দুয়ারে সরকারের পরে এবার ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’। একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে নয়া আন্দোলনের ঘোষণার পরদিনই মঙ্গলবার নবান্নে নয়া সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ, কেন্দ্র ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া আটকে রেখেছে । তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত ৯৩টিরও বেশি জনমুখী প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে ৷ এই বার্তা দিয়েই এ দিন এই নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী । মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “কেন্দ্র বারবার আত্মনির্ভরতার কথা বলে । কিন্তু বাস্তবে রাজ্যকেই সবকিছু করতে হচ্ছে । আমরা কোনও কিছুতে পিছিয়ে নেই । এবার আমরা পথে নামব মানুষের ছোট ছোট সমস্যার সমাধানে ৷” নতুন এই কর্মসূচির নাম ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “অনেক সময় দেখা যায়, একটা জলের কল বসানো বা একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো দরকার – এরকম ছোট ছোট সমস্যা থেকে যায় । এই প্রকল্প সেই সমস্যাগুলোকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে ।” এই কর্মসূচির আওতায় রাজ্যের প্রায় আশি হাজার বুথ এলাকায় মাঠে নামবেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা । তিনটি বুথ মিলিয়ে এক একটি ইউনিট গঠন করা হবে । প্রতি ইউনিটে একদিন করে অবস্থান করবেন সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরা । একাধিক দফতরের প্রতিনিধিরা থাকবেন সেই শিবিরে । স্থায়ীভাবে বসার জায়গা তৈরি করা হবে, যেখানে স্থানীয় মানুষ তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন । প্রতিটি বুথের জন্য বরাদ্দ ১০ লক্ষ টাকা, অর্থাৎ মোট খরচ আট হাজার কোটি টাকারও বেশি । মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, এই প্রকল্প শুরু হবে আগামী ২ অগস্ট থেকে এবং প্রায় দু’মাস ধরে এটি চলবে । রাজ্যজুড়ে একটি সমন্বয়কারী টাস্ক ফোর্স গঠন করা হচ্ছে, যার নেতৃত্বে থাকবেন মুখ্যসচিব । জেলাস্তরে ও রাজ্যস্তরে পৃথক পৃথক টাস্ক ফোর্স তৈরি হবে । কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য পুলিশের সহায়তাও নেওয়া হবে । মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, “দুয়ারে সরকার যেমন মানুষের দরজায় পৌঁছেছিল, তেমনই এবার সরকার নিজে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মানুষের মুশকিলের সমাধান করবে । গোটা দেশে এই ধরনের কর্মসূচি এই প্রথম । বাংলাই পথ দেখাবে ।” তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই এই কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি শুরু হয়েছে । প্রতিটি বুথকে চিহ্নিত করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনকে । শিবিরে মূলত পঞ্চায়েত, সেচ, বিদ্যুৎ, পূর্ত, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিরা থাকবেন । রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে গ্রামীণ এলাকার মানুষের সঙ্গে আরও নিবিড় সংযোগ গড়ে তুলতেই এই ধরনের জনমুখী প্রকল্পের ওপর জোর দিচ্ছে তৃণমূল । তবে সরকারি সূত্রের দাবি, এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য, পাড়ায় পাড়ায় প্রশাসনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং সরাসরি মানুষের সমস্যার মাটিতে দাঁড়িয়ে তার সমাধান করা ।”


