দেশ

টিকা তৈরিতে বরাদ্দ ১০০ কোটির ১ টাকাও দেয়নি পিএম কেয়ার্স ফান্ড, আরটিআইয়ের জবাবে জানালো কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক

ফের বিতর্কের মুখে কেন্দ্রের পিএম কেয়ার্স ফান্ড! করোনার ভ্যাকসিন তৈরির জন্য এই ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। কিন্তু ঘোষণাই সার। তারপর দেড় বছরের বেশি কেটে গিয়েছে। সেই টাকা কে পেয়েছে? কোন সংস্থা? কোন দপ্তর? কোন গবেষণাগার? কেউ জানে না। তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে ওই ঘোষণার বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্নকর্তার আবেদনপত্র দপ্তর থেকে দপ্তরে শুধু ঘুরে বেরিয়েছে। কেউই জবাব দিতে রাজি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, নীতি আয়োগ থেকে আইসিএমআর-দায় এড়ানোর তালিকায় রয়েছে সকলেই। শেষপর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রকও জানিয়েছে, টিকার জন্য এক টাকাও দেয়নি পিএম কেয়ার্স ফান্ড। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২০২০ সালের ১৩ মে ঘোষণা করা সেই ১০০ কোটি টাকা কোথায় গেল? স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমোডর লোকেশ বাত্রা এব্যাপারে উত্তর চেয়ে আরটিআই আইনে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছেন। সেই ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে। তাঁর প্রশ্নের জবাবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) বলেছে, ‘আমরা টাকা পাইনি।’ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, পিএম কেয়ার্স ফান্ড আরটিআই-এর আওতাভুক্ত নয়। অর্থাৎ জবাব দেওয়া হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব বায়োটেকনোলজিও জবাব না দিয়ে আবেদনপত্রটি সরাসরি পাঠিয়ে দেয় নীতি আয়োগে।

নীতি আয়োগ আবার সেটি ঠেলে দেয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দিকে। সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন জানায়, ভ্যাকসিন নির্মাণে অর্থবরাদ্দ তাদের কাজ নয়। আর শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানায়, তারাও পায়নি ওই ১০০ কোটি টাকার তহবিল। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের দাবি, বিশ্বব্যাপী মহামারীর মধ্যে সবথেকে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি এটি। সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান বিচারপতির নজরদারিতে তদন্ত করা উচিত। এব্যাপারে অবিলম্বে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মত তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায়েরও। প্রথম পাঁচ-ছ’দিনেই পিএম কেয়ার্স ফান্ডে জমা পড়েছিল প্রায় ৩ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। তারপরের কোনও হিসেব অবশ্য পাওয়া যায়নি। এই তহবিল নিয়ে লাগাতার অভিযোগ উঠেছে।  গত বছর আদালতে দায়ের করা মামলায় মোদি সরকার জানিয়েছিল, পিএম কেয়ার্স ফান্ড সরকারি তহবিল নয়। এই ঘোষণার পর সর্বাগ্রে আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র স্পষ্ট করে দেয়, এই তহবিল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের আওতার বাইরে।  সরকার জানিয়েছিল, এই ফান্ডের টাকায় সর্বাগ্রে ভ্যাকসিনের সাড়ে ৫ কোটিরও বেশি ডোজ ক্রয় করা হয়েছে। টিকাকরণ শুরুর সময় অর্থমন্ত্রকও জানায়, ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে ওই তহবিল থেকে। পি এম কেয়ার্স ফান্ডের ওয়েবসাইট দেখাচ্ছে ভেন্টিলেটর থেকে ভ্যাকসিন ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে ব্যয় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। এমনকী প্রথম দিকে বেশি দামে ভ্যাকসিন কেনার অভিযোগও ওঠে। এব্যাপারে কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করেছেন এআইসিসি মুখপাত্র তথা অর্থনীতিবিদ গৌরব বল্লভ। তিনি বলেন, ‘ইডির তদন্ত করা উচিত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নজরদারিতে চলুক সেই তদন্ত।’