জেলা

২৭১ কোটির ৫৯ প্রকল্পের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, বললেন পাহাড়কে শান্ত রাখুন উন্নয়নের দায়িত্ব আমার

দার্জিলিং সহ পাহাড়ের জন্য কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শুক্রবার কার্শিয়াংয়ে আয়োজিত এক প্রশাসনিক সভা থেকে তিনি পাহাড়বাসীর জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন ৷ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন যে পাহাড়কে তিনি বরাবর শান্ত দেখতে চান ৷মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পাহাড়ের জন্য আমি আমার প্রাণ দিতে পারি । পাহাড়বাসী সুখে শান্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে থাক আমি শুধু তাই চাই । পাহাড়ের যা উন্নয়ন করার আমি করব । অনেকে এসে বড় বড় কথা বলে । আর পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ নষ্ট করে । তারা কিছু করে না । এ দিন কার্শিয়াংয়ের মন্টেভিট স্কুল ময়দানে সরকারি মঞ্চ থেকে পাহাড় ও পাহাড়বাসীর জন্য শতাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি । পাশাপাশি জিটিএ র ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন তিনি । মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে পাহাড়বাসী । সরকারি সভার মঞ্চ থেকে সেভাবে বিরোধীদের কোনও আক্রমণ করেননি তিনি । বরং পাহাড় ও পাহাড়বাসীর মন জয় করতে উন্নয়নকেই হাতিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ভরসা রাখতে বললেন জিটিএ চিফ এগজিকিউটিভ অনিত থাপা, শান্তা ছেত্রী, কালিম্পংয়ের বিধায়ক রুদেন সাদা লেপচা ও তাঁদের টিমের উপর । মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, আমি চাই পাহাড় হাসুক । শান্তিতে থাকুক । আমার দ্বারা যা সম্ভব সব করব । খালি আপনারা সবাই শান্তি ও খুশিতে থাকবেন । পাহাড়ের যুবক যুবতীরা উন্নতি করুক । পাহাড়ে শিক্ষার উন্নতি হোক । এই চাই । দিল্লি কোনও কাজ করে না । আমি করি । আমি করে দেখাই । এ দিন মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং ম্যালে মহাত্মা গান্ধি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পূর্ণাবয়ব মূর্তি উন্মোচন করেন । দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা মিলিয়ে ২৭১ কোটি টাকার ৫৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন । যার মধ্যে দার্জিলিং জেলায় ১৮০ কোটি টাকার ২৪টি ও কালিম্পং জেলায় ৯০ কোটি টাকার ৩৫টি প্রকল্প রয়েছে । প্রায় ৩৩ হাজার পাহাড়বাসী রাজ্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পেয়েছে । এছাড়াও সম্প্রতি তিস্তার হড়পা বানের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৫০ টি পরিবারকে ৭০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী । এ দিনের মঞ্চ থেকে দার্জিলিং জেলায় ২৩ হাজার এবং কালিম্পং জেলায় ১২০০ পরিবারকে পাট্টা প্রদান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পাশাপাশি এঁদের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, চা বাগানে বসবাসকারী শ্রমিকদের বাড়ির জন্য ইতিমধ্যে সার্ভের কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার । খুব দ্রুত তাঁদেরকে সেই জমির পাট্টাও প্রদান করা হবে । শিল্প ও হাসপাতালে বাণিজ্যের দিক থেকেও এ দিন বড় ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী । জিটিএ এলাকায় ২৩টি ক্লাস্টার ও ৪৩টি গ্রামীণ হাট তৈরি করা হয়েছে । কালিম্পং জেলায় ১৪ একর এবং পাঁচ একর জমিতে দুটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব তৈরি করা হবে । যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় আইটি সেক্টর তৈরি করবে রাজ্য সরকার ।এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জিটিএ পরিচালনায় আরও সুবিধা করতে এবং জিটিএর ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয় ঘোষণা করেন । মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাহাড়ে উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার জিটিএকে আরও ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে । জিটিএতে কর্মরত কর্মীদের জন্য মৃত্যু ও পেনশন স্কিম চালু করার কথা ঘোষণা করেন । তাতে জিটিএ থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা ২০ লক্ষ টাকা গ্রাচুরিটি ও এনক্যাশমেন্ট বেনিফিট পাবেন । ২০১১ সালে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের সময় থেকে নিয়োগ হওয়া কর্মীদের ২০০৯-এর পরিবর্তে ২০১৯ সালের পে রোলের আওতায় নিয়ে আসার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী । শিক্ষার উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জিটিএ এলাকার জন্য রিজিওনাল স্কুল সার্ভিস কমিশন চালু করার কথা ঘোষণা করেন । ২০০৩ সাল থেকে ওই কমিশনটি বন্ধ ছিল । এই কমিশনটি পুনরায় চালু হলে জিটিএ এলাকার ১৪৬টি আপার প্রাইমারি ও উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫৯০ জন শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব হবে । এছাড়াও দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় জেলা স্কুল বোর্ড তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । একটি অ্যাড হক কমিটির মাধ্যমে ওই স্কুল বোর্ড তৈরি করা হবে । ওই কমিটি তৈরি হলে জিটিএ এলাকায় নতুন করে এক হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা যাবে । এছাড়াও দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় তিন লক্ষ চা শ্রমিককে চা সুন্দরী প্রকল্পের আওতায় পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । পাশাপাশি দার্জিলিং জেলায় ২ লক্ষ ৩২ হাজার বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে । তার মধ্যে ৮৩ হাজার বাড়িতে ইতিমধ্যে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে । একইভাবে কালিম্পং জেলায় ৬৫ হাজার বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে । তার মধ্যে ২২ হাজার বাড়িতে ইতিমধ্যে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে । বাকি বাড়িতেও ২০২৪ সালের মধ্যে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । সরকারি ও সামাজিক প্রকল্পের সুবিধার জন্য ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুয়ারে সরকার ক্যাম্প বসার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী । সিনকোনাতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরি করার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী ।