হিন্দু ধর্মে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। তাই এই পূর্ণিমাকে শারদ পূর্ণিমা বা কোজাগরী পূর্ণিমাও বলা হয় । ‘কোজাগরী শব্দটির উৎপত্তি ‘কো জাগতী’ থেকে। এর আক্ষরিক অর্থ ‘কে জেগে আছো?’ প্রচলিত আছে, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণ করেন এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে আশীর্বাদ দেন। কিন্তু যার বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে, তাঁর বাড়িতে লক্ষ্মী প্রবেশ করেন না ও সেখান থেকে ফিরে চলে যান। তাই লক্ষ্মী পুজোর রাতে জেগে থাকার রীতি প্রচলিত আছে। যে ভক্ত রাত জেগে আরাধনা করেন, তাঁকে দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করে যান তিনি ৷ তাঁর ঘর ভরে ওঠে ধনসম্পত্তি ও সমৃদ্ধিতে। হিন্দু পুরাণ মতেও, আশ্বিনের এই পূর্ণিমার রাতে দেবী লক্ষ্মী এসে ঘরে ঘরে খোঁজ নিয়ে যান, কে জেগে আছে। এই রাতে যে ব্যক্তি জেগে দেবীর আরাধনা করেন, তার ঘরেই প্রবেশ করেন দেবী লক্ষী। এদিন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করে থাকেন। কথিত আছে, সৌন্দর্য ও সম্পদের দেবী চঞ্চলা। তাই তাঁকে ঘরে আনতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয় আপামর বাঙালিকে। লক্ষ্মীর ঝাঁপি যাতে পরিপূর্ণ থাকে, তারই আরাধনা করা হয়। বাংলার এই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে কৃষিকাজ ও সংস্কৃতি। তাই তার উপকরণ ও আচার-অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে কৃষিকাজকে ঘিরেই। তবে এ বছর বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে পুজো করা নিয়ে৷ জানুন এবছরের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর নির্ঘণ্ট।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো ২০২৪
আগামী ১৬ অক্টোবর, বুধবার পড়েছে এবছরের কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর পূর্ণিমা তিথি
১৬ অক্টোবর, সন্ধ্যা ৭টা ২৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড থেকে ১৭ অক্টোবর বিকেল ৫টা ১৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড অবধি থাকবে পূর্ণিমা তিথি।
লক্ষ্মী নিজের ভক্তদের ধন-সম্পদ ও মনোস্কামনা পূরণের আশীর্বাদ দেন এবং অলক্ষ্মী বিনাশ করেন। ভাগবত্ পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও ব্রহ্মা পুরাণ অনুযায়ী, ঋষি ভৃগুর স্ত্রী খ্যাতির গর্ভে লক্ষ্মীর জন্ম। অন্য দিকে শতপথ ব্রাহ্মণে ব্রহ্মা থেকে লক্ষ্মীর উৎপত্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। আর্দ্রা, গজশুণ্ডাগ্রবতী, পুষ্টিরূপা, পিঙ্গলবর্ণা, পদ্মমালিনী, চন্দ্রাভা, হিরণ্ময়ী, ষষ্টিহস্তা, সুবর্ণা, হেমমালিনী, সূর্যাভা ইত্যাদি নানা নামে লক্ষ্মীকে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। মাটির মূর্তি, সরা ইত্যাদি নানা রূপে লক্ষ্মী পূজিত হন বাংলার ঘরে ঘরে। বাঙালি হিন্দু ঘরে লক্ষ্মী পুজো এক চিরন্তন উৎসব। অনেকেই সারা বছর প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করে থাকেন। এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলীতে লক্ষ্মীর পুজো হয়। খারিফ শস্য ও রবি শস্য যেই সময় হয়, ঠিক সেই সময় বাঙালি মেতে ওঠে লক্ষ্মীর পুজোয়। তবে পুজোর উপাচার পরিবর্তন হয় মাস ভেদে।
কুবেরের পুজো
আর্থিক বৃদ্ধি ঘটাতে, অর্থ সংক্রান্ত জটিলতা দূর করে কিংবা সম্পত্তি বিস্তারে অধিকাংশই মা লক্ষ্মীর সঙ্গে ধন দেবতা কুবেরের পুজো করে থাকেন। কিন্তু, জানেন কি মা লক্ষ্মীর সঙ্গে কেন পুজিত হন ভগবান কুবের? রইল সেই পৌরাণিক কাহিনি। শাস্ত্র মতে, মা লক্ষ্মী ধন সম্পদ প্রদান করেন আর কুবের দেবতা রক্ষা করেন সেই সম্পত্তি। সে কারণে মা লক্ষ্মীর পুজোর পর কুবের দেবতার পুজো হয়ে থাকে। কুবের দেবতার পুজো না করলে মা লক্ষ্মীর পুজো অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কোজাগরী পূর্ণিমা তিথি ও দীপাবলি অমাবস্যায় ভগবতী মা লক্ষ্মীর পুজোর পর কুবের দেবতার পুজিত হন। হিন্দু ধর্ম অনুসারে কুবের হলেন ধন সম্পদ্রে দেবতা ও যক্ষ নামক উপদেবতাদের রাজা। কুবের পৃথিবীর রক্ষাকর্তা হিসেবে পুজিত হন। তিনি ধনাধিপতি ও ধনীতম দেবতার মর্যাদা লাভ করেছিলেন। তাঁকে জগতের কোষাধ্যক্ষ রূপে পুজো করা হয়। কথিত আছে, বেঙ্কটেশ্বর পদ্মাবতীকে বিবাহ করার জন্য কুবেরের থেকে কিছু ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। এই কথা স্মরণ করে ভক্তেরা তিরুপতি মন্দিরে বেঙ্কটেশ্বরের হুন্ডি-তে দান করেন। যাতে বেঙ্কটেশ্বর কুবেরের ঋণ শোধ করতে পারে। হিন্দু ধর্ম ছাড়া, বৌদ্ধ ও জৈন পুরাণে কুবেরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর উপকরণ
🛑 ধন সম্পদের দেবী মা লক্ষ্মী হওয়ায় লক্ষ্মী পুজোয় প্রয়োজন হয় ধানের শিস। ধানের শিস ছাড়া কোনও ভাবেই লক্ষ্মীপুজো সম্ভব নয়।
🛑 লক্ষ্মী দেবীকে তুষ্ট করতে লক্ষ্মীর শাড়ি, নারায়ণের ধুতি, লোহা, শঙ্খ, কড়ি, সিঁদুর, বালি, কাঠ, খোড়কে, ঘি পরিমানমতো, হোমের জন্য ২৮টি বেলপাতা লাগে।
🛑 লক্ষ্মী পুজোর দিন বাড়ির দোরে দোরে মা লক্ষ্মীর পায়ের আলপনা দেওয়া আবশ্যিক। আলপনায় আঁকা হয় মা লক্ষ্মীর পদ চিহ্ন। লক্ষ্মী দেবীর ১০৮ নাম জপ করা শুভ বলে মনে করা হয় এবং লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়া আবশ্যিক।
🛑 এছাড়াও ধূপধানি, পঞ্চ প্রদীপ, প্রদীপ, কর্পূর, ধূপকাঠি, ধুনুচি, বেল পাতা, দূর্বা, ১টি ঘটাচ্ছাদন গামছা, ১টি কুণ্ডহাঁড়ি, ১টি তেকাঠি, ১টি দর্পণ, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগব্য, পঞ্চরত্ন, ১টি সশিস ডাব, ৪টি তীর, পুষ্প, দুর্বা ইত্যাদি প্রয়োজন হয় লক্ষ্মী পুজোয়।
🛑 ঐশ্বর্যের দেবী হিসেবে লক্ষ্মীর পুজোয় ধান ছাড়াও টাকার কয়েন, পান, কড়ি, হলুদ, ঘট, একসরা চাল, আতপ চাল, দই, মধু, ঘি, চিনি, চন্দ্রমালা, পূর্ণপাত্র ও হরিতকী প্রয়োজন হয়।
🛑 দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করার সময় কোনও কাঁসর, ঘণ্টা বাজাতে নেই। মন্ত্রপাঠের মাধ্যমেই দেবীর আরাধনা করতে হয়। দেবীর আরাধনা করার সময় সাদা ও কালো বস্ত্রের ব্যবহার করতে নেই।
বাড়িতে পুরোহিত ছাড়াই কী ভাবে লক্ষ্মীপুজো করবেন জেনে নিন –
১. প্রথমে চারিদিকে এবং যে বা যাঁরা পুজো করবেন তাঁদের মাথায় গঙ্গা জল ছিটিয়ে নিন।
২. তার পর নারায়ণকে স্মরণ করে পুজো শুরু করুন।
৩. পুজোর স্থানে একটি তামার পাত্রে জল রাখুন। সূর্যকে এই জল অর্পণ করতে হবে। সূর্যকে স্মরণ করে তামার পাত্রে জল ঢালতে ঢালতেই সূর্যকে স্মরণ করুন।
৪. মাটির একটি গোল ডেলাকে সমান করে তার ওপর ঘট বসান। ঘটের সামনে পঞ্চশস্য ছড়িয়ে দিতে হবে।
৫. ঘটে সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকুন।
৬. এবার ঘটে গঙ্গা জল ভরে তার ওপর আম্রপল্লব রাখুন। আম পাতার ওপর তেল ও সিঁদুরের ফোঁটা দিয়ে দেবেন। পাতার ওপর হরিতকী, ফুল, দূর্বা রাখুন।
৭. ঘট স্থাপনের পর ধ্যান মন্ত্রে লক্ষ্মীকে প্রণাম করুন। মন্ত্রটি হল- ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ। পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।। গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কারভূষি তাম্। রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।। লক্ষ্মীকে স্মরণ করে প্রণাম করুন।
৮. এবার লক্ষ্মীকে আহ্বান করুন। হাত জোর করে লক্ষ্মীকে স্মরণ করে বলুন, ‘এসো মা আমার গৃহে প্রবেশ করো। আমার গৃহে অধিষ্ঠান করো। আমার এই সামান্য আয়োজন, নৈবেদ্য গ্রহণ করো মা।’
৯. এর পর লক্ষ্মীর পা ধুয়ে দিতে হবে। লক্ষ্মীর পায়ে ও আলপনা দিয়ে আঁকা পায়ে জলের ছিটে দিন।
১০. এবার ঘটে আতপ চাল, দূর্বা, ফুল ও চন্দন দিন। তার পর এক এক করে লক্ষ্মীকে সব অর্পণ করুন।
১১. ফল, মিষ্টি ইত্যাদি নৈবেদ্য দিন। ধূপ ধুনো দেখান। ১২. অর্পণ করার পর এবার পুষ্পাঞ্জলি দিতে হবে। হাতে ফুল নিয়ে পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র বলে তিন বার অঞ্জলি দিতে হবে। মন্ত্রটি হল- নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে। যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।
১৩. তার পর লক্ষ্মীর বাহনকে ফুল দিন এবং নারায়নকে স্মরণ করে ঘটে ফুল দিতে হবে। এবার ইন্দ্র ও কুবেরকে স্মরণ করে ঘটে ফুল দিন। তারপর লক্ষ্মীকে প্রণাম করুন।
১৪. হাত জোর করে লক্ষ্মীকে স্মরণ করে বলুন, ‘এসো মা আমার গৃহে প্রবেশ করো। আমার গৃহে অধিষ্ঠান করো। আমার এই সামান্য আয়োজন, নৈবেদ্য গ্রহণ করো মা।’
১৫. অবশেষে লক্ষ্মী পাঁচালী পড়ে পুজো সম্পন্ন করুন।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো সাধারণত সন্ধে বেলা করা হয়। তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে ৯টার মধ্যে করে নেওয়া ভালো।
- যে বিষয়গুলিলক্ষ্মী পুজোয় কাঁসর, ঘণ্টা বাঁজাবেন না। এতে লক্ষ্মী অসন্তুষ্ট হন। শুধু শাঁখ বাঁজাবেন।
- লক্ষ্মীর ঘটে তুলসী পাতা দেবেন না।
- লোহার বাসন ব্যবহার করবেন না।
লক্ষ্মী পুজোর মন্ত্র –
🔵 ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।। নমঃ শুচিঃ । নমঃ শুচিঃ। নমঃ শুচিঃ।
🔵 এতৎ পাদ্যং ও শ্রীং লক্ষ্মীদেবৈ নমঃ।
🔵 এতে গন্ধ পুষ্পে গণেশায় নমঃ নমাহা ।
🔵 ওঁ নমঃ ভগবতে বাসুদেবায় নমঃ।
🔵 এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ পঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ ।
🔵 এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ কুবের দেবেভ্যো নমঃ ।
🔵 এস সচন্দন গন্ধপুষ্পং শ্রীং লক্ষ্মীদেবৈ নমঃ ।
🛑কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আহ্বান মন্ত্র-
এস মা লক্ষ্মী, কমল বরণী, কমলালতিকা দেবী কমলিনী-
কমল আসনে, বিরাজ কমলা, কমলময়ী ফসলবাসিনী।।
কমল বসন, কমল ভূষণ, কমনীয় কান্তি অতি বিমোহন।
কোমল করে, শোভিছে কমল, ধাল সিঁদুরে শোভে দেখি শিরে।
কোমল কন্ঠে কমল হারে, কোমল বদন দেখি যে সুন্দরে।।
কমল চরণে কমল নূপুর, কমল অলক্ত মরি কি সুন্দর।
দীন মধুসূদনের সন্তাপ হর তুমি নারায়ণী শান্তিপ্রদায়িনী।
🛑কোজাগরী লক্ষ্মীর স্তোত্র –
লক্ষ্মীস্তং সর্বদেবানাং যথাসম্ভব নিত্যশঃ।
স্থিরাভাব তথা দেবী মম জন্মনি জন্মনি।।
বন্দে বিষ্ণু প্রিয়াং দেবী দারিদ্র্য দুঃখনাশিনী।
ক্ষীরোদ সম্ভবাং দেবীং বিষ্ণুবক্ষ বিলাসিনীঃ।।
🛑পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র –
নমস্তে সর্বদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে।
যা গতিস্তং প্রপন্নানাং সা মে ভূয়াত্বদর্চবাৎ।।
🛑প্রণাম মন্ত্র
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী..
🛑কোজাগরী লক্ষ্মী স্তোত্রম
ত্রৈলোক্য পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে।
যথাস্তং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভবময়ি স্থিরা।।
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতি হরিপ্রিয়া।
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পদ সৃষ্টি শ্রীপদ্মধারিণী।।
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং সম্পূজ্য যঃ পঠেত।
স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেৎ তস্য পুত্রদারারদিভিংসহ।।
🛑 হাত জোর করে লক্ষ্মীকে স্মরণ করে বলুন, ‘এসো মা আমার গৃহে প্রবেশ করো। আমার গৃহে অধিষ্ঠান করো। আমার এই সামান্য আয়োজন, নৈবেদ্য গ্রহণ করো মা।’