লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পাচ্ছেন ১.৫ কোটি মানুষ ৷ নেতাজি ইন্ডোরে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা বিতরণ করে এ কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মহিলাদের হাতে টাকা তুলে দেন তিনি৷ বর্তমান সরকার গঠনের বর্ষপূর্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর আপনাদের আশীর্বাদে তৃতীয় বারের জন্য আমার শপথ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল ৷ আজকের দিনটি মা মাটি মানুষকে উৎসর্গ করতে চাই ৷ সমাজের মূল প্রাণ আমাদের মা-বোনেরা, তাঁরাই ঘরের লক্ষ্মী ৷” এ দিন যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “এটা উত্তরপ্রদেশ নয়, এটা বাংলা ৷ আমরা যা বলি তা করি ৷ অন্যেরা প্রতিশ্রুতি রাখে না ৷ উত্তরপ্রদেশে অভিযোগ জানাতে গেলে তার উপর আবার অত্যাচার করে ৷” ওই মঞ্চ থেকেই সূচনা হয় একাধিক প্রকল্পের। এদিন থেকে ২০ মে পর্যন্ত চলবে পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি। ২১ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত হবে জেলায় জেলায় দুয়ারে সরকার শিবির। এই অনুষ্ঠানের শেষেই মুখ্যমন্ত্রী চলে যাবেন নবান্নে। সেখানে দুপুর ৩টে থেকে শুরু হবে মন্ত্রিসভার বৈঠক। অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বেশ কয়েকটি প্রকল্প ছাড়াও আসন্ন বর্ষা-পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, জিতে ক্ষমতায় এলে রাজ্যের মহিলাদের প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দেবে তাঁর সরকার। জেনারেল ক্যাটাগরি বা সাধারণ পরিবারের মেয়েরা মাসে ৫০০ টাকা করে বছরে মোট ৬ হাজার টাকা পাবেন। পিছিয়ে পড়া শ্রেণিভুক্তেরা পাবেন প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে বছরে ১২ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে সরাসরি টাকা পাঠাছে রাজ্য। মূলত রাজ্যের মহিলাদের সশক্তিকরণের লক্ষ্যেই বাংলায় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প চালু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মা-মাটি-মানুষের সরকার পূর্ণ করল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার ১১ বছর। আর সেই দিনেই বাংলার মহিলাদের ‘সমাজের মূল প্রাণ, ঘরের লক্ষ্মী’ বলে সম্বোধিত করলেন। এদিন কলকাতার(Kolkata) নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে‘উন্নয়নের পথে ১১ বছর’ শীর্ষ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ১৫জন মহিলার হাতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা তুলে দেন। সেই সঙ্গে এদিন থেকেই আরও ২০ লক্ষ মহিলাকে নিয়ে আসা হল এই প্রকল্পের আওতায়। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জেতার চারমাসের মধ্যেই, রাজ্যের ১ কোটি ৫৩ লক্ষাধিক মহিলাকে আনা হয় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের অধীনে। তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতির উপভোক্তারা এখন প্রতিমাসে পান ১০০০ টাকা ও অন্য মহিলারা ৫০০ টাকা। এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা থেকে মহিলারা এসেছিলেন। এদিনের অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর এই দিনে আপনাদের আশীর্বাদে আমার শপথ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল তৃতীয় বারের জন্য। আজকের দিন মা মাটি মানুষকে উৎসর্গ করতে চাই। সে জন্যই বেছে নিয়েছি আমাদের সমাজের মূল প্রাণ, আমার মা-বোনেরা, যাঁরা ঘরের লক্ষ্মী। আজ এক বছর বাদে গর্ব করে বলতে পারি যা যা আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার প্রত্যেকটাই কার্যকর করেছি। এক কোটি ৫১ লক্ষ মহিলা আগেই লক্ষ্মীর ভান্ডার পেয়েছে। বিজিবিএস-এ আরও ৫ লক্ষ দেওয়া হয়েছে। বাকি ছিল ২০ লক্ষ মহিলা। তাঁদের অ্যাকাউন্টে আজ টাকা পৌঁছে গিয়েছে। আমরা যেটা বলি সেটা করি। অন্যেরা সেটা করে না। বরং কুৎসা করে।’ সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে নারী নির্যাতন নিয়ে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। সেই প্রসঙ্গেও আজ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”এখানে মা বোনদের আগলে রাখা হয়। আগে হচ্ছে মানুষ, মানবিকতা। ৩৪ বছর তো বামফ্রন্ট ছিল। দেখাও তো। নর কঙ্কালের মালা পরিয়েছ। থানায় ডাইরি করতে যেতেই পারতো না। এখন কিছু কিছু বাম বিজেপি হয়ে গেছে।”এরপরই তিনি বলেন, কেউ যদি ফেক ভিডিও দেয়, তারও শাস্তি হতে পারে। এটাও আইনে আছে। মাধ্যমিক ১২ লক্ষ, উচ্চ মাধ্যমিক ১০ লক্ষের কাছাকছি পরীক্ষার্থী দিয়েছে। একটাও অনভিপ্রেত ঘটনা দেখাতে পারবে? জগৎটা খারাপ, সবার গায়ে কালী লাগিয়ে দিলাম, এটা ঠিক নয়। একটা ঘটনার জন্য ৫ -৬ জন দোষী হলে সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো ঠিক নয়। অন্য যে কোনও রাজ্যের তুলনায় বাংলা নিরাপদ।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ”আমরা করেছি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, ওরা করেছে কুৎসার ভাণ্ডার। যদি কেউ অন্যায় করে আমাদের ছেলে মেয়েদের ছাড়ি না। পাপ করলে একদিন না একদিন বিচার হবেই। বাংলাকে দুর্বল ভাবার কারণ নেই। বাংলা সবাইকে নিয়ে চলতে জানে। আমাদের নতুন করে শিক্ষা দেওয়ার দরকার নেই। ১১ বছরের সরকার। এই ১১ বছরে আমি যা করে দিয়েছি, চ্যালেঞ্জ করছি আমাকে ফেস করুন। আমি ফেস করতে প্রস্তুত। আমাকে চমকে লাভ নেই। ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।” এর পাশাপাশি সুকান্ত মজুমদার-শুভেন্দু অধিকারীদের কৌটো নিয়ে চাঁদা তোলার বিষয়টি নিয়ে সুর চড়ালেন তৃণমূল সুপ্রিমো । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে বলেন, যাঁদের লাখ লাখ টাকা ব্যাঙ্কে রয়েছে, তাঁরা কৌটো নিয়ে রাস্তায় টাকা তুলছে । নেতাজি ইন্ডোরের কর্মসূচি থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি কেউ বলেন বাংলায় যেও না, বাংলায় গেলে খুন হয়ে যাবেন, আমার গায়ে লাগে। বাংলা অন্য রাজ্যের থেকে অনেক ভাল।” সরাসরি বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রেদেশের নাম করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “উত্তরপ্রদেশে বিচার চাইতে গেলে পুলিস নির্যাতিতাকেই অত্যাচার করে। বাংলায় সেটা করার সাহস কারও হবে না। কেউ যদি এমন কাজ করে, তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।” হুঁশিয়ারির সুরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, নারী নির্যাতন সমর্থনযোগ্য নয়। এ রাজ্যে পুলিস রং না দেখে ব্যবস্থা নেয়। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে হয় না। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক রং না দেখে শাস্তি দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, “আজকে দশ বছর ধরে দুর্গাপুজোকে প্রমোট করতে করতে, ইউনেস্কো এই পুজোকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। এতে অন্য কারও কোনও অবদান নেই। অবদান রয়েছে ক্লাবগুলোর, পুজো কমিটিগুলোর, কোটি কোটি মানুষের। বাংলাকে এত দুর্বল ভাবার কোনও কারণ নেই।” ‘দুর্গাপুজো’ ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় স্থান পাওয়ায়, শুক্রবার ভিক্টোরিয়ায় তা উদযাপন করবেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। যেখানে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে সেই অনুষ্ঠানে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, কেন্দ্রের সেই অনুষ্ঠানের আগে দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি নিয়ে চড়া সুর শোনা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়।