেন না তাঁরা।