সঙ্ঘের নিজস্ব সমীক্ষায় আগেই ধরা পড়েছিল বাংলায় পদ্মশিবিরের সম্ভাব্য বিপর্যয়ের ছবি। একই ছবি উঠে এসেছিল তৃণমূলের নিজস্ব সমীক্ষাতেও। এবার সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের জনসমীক্ষাতেও উঠে এল একই রিপোর্ট। ইন্ডিয়া টুডে’র সাম্প্রতিক জনসমীক্ষায় সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে যা বাংলার বুকে তৃণমূলকে অক্সিজেন দেওয়ার পক্ষে তো যথেষ্টই এবং একই সঙ্গে বিজেপির কাছে যথেষ্ট উদ্বেগের। পার্থ-কেষ্ট কাণ্ডের পরেও বাংলার বুকে যে সাদা শাড়ি আর হাওয়াই চটির কোনও বিকল্প নেই, তাঁর গ্রহণযোগ্যতা-মান্যতা-বিশ্বাসযোগ্যতা যে এখনও সর্বাধিক সেটাই উঠে এসেছে ইন্ডিয়া টুডে’র এই সমীক্ষায়। সেখানে স্পষ্ট জানানো হয়েছে এখনই দেশে লোকসভা নির্বাচন হলে বাংলার বুকে তৃণমূল একাই জিতবে ৩৫টি আসন। বিজেপি পাবে মাত্র ৭টি। আর এই তথ্য সামনে এল এমন একটা দিনে যখন গোয়ার পঞ্চায়েত নির্বাচনে খাতা খুলতে সমর্থ হয়েছে তৃণমূল। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল যদি বাংলা ও দেশের বুকে ঐতিহাসিক হয় তাহলে ২০২৪ নিশ্চিত ভাবে তাঁদের কাছে হয়ে উঠতে চলেছে যথেষ্ট উদ্বেগের। কেননা উনিশে বাংলার বুকে যে ১৮টি আসন জয়ের নজীর গড়েছিল বিজেপি এবার আর তাঁরা সেই জায়গাটাও ফিরে পাচ্ছে না। ইন্ডিয়া টুডে’র জনসমীক্ষায় বলছে, বাংলায় এখন লোকসভা নির্বাচনের জন্য আমজনতা ভোটের লাইনে দাঁড়ালে পদ্মশিবিরের ভাগ্যে জুটবে মাত্র ৭টি আসন। সেই সঙ্গে এই সমীক্ষায় এটাও ধরা পড়েছে সময় যত এগোবে সেই সমর্থনেও ভাটা প্রবে। অর্থাৎ এখন ভোট হলে ৭টি আসন বিজেপি জিতলেও ২০২৪ এর নির্বাচনে বিজেপি ১টিও আসন জিততে পারবে কিনা তা রীতিমত সন্দেহের। এই একই ছবি কিন্তু উঠে এসেছিল আরএসএসের নিজস্ব সমীক্ষাতেও। তৃণমূলের সমীক্ষাও সেই একই রিপোর্ট দিয়েছে। অর্থাৎ বাংলার জনমানসে পার্থ-অর্পিতা-কেষ্ট-এসএসসি থেকে শুরু করে গরুপাচার-কয়লাপাচার-পাথরখাদান-বালিখাদানের কোনও প্রভাবই পড়ছে না। সর্বত্রই চূড়ান্ত প্রভাব বাংলার অগ্নিকন্যা তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূলের। আরও মজার কথা পার্থ-কেষ্ট কাণ্ডে বাংলার বুকে বাম ও কংগ্রেস যতই লম্পঝম্ফ করুক না কেন এখন ভোট হলে তাঁদেরও ঝুলিতে একুশের নির্বাচনের মতোই শূন্যই থেকে যাবে। উনিশের ভোটে বাম শূন্য হলেও কংগ্রেস ২টি আসনে জিতেছিল। কিন্তু এবার সেটাও আর জুটবে না সোনিয়া গান্ধির দলের। আর তৃণমূলের এই সাফল্যের নেপথ্যে একদিকে যেমন উঠে আসছে মমতার বিকল্প কিছু না থাকা তেমনি উঠে আসছে তাঁর সরকারের হাত ধরে বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়া একের পর এক আর্থসামাজিক প্রকল্পের সুবিধা। আরও চমকে দেওয়ার মতো বিষয়, সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বাংলা-সহ সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা কমছে। আগামী দু’বছরে মোদির সেই জনপ্রিয়তা আরও কমবে। ফলে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ’র সংখ্যা গরিষ্ঠতার পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ঝুলিয়ে দিল এই সমীক্ষা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে বিজেপি ও এনডিএ ২০২৪-এ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এই জনসমীক্ষাতে আরও ধরা পড়েছে যে, সিবিআই, ইডি, এনএআই দিয়ে মোদি সরকার তৃণমূল তথা মমতাকে যতই কোনঠাসা করার চেষ্টা করুক না কেন কার্যত সেই সব ব্যুমেরাং হচ্ছে বিজেপির কাছে বাংলার বুকে। কেননা বাংলাজুড়ে মমতার জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে ও পাচ্ছে। বিজেপির পায়ের তলার মাটি সেই অনুপাতেই আরও আলগা হয়েছে ও হচ্ছে। বিজেপির জনসমর্থন যে রাজ্যে আগের তুলনায় কমেছে, তা তাদের সভা ও মিছিলগুলোর লোকসংখ্যা থেকেই স্পষ্ট। এর জন্য দ্রব্য বৃদ্ধি ও মোদির বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির প্রভাব বেশি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারীকে সামনে রেখে বিজেপির দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন এখনও পর্যন্ত জনগণের মধ্যে দাগ কাটছে না তো বটেই উল্টে বিজেপি অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে।