জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধানের শাসন রয়েছে তাই সংবিধান মেনেই ডিলিমিটেশনের পথে হাঁটতে চলেছে মোদি সরকার। জম্মু-কাশ্মীরে ডিলিমিটেশনে যে এক ডজন জেলার পুনর্বিন্যাসের কাজ চলছে। একটি জেলার নির্বাচনী ক্ষেত্র ঢুকে ছিল অন্য জেলায়৷ সেগুলিকে একটি জেলার মধ্যেই রাখার ব্যবস্থা হবে৷ গেন্ডারবল, বুদগাম, কুলগাম, অনন্তনাগ, কিশোর, দোদা, রামবান, রিয়াসী, উধমপুর, কাঠুয়া ও সাম্বা জেলার কয়েকটি বিধানসভা আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসে এমন ঘটনা প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷ একটি আসন যেন একটি প্রশাসনিক ইউনিটের মধ্যে পড়ে তা নিশ্চিত করার জন্য এটি প্রয়োজনীয় বলে জানা গিয়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ, গেন্ডারবল বিধানসভা কেন্দ্রটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গেন্ডারবাল জেলার মধ্যে পড়ে৷ তবে এর ৯টি ভোটকেন্দ্র শ্রীনগর জেলার মধ্যে পড়ে৷ এইচএস বাগ এবং দেবসর আসন আংশিকভাবে কুলগাম জেলায় এবং আংশিক অনন্তনাগে। একইভাবে, ইন্দেরওয়াল বিধানসভা বিভাগটি দোদা এবং কিস্তওয়ার জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে। নতুন জেলা তৈরির ফলে এই সমাপতন ঘটেছে। ১৯৯৫ সালে জম্মু-কাশ্মীরে জেলার সংখ্যা ১২ থেকে বেড়ে ২০ হয়েছিল এবং তেহসিলের সংখ্যা ৫৫ থেকে ২১৭-এ উন্নীত হয়৷ প্রশাসনিক ইউনিটের সীমানা নির্ধারণের পাশাপাশি সীমানা কমিশন বিদ্যমান নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলির ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য, যোগাযোগের সুবিধা এবং জনসাধারণের সুবিধা ইত্যাদি বিবেচনা করবে৷ এরপর বর্তমানের মোট ৯০টি আসনের সঙ্গে আরও ৭টি আসন বাড়বে৷ ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার হওয়ার পর এই প্রথম জম্মু-কাশ্মীরের আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে তোড়জোড় চলছে সেখানে নির্বাচন করার জন্য৷ বিরোধীদের অভিযোগ, হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুতে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র চলে গেলে ফায়দা হবে বিজেপির। তাই ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী আসন পুনর্বিন্যাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসক শিবির। আর এতে সায় নেই মেহবুবা মুফতিদের৷ জম্মু-কাশ্মীরে এত দিন ক্ষমতার ভরকেন্দ্র ছিল কাশ্মীর। সেখানে যে দল বেশি আসনে জিতত, সে-ই ক্ষমতা দখল করত। এ বার আসন পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র কাশ্মীর থেকে জম্মুতে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অমিত শাহেরা। রাজ্য পুনর্গঠন আইনে জম্মু-কাশ্মীর এখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। তবে দিল্লির মতো সেখানেও বিধানসভা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মোদি সরকার। লাদাখ বেরিয়ে যাওয়ায় বতর্মানে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার শক্তি দাঁড়িয়েছে ৮৩। এর মধ্যে জম্মুতে ৩৭টি ও কাশ্মীরে ৪৬টি আসন। বিজেপির দাবি, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় জনসংখ্যা কমেছে। বেড়েছে জম্মু এলাকায়। তাই আসন পুনর্বিন্যাস হলে জম্মু এলাকাতেই আসন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। আর তাতেই তারা ফায়দা লুটবে৷
ডিলিমিটেশন কী?
ডিলিমিটেশন হল রাজ্যের বিধানসভা ও লোকসভা আসনগুলির সীমানা পরিবর্তন। জনসংখ্যার অনুপাত মেনে রাজ্যের বিধানসভায় কিছু নতুন আসন যুক্ত করা। দেশের ডিলিমিটেশন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা৷ যার প্রধান হন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি। এছাড়াও দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও যে রাজ্যটিতে ডিলিমিটেশন হবে সেটির নির্বাচন কমিশনার এবং রাজ্যের কিছু এমপি এই ডিলিমিটেশন কমিশনের সদস্য থাকেন। এই নিয়ম মেনেই জম্মু-কাশ্মীরের পাঁচজন এমপি এই ডিলিমিটেশন কমিশনে রয়েছেন।
প্রতীকী ছবি।