আন্দোলনের তখন কেটে গিয়েছে প্রায় ২০ ঘণ্টা। আকাশে চড়া রোদ। তার মধ্যে কেটেছে নির্ঘুম রাত। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়েছে ফিয়ার্স লেন চত্বর। সোমবার রাত থেকে লালবাজারের সামনে ফিয়ার্স লেন চত্বরে টানা অবস্থান বিক্ষোভে বসেছিলেন রাজ্যের প্রায় ২৬টি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা। আরজি করের ঘটনার পর বা গত কয়েক বছরে একাধিক আন্দোলন দেখেছে পুলিশ। প্রতিবাদের ভাষা হয়তো এতটা জোরালো হয়ে ওঠেনি কিন্তু প্রত্যেক আন্দোলনেই পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়েছে আন্দোলনকারীদের। আর সেখানে দেখা গিয়েছে জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের ছড়াছড়ি। ব্যারিকেড ভাঙা, গার্ডরেল টপকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ইট ছোঁড়াছুঁড়ির দৃশ্য। কিন্তু চিকিৎসকদের লালবাজার অভিযান যেন নতুন করে চেনাল মনুষ্যত্বকে। যেন সমাজকে বার্তা দিল যে গার্ডরেল না ভেঙে অশান্তির বার্তা না ছড়িয়েও জয় হওয়া যায় আন্দোলনে। চিকিৎসকদের ২২ ঘণ্টার অবস্থানে বারবার দেখা গিয়েছে এরকম দৃশ্য। চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন অ্যাডিশনাল সিপি সন্তোষ পাণ্ডে, জয়েন্ট সিপি ট্রাফিক রূপেশ কুমার। অত্যন্ত শান্ত ভাবে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা। চিকিৎসকরাও বারবার জানিয়েছেন, তাঁরা কোনোরকম অশান্তি চান না, শুধু কথা বলতে চান কমিশনারের সঙ্গে। চিকিৎসকদের পাশাপাশি টানা ডিউটি করতে হয়েছে পুলিশকর্মীদেরও। সোমবার রাতে দেখা গেল পুলিশকর্মীদের বিস্কুট বিলিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকরাই। কোনো ঢাল, লাঠিচার্জ নেই। নিশ্চিন্তে ব্যারিকেড টপকে কর্মরত পুলিশদের খাবার দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার সকালে আবার ফিয়ার্স লেনে দেখা গেল উল্টো দৃশ্য। চড়া রোদের মধ্যে ত্রিপল খাটিয়ে অবস্থান চলছে তখন। জারি রয়েছে স্লোগানও। তার মধ্যেই কয়েক পেটি জলের বোতল, জুস নিয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের মাঝে পৌঁছে গেলেন অ্যাডিশনাল সিপি। বিলিয়ে দিলেন পড়ুয়াদের মধ্যে। সাম্প্রতিক কালে তো দূরের কথা বাম আমলেও দেখা মেলেনি এমন পুলিশের। যারা কিনা আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দিচ্ছেন খাবার, জল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান উঠে গেলেও একবারের জন্যও অশান্ত হল না পরিস্থিতি। লাগল না কোনোরকম রাজনৈতিক রং। নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে্ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিলেন চিকিৎসকরা।