তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মেয়ো রোডের মঞ্চে বক্তব্য রাখলেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রথমেই তিনি বলেন, নির্যাতিতদের উৎসর্গ করছি আজকের দিনটা। সমাজে যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন তাঁদের। বিশেষ করে আরজি করে আমার প্রিয় বোনটি যেভাবে নির্যাতিত হয়েছেন তাঁকে। দেশ জুড়ে নির্যাতিতা এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি দিনটি উৎসর্গ করছি। দলীয় অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, আমরা দোষীদের শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই। কিন্তু বিজেপি চায় যাতে দোষীদের ফাঁসি না হয়। ওরা আন্দোলনে জল ঢেলে দিয়ে চক্রান্তের খেলায় মেতেছে। বাংলাকে বদনাম করার খেলায় নেমেছে। আরও বলেন, ওঁরা যা ডেঞ্জারাস তাতে নিজের লোককেও মেরে দিতে পারে। ওদের ডেডবডি চাই। আমি ধিক্কার জানাচ্ছি। নবান্ন অভিযান প্রসঙ্গে মমতা বলেন, গতকাল পুলিস সংযত ছিল। বিক্ষোভকারীরা ইট-পাথর ছুড়ে পুলিসের মাথা ফাটিয়েছে। চোখে আঘাত করেছে। কিন্তু পুলিস ধৈর্য্য হারায়নি। আমি পুলিসকে স্যালুট জানাই। ওরা সংযত থেকে নিজের রক্ত দিয়েছে। তবুও বিজেপির চক্রান্তের কাছে কারও ডেডবডি তুলে দেয়নি। তবে কাল যারা যারা হামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বার করা হবে। আমি চাই সকলের শাস্তি হোক।দলীয় সুপ্রিমো দাবি করেন, আজ বনধ সমর্থনকারীরা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বাস ভাঙচুর করেছে। পুলিসকেও মারধর করা হয়েছে। রেলের সিগনালও বন্ধ করা হয়েছে। বিজেপির প্রতি তোপ দেগে তিনি বলেন, আমি কোনও দিন এমন কেন্দ্রীয় সরকার দেখিনি। বিজেপি একেবারেই দলদাসের সরকার। আমিও ছাত্র রাজনীতি করেছি। কিন্তু আমরা বনধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রের আদালত, কেরল হাইকোর্ট বনধকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর জি কর কাণ্ড প্রসঙ্গে বলেন, আমরা সাতদিন সময় চেয়েছিলাম। যাতে ফাস্ট ট্রাক কোর্টের মাধ্যমে অভিযুক্তের ফাঁসি হয়। পরে আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্তভার পায়। কিন্তু ১৬ দিন হয়ে গেল বিচার কোথায়? যারা ধর্ষক তাদের একমাত্র শাস্তি ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি, আর কিচ্ছু না। এই একটা কাজে সব ঠান্ডা হবে। আমি পরের সপ্তাহেই স্পিকারকে বলে বিধানসভায় অধিবেশন ডাকব। আমরা আগামী দশ দিনের মধ্যে ‘ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, এই বিল পাশ করে রাজ্যপালের কাছে পাঠাব। এই প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্রের নির্যাতিত শিশু, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মণিপুরের কথাও উল্লেখ করেন। অসমের ঘটনা টেনে তিনি দাবি করেন, সেখানে ইতিমধ্যেই এনকাউন্টার করা হয়েছে। পাশাপাশি আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধও জানালেন মমতা। বলেন, যখন জুনিয়র চিকিৎসকরা দেশজুড়ে কর্মবিরতি করছিলেন তখন আমরা কোনও অ্যাকশন নিইনি। কারণ আমি মনে করি ওনাদের আন্দোলন সঙ্গত। ওনারা ওদের বন্ধুর বিচার চাইছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এখনও পর্যন্ত যাঁরা কাজে যোগ দেননি তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু করবেন না। পরে অবশ্য এটা রাজ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। আজকেও জুনিয়র চিকিৎসকদের মিছিল রয়েছে। আমার তাঁদের প্রতি সমর্থন ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু আমি বলব, আপনারা তো মানবিক। সুপ্রিম কোর্টও অনুরোধ করেছে সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। এরমধ্যে অনেক গরিব লোক চিকিৎসা না পেয়ে মারা গিয়েছে। গরিবরা কোথায় যাবে বলুন? অনেক পরিষেবা আপনারা, জুনিয়র ডাক্তাররা দেন। আমার অনুরোধ আপনারা এবার কাজে যোগ দিন। শেষে এদিনের মঞ্চ থেকে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নতুন কর্মসূচিও তৈরি করে দেন মমতা। বলেন, আগামীকাল অর্থাৎ শুক্রবার কলেজের গেটে ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করবেন পড়ুয়ারা। পাশাপাশি, ফেক ভিডিওকে কাউন্টার করতে তাঁদের পুলিসের দ্বারস্থ হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।