রামদেব এবং পতঞ্জলির মালিক বালকৃষ্ণর ফের একদফা ক্ষমাভিক্ষা খারিজ করে দিল সুপ্রিমকোর্ট। শীর্ষ আদালত এদিন রামদেব এবং পতঞ্জলি কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করে বলে, আমরা অন্ধ নই। পতঞ্জলির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় উত্তরাখণ্ডের লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে সমালোচনায় বিদ্ধ করে সুপ্রিমকোট। কেন্দ্রের জবাবেও আদালত সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিমা কোহলি এবং এ আমানল্লার বেঞ্চ বলে, কাগজে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু, ওদের পিঠ দেওয়ালের বিপরীতে খাঁড়া রয়েছে। অর্থাৎ ওরা আইনের তোয়াক্কা করছে না। তাই আমরা এই ক্ষমাপ্রার্থনা আর্জি গ্রহণ করছি না। আমরা এটাকে ইচ্ছাকৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ বলে গণ্য করছি। এদিন শুনানির শুরুতেই বেঞ্চ বলে, রামদেব এবং বালকৃষ্ণ তাঁদের ক্ষমাপ্রার্থনা প্রথমে মিডিয়ার কাছে বলেছেন। আদালত ভর্ৎসনা করে বলেছে, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় এঁরা মিডিয়ার কাছে বলেছেন, আদালতে হলফনামায় তাঁরা ক্ষমা চাইতে চলেছেন। কিন্তু, এই কথা আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। বিচারপতি কোহলি বলেন, এতেই বোঝা যায়, ওঁরা পরিষ্কার প্রচার চান। পতঞ্জলির পক্ষে আইনজীবী যখন হলফনামা পড়ে শোনাতে যান, তখন বিচারপতি আমানুল্লা বলেন, আপনি হলফনামা নিয়ে প্রতারণা করছেন। ও তো আপনার তৈরি করা। আমানুল্লা প্রশ্ন করেন, সত্যিই কি আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে? এরপরেই আদালত উত্তরাখণ্ড সরকারের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে। বলে, পতঞ্জলিকে লাইসেন্স দেওয়া অফিসাররা কেন পদক্ষেপ করেননি। এই মুহূর্তে তিন
অফিসারকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আমরা এটাকে লঘুভাবে নিচ্ছি না। আমরা আপনাদের ছিঁড়ে ফেলে দেব।বেঞ্চ আরও বলেছে, সুপ্রিম কোর্টকে আপনারা প্রহসনে পরিণত করেছেন। এটা কি পোস্ট অফিস নাকি! রাজ্যের আইনজীবীকে বলে বেঞ্চ। রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করে আদালত বলে, আপনারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছেন! আমরা কেন ধরে নেব না যে, পতঞ্জলির সঙ্গে আপনাদের গোপন খেলা রয়েছে। উত্তরাখণ্ড সরকারের আইনজীবী বলেন, তাঁরা পদক্ষেপ করেছেন। একথা শুনে আদালত আরও রেগে যায়। বেঞ্চ বলে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! এতদিনে আপনারা নড়েচড়ে বসেছেন। কিন্তু, সেই মানুষগুলো কী হবে, যাঁরা নিরাময় হবে ভেবে পতঞ্জলির ওষুধ খেয়েছেন? অথচ সেরে ওঠেননি। আদালত এও বলে, রামদেব ও বালকৃষ্ণ তো হাজিরা এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁরা বিদেশে ঘুরতে গিয়েছিলেন। শেষে এই মামলার রায়দান আগামী ১৬ এপ্রিল হবে বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিয়ে একাধিকবার সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে পড়েছে পতঞ্জলি। গত নভেম্বর মাসে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, ভুয়ো তথ্য দেওয়া বিজ্ঞাপন তৈরি করলে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা ভুগতে হবে। কেবল রামদেব নয়, পতঞ্জলির বিজ্ঞাপন ঘিরে সুপ্রিম কোর্টের তোপে পড়েছে কেন্দ্রও। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, ”সরকার চোখ বন্ধ করে বসে আছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।” ইতিমধ্যে সংস্থাটিকে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়ে নোটিস দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন বিচারপতিরা নির্দেশ দেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও একটি বিস্তারিত হলফনামা জমা দিত হবে পতঞ্জলিকে।