” বিপদের মুখে গণতন্ত্র! মানি পাওয়ার, মাসল পাওয়ারের বিরুদ্ধে লড়েছেন মানুষ, খেলা শেষ হয়নি, বিজেপিকে ভারত ছাড়া না করা পর্যন্ত গোটা দেশে খেলা হবে, আমি দিল্লি যাচ্ছি , বিরোধীরা ফ্রন্ট গড়ুন “
কলকাতাঃ আজ একুশে জুলাই-এর শহিদ দিবসে তৃণমূল নেত্রীর বার্তা শুনতে গোটা দেশ মুখিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন দেশের বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে নেতৃত্ব দেবেন তিনিই। তার বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ সবটা জুড়েই রইল বিজেপি বিরোধী ফ্রন্ট গড়ার ডাক। কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন ভোটকুশলি প্রশান্ত কিশোর ও মুকুল রায় কলকাতায় রয়েছেন পিকে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে উদ্বোধন করে নতুন রূপে যাত্রা জাগোবাংলা’র। দিল্লিতে কন্সটিউট হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শুনতে আসা শরদ পাওয়ার, পি চিদম্বরম, সুপ্রিয়া শুলে, সঞ্জয় সিং সহ সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন তৃণমূল নেত্রী। এরপরই তিনি ত্রিপুরায় তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতার প্রতিবাদ জানালেন। তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্বে বিজেপি নেতারা, তারা এজেন্সি দিয়ে ভুল বার্তা দিচ্ছেন। কোনও ভোটপরবর্তী হিংসা হয়নি রাজ্যে। তিনি ব লেন, আমাদের ফোন ভোটের আগে ট্যাপ করা হয়েছে পেগাসাস দিয়ে। গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভকে ধ্বংস করছে বিজেপি। পেগাসাস ঢুকিয়ে দিয়ে ক্ষতি করছে। মিডিয়া থেকে কমিশন সব কিনে নিয়েছে। গণতন্ত্রের বদলে গোয়েন্দাগিরি চলছে। গরিব মানুষকে টাকা দেওয়ার বদলে আঁড়ি পাততে টাকা খরচ করা হচ্ছে। আপনার আমার সবার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে।”মমতার কথায়, গণতন্ত্রের বদলে দেশে গোয়েন্দাগিরি চলছে। সকলের মুখ বন্ধ।” তৃণমূল নেত্রীর যুক্তি এটাই হাল আলের সবচেয়ে বড় স্ক্যান্ডেল।পেগাসাস কাণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না থাকলেও রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোরের নাম। মমতা স্পষ্টই বললেন, তিনি তাঁদের সঙ্গে অহরহ যোগাযোগ রাখেন। কাজেই তিনিও একরকম ট্যাপড। মমতার কথায়, “শরদ পাওয়ার, চিদম্বরম কাউকে ছাড়েনি। আমি পিকে, অভিষেক সাথে ভোটের আগে মিটিং করেছিলাম। তার অডিও নিয়ে নিয়েছিল।” আর এই কারণেই মমতার প্রতীকী প্রতিবাদ। তৃণমূল নেত্রী এদিন বলেন, “আমি কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারি না। কারণ ফোন ট্যাপ হচ্ছে। তাই ফোনই প্লাস্টার করে দিয়েছি। তবে ভারত সরকারকে প্লাস্টার করতে দেবো না। ওরা থাকলে দেশ বরবাদ হয়ে যাবে। এমনকি নিজেদের মন্ত্রী অফিসারদেরও ফোন ট্যাপ করে নিয়েছে। এমনকি বহু বিচারপতির ফোন ও ট্যাপ হয়েছে। ওরা আমাদের গণতান্ত্রিক স্তম্ভটাকেই ধ্বংস করতে চাইছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা বিচার ব্যবস্থা সংবাদ মাধ্যম সব কিছু ধ্বংস করতে চাইছে।” তিনি এও বলেন, নিজেদের স্বার্থ ভুলে একজোট হয়ে দিল্লির এই বিজেপি সরকারকে সরাতে হবে। দ্বিতীয় ঢেউ আটকানো যেত, কিন্তু তখন আমাদের রাজ্যে বিধানসভার ভোটে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করতে গিয়ে সব ধ্বংস করে দিয়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম দু’মাসে ৪৭ বার বেড়েছে। এত টাকা যাচ্ছে কোথায়? কেন মানুষ টিকা পাচ্ছেন না। পিএম কেয়ার্স কোথায় যাচ্ছে? গণতন্ত্রের বদলে দেশজুড়ে স্পাইগিরি চালাচ্ছে বিজেপি। আজ স্বাধীনতা সঙ্কটে। রবীন্দ্রনাথকে সিলেবাস থেকে বার করে দিয়েছে। বিজেপি একটি হাই লোডেড ভাইরাস পার্টি। করোনার চেয়েও বিপজ্জনক ভাইরাস রয়েছে বিজেপি-তে। পেগাসাস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আপনারা দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচান। আপনাদের বিচারপতিদের ফোনও ট্যাপ করা হয়েছে, তাই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে পেগাসাস নিয়ে তদন্ত করুক।’ হ্যাকারদের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য নিজের ফোনের ক্যামেরায় টেপ লাগিয়েছেন, বক্তৃতা মঞ্চ থেকে নিজেই ফোন উঁচিয়ে তা দেখালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মোদি সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা শুধু বিভাজন চান, অশান্তি চান। এটা রবীন্দ্রনাথের মাটি। আমরা তাঁর আদর্শে বেঁচে রয়েছি। কাউকে ভয় পাই না। ভারতের মাটি বিবেকানন্দ, নেহরু, রাজেন্দ্র প্রসাদের। এখানে সংখ্যালঘু, কৃষক সকলের সমান অধিকার। কিন্তু আপনারা শুধু নিজেদের দল নিয়ে ভাবেন। ভারতে উন্নয়ন প্রয়োজন, মজবুত অর্থনীতি চাই, মহিলাদের নিরাপত্তা চাই, সকলের সমান অধিকার চাই। কিন্তু আপনারা শুধু বাকিদের হেনস্থা করতে চান। আমাদের ব্যতিব্যস্ত না করে সকলকে বিনামূল্যে রেশন দিন। বিনামূল্যে রেশন দেব বলেছিলাম, করে দেখিয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর ও বলেন, আমাদের কন্যাশ্রী রাষ্ট্রপুঞ্জে পুরস্কৃত হয়েছে। কৃষকদের আমরা ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। কৃষকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিই আমরা। জমির মিউটেশন আমরা করে দিই। গুজরাত নয়, বাংলাই দেশের মডেল। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মীদের নির্দেশ দেন আরও উন্নততর তৃণমূল তৈরি করতে । তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের দল। জেলায় জেলায় দক্ষ সংগঠক দরকার। মহিলাদের গুরুত্ব দেবেন, তারা কিন্তু করেও দেখিয়েছেন।মনে রাখবেন, আমরা হারব না, আমরা ভয় পাব না, মাথা নত করব না। আমরা, করব, লড়ব, জিতব। এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। অনেক গদ্দার আছে, যারা বড় বড় কথা বলছে। ফোন ট্যাপিংয়ের কথাও বলছে। এদের মানুষ রাজনৈতিক ভাবে বিদায় দেবেন বলে আমার বিশ্বাস। বিজেপি-তে গদ্দারদেরই জন্ম হয়। ভাল মানুষের নয়। নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা বিধি কেটে গেলে শীতকালে ব্রিগেড প্যারেন্ড গ্রাউন্ডে বিরাট মিটিং করব। সেই সমাবেশে শরদ পাওয়ার, সোনিয়া গান্ধি সহ, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তৃতীয়বার বাংলার ক্ষমতায় এসে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন ‘খেলা হবে’ দিবসের। একুশে জুলাইয়ে জানালেন, রাজ্যের খেলা দিবস পালিত হবে ১৬ অগাস্ট। কারণ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের জয় মানে খেলা শেষ নয়। আগামী দিনে আরও বড় খেলা হবে বলে এ দিন বার্তা দিলেন মমতা। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই বিজেপির বিরুদ্ধে ফ্রন্ট গড়ার ডাক দিলেন মমতা। কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসা থেকে একের পর এক অমানবিক আইন চালু করেছে কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, করোণা ভাইরাসের মতো প্রাকৃতিক মহামারীও রুখতে ব্যর্থ কেন্দ্র। এ সমস্ত অভিযোগ তুলে ধরে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসছে, আর প্রধানমন্ত্রী বলছেন উত্তরপ্রদেশ দেশের মধ্যে সেরা রাজ্য। এতটুকুও লজ্জা নেই। দেশে টিকা নেই, ওষুধ নেই, অক্সিজেন নেই, মৃতদেহ সত্কার করার জায়গা নেই। শুধু বড় বড় ভাষণ আছে।’ এদিন সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ সম্প্রচার হয়। প্রত্যেক দেশবাসীর সঙ্গে নিজের যোগাযোগ স্থাপন করতে গিয়ে দিন মমতা বলেন, ‘বিজেপির জন্য চার লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে। আন্দোলন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আটকানো যেত সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে। সেই সময় বাংলায় ডেইলি প্যাসেঞ্জারের মতো গণতন্ত্র ধ্বংস করতেই ব্যস্ত ছিলেন আপনারা। কিন্তু বাংলার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন স্বাধীনতা আন্দোলন হোক বা যে কোনও লড়াই লড়তে তারা প্রস্তুত।’ রাজ্যের এই সাফল্যেকেই এবার জাতীয় মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘আমি সব রাজ্যকে বলব, একজোট হয়ে লড়াইয়ের জন্য জোট গড়ে তুলুন। এটাই সঠিক সময়। বেশি দেরি করলে সময় নষ্ট হবে। আমি দিল্লি যাচ্ছি, শরদ-জি, চিদাম্বরামজিকে বলব বৈঠক ডাকতে।’ এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খেলা একটা হয়েছে। ৫ মে তা বুঝতে পেরেছিলেন আপনারা। আবার একটা খেলা হবে। যতদিন না বিজেপিকে বিদায় করতে পারছি, রাজ্যে রাজ্যে খেলা হবে।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন আগামী ১৬ অগাস্ট রাজ্য জুড়ে পালিত হবে খেলা হবে দিবস। এদিন বক্তব্যের শেষের দিকে মমতা বলেন, ‘বিজেপিতে গদ্দারদেরই জন্ম হয়। ভাল মানুষের নয়। ওরা এই দেশটাকে জানে না, মানুষকে বোঝে না। শুধু মুখ বন্ধ করে দেওয়ার রাজনীতি করে। এই রাজনীতি আমার পছন্দ নয়।’ এরপর বিভিন্ন ও বিজেপি রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘আমরা ভয় পাব না। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। আমরা লড়ব, করব এবং জিতব।’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভারতকে স্বৈরচারী জুড়ির হাত থেকে শিকল থেকে মুক্ত করতেই হবে। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে লড়বে তৃণমূল। সকলকে ধন্যবাদ জানাই। ভারতকে স্বাধীন করে মুক্তির সূর্য উপহার দেবে ভারতই। অক্ষরে অক্ষরে বাংলা প্রমাণ করেছে যে, বাংলা যা আজ ভাবে, দেশ তা কাল ভাবে।আগামী দিনে সাংগঠনিক ভাবে আরও শক্তিশালী হবে তৃণমূল। দিল্লির কনস্টিটিউশন হলে যাঁরা আমাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। স্বৈরাচারী শক্তিকে হটিয়ে উজ্জ্বল ভারত গড়ে তুলতে একসঙ্গে হাত ধরে এগোতে হবে আমাদের। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা মাথা নত করব না, ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।