বিনোদন

ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁয়ের জন্মদিনে নবান্নে শ্রদ্ধার্ঘ্য 

আজ ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁয়ের জন্মদিন। ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁয়ের জন্মদিনে নবান্নে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাচ্ছেন মন্ত্রী অরূপ রায়।

বড়ে গোলাম আলি খাঁ ১৯০২ সালের ২ এপ্রিল তৎকালীন পশ্চিম পঞ্জাবের লাহোরের কাছে ছোট্ট শহর কাসুরের এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কাসুর বর্তমানে পাকিস্তানের অংশ। এই পরিবার ছিল সঙ্গীতমনস্ক পরিবার। তাঁর বাবা ছিলেন গায়ক আলি বক্স খান। পাঁচ বছর বয়সে পিতৃস্থানীয় চাচা কালে খান ও পরবর্তীকালে বাবার কাছ থেকে কণ্ঠ সঙ্গীতে দীক্ষিত হন বড়ে গোলাম আলি খান। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তানেই চলে যান তাঁরা। কিন্তু ধর্মীয় গোঁড়ামির জাঁতাকলে সঙ্গীতের কদর সেখানে ক্রমাগত অবদমিত হতে থাকলে তা ওস্তাদজির পক্ষে মেনে নেওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠল। তবু নয়-নয় করে নয়টি বছর কেটে গেল পাকিস্তানেই। ওস্তাদজি মাঝেমাঝে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে কয়েক দিনের জন্য ভারতে আসতেন। তাঁর মনে হত ভারতে তাঁর সঙ্গীতের এত কদর, কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই, এখানেই তিনি থেকে যান। এমনই এক অনুষ্ঠানে ৫৭ সালে তিনি এলেন বম্বেতে। শ্রোতাদের মধ্যে বসে ছিলেন তৎকালীন বম্বের মুখ্যমন্ত্রী মোরারজি দেশাই, যিনি পরবর্তীকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। বড়ে গোলাম আলি খানের সংগীত জাদুতে সকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল। এর পর থেকে মুম্বইয়ের মালাবার হিলের একটি বাংলোয় বসবাস করতে লাগলেন বড়ে গোলাম। তৎকালীন সঙ্গীত ধারাকে আমুল বদলে ফেললেন তিনি। ঠুমরি আর টপ্পার মিশ্রণে তৈরি করলেন এক নবরূপের সঙ্গীতধারা। ‘সুরমণ্ডল’, এক নবতম বাজনা প্রাণ পেত খাঁ সাহেবের হাতে। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীতগুরু ছিলেন প্রবাদপ্রতিম বড়ে গোলাম আলি খান। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পরিমণ্ডলে সন্ধ্যার মেয়েবেলা কেটেছিল। প্রথমেই বলতে হয় সন্ধ্যার বড়দা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথা। যিনি সন্ধ্যার গানে আগ্রহ দেখে বোনকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠ গুরুদের কাছে নিয়ে যান। সন্ধ্যার প্রথম শিক্ষাগুরু আচার্য যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়। দীর্ঘ ছ’বছর তাঁর কাছে তালিম নেন সন্ধ্যা। এরপর অল্প কিছুদিন পণ্ডিত চিন্ময় লাহিড়ির ছাত্রী ছিলেন তিনি। একদিন সন্ধ্যা তাঁর বড়দা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে বড়ে গোলাম আলি খান সাহেবের কাছে গান শেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রেডিও আর গ্রামাফোনে খান সাহেবের গান শুনে নাবালিকা সন্ধ্যার কানে খেলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরমাধুরী। সেসময়  বড়ে গোলাম আলি খান কলকাতায় এলে পরম সংগীতজ্ঞ জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের ডিকসন লেনের বাড়িতে উঠতেন। সেখানেই বাংলার ছাত্রছাত্রীদের তালিমও দিতেন তিনি। মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় (চট্টোপাধ্যায়) ইতিমধ্যেই তাঁর শিষ্যা হয়েছিলেন। সন্ধ্যা আর মীরা ছিলেন সতীর্থ। তাই সন্ধ্যার বড়দা সোজা চলে গেলেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে। খুব শীঘ্রই জ্ঞানপ্রকাশ বাবু সন্ধ্যার বড়দাকে জানালেন, খান সাহেব সন্ধ্যাকে তাঁর শিষ্যা করতে সম্মত হয়েছেন।