১ জানুয়ারি কাশীপুর উদ্যানবাটিতে কল্পতরু হয়েছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ। ১৮৮৬ সালের সেই দিনকে স্মরণ করে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে কল্পতরু উৎসব। বছরের প্রথমদিন কল্পতরু উৎসব পালিত হয়ে থাকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। এই বছরও তার অন্যথা হচ্ছে না। দক্ষিণেশ্বর মন্দির থেকে শুরু করে রাজ্যের সর্বত্র ভক্তরা পালন করছেন কল্পতরু দিবস। কাশীপুর উদ্যানবাটি, দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের পাশাপাশি, দিনটি পালিত হয় শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুরেও।
প্রসঙ্গত, ১৮৮৫ সালের শেষের দিক। ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শরীরটা বিশেষ ভাল যাচ্ছিল না। গলায় কষ্ট, সঙ্গে প্রচণ্ড ঠান্ডায় একেবারে কাবু হয়ে পড়েছিলেন ঠাকুর। চিকিৎসার জন্য ঠাকুরকে কাশীপুরে শ্রী গোপাল ঘোষের বাগান বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। বাড়িটি বেশ বড়, চারিদিকে গাছগাছালি, খোলামেলা। সেখানে থাকতে ঠাকুরের বেশ ভালোই লাগছিল। চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকারের কড়া নিষেধ, কথা বলা চলবে ঠাকুরের, তাহলেই বাড়বে গলার কষ্ট। সেই মতো ঠাকুরের শিষ্য নিরঞ্জন মহারাজ কড়া প্রহরায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমবেশি কথা বলেই যেতেই ঠাকুর। দেখতে দেখতে চলে এলে ১৮৮৬ সাল। বছরের প্রথম দিনটিতে ঠাকুরের শরীর কিছুটা ভালো। ঠাকুর কারও সঙ্গে দেখা করছেন না জেনেও তাঁর গৃহী ভক্তরা বহু দূরদূরান্ত এসেছেন তাঁর সঙ্গে সাক্ষৎ করতে। ওই বাড়িরই একতলায় থাকতেন শ্রী শ্রী মা সারদাদেবী। বেলার দিকে মা পুজোয় বসেছিলেন। হটাৎ দেখলেন সিঁড়ি দিয়ে যেন একটা ছায়ামূর্তি চলে গেলে। মা ভবলেন, হয়ত তাঁর ছেলেদের মধ্যেই কেউ বাগানের দিকে গেলে। তিনি ফের পুজোয় মন দিলেন। এদিকে ঠাকুরের একবার দর্শন পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা তাঁর গৃহী ভক্তরা সেদিন যা দেখলেন, তা তাঁদের সারাজীবনের পরমপ্রাপ্তি। দেখলেন নতুন ধুতি ও গরম পোশাক পরে রোগভোগে ক্লান্ত দেহ নিয়ে বাগানের পথ পেরিয়ে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসছেন ঠাকুর। সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল পড়ে গেল ভক্তদের মধ্যে। সকলেই ঠাকুরের কৃপা পাওয়ার জন্য দু’হাত জোর করে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকলেন। ঠাকুর তাঁর গৃহী ভক্তদের উদ্দেশে বললেন ‘তোমাদের চৈতন্য হোক’। কল্পতরু হলেন ঠাকুর।তারপর থেকে আজও ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনে উদযাপিত হয়ে চলেছে কল্পতরু উৎসব।