কলকাতা

উঠতি মডেল ও নায়িকাদের নিয়ে রাতভর রেভ পার্টি কুন্তলের, যোগ মাদক কারবারির সঙ্গেও, দাবি ইডির

রীতিমতো রঙিন জীবন ছিল নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষের। দু’হাতে টাকা ওড়াতেন। ইএম বাইপাস সংলগ্ন এক অভিজাত আবাসনে তাঁর বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে মাঝেমধ্যেই বসত ‘রেভ পার্টি’র আসর। নায়ক-নায়িকা থেকে উঠতি মডেল, কে আসতেন না সেখানে! রাতভর চলত হুল্লোড় ও নিষিদ্ধ মাদক সেবন। সেই সূত্রেই ওই পার্টিতে নিয়মিত দেখা যেত বড় মাপের দুই ড্রাগ কারবারিকে। তারা সেখানে নিষিদ্ধ মাদক সরবরাহ করত। এমনই অভিযোগ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এবার ওই দুই মাদক কারবারির সঙ্গে কুন্তল ঘোষের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। অভিযুক্ত কুন্তল মাদক কারবারেও কোনওভাবে জড়িত কি না, এখন তার উত্তর খুঁজছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। ইতিমধ্যেই কুন্তলের সঙ্গে টালিগঞ্জের নায়ক-নায়িকা ও মডেলদের যোগ মিলেছে। যুবনেতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সন্তানদের জন্মদিনের পার্টিতে হাজির থেকেছেন তাঁরা। নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় কাউকে গাড়ি বা ফ্ল্যাট উপহার দেওয়া হয়েছে। কুন্তলের ব্যাঙ্কের নথিতে অভিনয় জগতের গ্ল্যামার গার্লদের সঙ্গে টাকা লেনদেনের হদিশ পেয়েছেন ইডি অফিসাররা। কিন্তু টলিপাড়ার তারকাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ইতিবৃত্ত এখানেই শেষ নয়। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, নায়িকা-মডেলদের নিয়ে আমোদ-প্রমোদের জন্য মাঝেমধ্যেই হুল্লোড় পার্টির আয়োজন করা হতো বাইপাসের পার্শ্ববর্তী ওই ফ্ল্যাটে। পার্টির রাতে অভিজাত ওই আবাসনে বিলাসবহুল গাড়ির লাইন পড়ে যেত। খানাপিনা আর নাচাগানার স্ফূর্তির সঙ্গে চলত কোকেন বা অন্য মাদক সেবন। পুরো আসরটি পরিচালনা করতেন কুন্তল। ওই ফ্ল্যাটে রেভ

পার্টির কথা অন্য আবাসিকদেরও অজানা ছিল না। কিন্তু মুখ খোলার সাহস দেখাতেন না তাঁরা।  তদন্তকারীদের কাছে অবশ্য সবথেকে চাঞ্চল্যকর বিষয়—ওই রেভ পার্টিতে দুই মাদক কারবারির উপস্থিতি। ইডির কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, তাদের সঙ্গে যুবনেতার পরিচয় একটি অভিজাত ক্লাবে। প্রথম প্রথম দু’জনের কাছ থেকে অল্প পরিমাণে নিষিদ্ধ মাদক কিনতেন কুন্তল। তা সেবন করতেন ক্লাবে আসা সঙ্গিনীদের সঙ্গে। পরে রেভ পার্টিতেও যাওয়া শুরু করেন তিনি। আর সেখান থেকে ‘থিম’ ধার করে নিজের ফ্ল্যাটে আসর বসানোর শুরু। অফিসাররা বলছেন, কুন্তলের বিভিন্ন সিনেমা ও মিউজিক ভিডিও কাজ করেছেন বিভিন্ন নায়ক-নায়িকা। তাঁদের দিয়ে পুজো বা অন্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধনও করিয়েছেন যুবনেতা। বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন করাতে নিয়ে গিয়েছেন বহু মডেলকে। মোটা টাকা দিয়েছেন প্রত্যেককে। নিজের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা গ্ল্যামার জগতের ওই তারকাদেরই নিজের ফ্ল্যাটের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানাতেন যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির থেকেছেন নায়ক-নায়িকা-মডেলরা। সেখানে অর্ডার অনুযায়ী সরবরাহ করা হতো নিষিদ্ধ মাদক। ইডি বলছে, মাদক কেনার জন্যই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা পেমেন্ট করতেন যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়া যুবনেতার ঘনিষ্ঠরা ওই মাদক কারবারিদের সম্পর্কে তদন্তকারীদের তথ্য দিয়েছেন। মাদক ব্যবসায় জড়িতদের মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার বিষয়টিও তাই এখন উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় এজেন্সিরা।