আর জি কর কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের দাবিতেই কি সিলমোহর পড়তে চলেছে? সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাব (সিএফএসএল) থেকে বহু প্রতীক্ষিত ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। আর তাতেই জানা যাচ্ছে, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাই ধর্ষণ করেছে মহিলা চিকিৎসককে। কারণ, ধর্ষিতার শরীরে সঞ্জয় রাই ছাড়া আর কারও সিমেন মেলেনি বলেই সূত্রের খবর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটারিতে ধর্ষণস্থল থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পাঠিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। গত ১৩ অগাস্ট বেনিয়াপুকুরের ওই কেন্দ্রীয় ল্যাবের দ্বারস্থ হয়েছিল লালবাজার। আর জি কর ইস্যুতে কলকাতা পুলিশের অনুরোধে তখন তারা জানিয়েছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে এর রিপোর্ট মিলবে। কিন্তু ১৩ অগাস্ট আর জি কর ধর্ষণ-খুনের তদন্তভার কলকাতা পুলিশের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় হাইকোর্ট। স্বভাবতই ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট তাই কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সম্মতির ভিত্তিতে বর্তমানে তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিবিআইকে হস্তান্তর করেছে সেন্ট্রাল ল্যাব। তার থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে মর্মান্তিক ধর্ষণে সঞ্জয় রাইয়ের ভূমিকা। কীভাবে হয়েছে এই ডিএনএ টেস্ট? ময়নাতদন্তের সময় খুন হওয়া চিকিৎসকের নখ, দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। পাশাপাশি ঘটনার রাতে ধৃত সিভিকের পোশাক, সেমিনার রুমের নীল রঙের বিছানার চাদর, লাল রঙের দু’টি কম্বল এবং ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত একগুচ্ছ চুলের নমুনা-সবই ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছিল সেন্ট্রাল ল্যাবে। তা বিশ্লেষণ করে ধর্ষক হিসেবে সঞ্জয় রাইকেই চিহ্নিত করেছেন সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবের বিজ্ঞানীরা। উল্লেখ্য, দেশজুড়ে প্রতিবাদ। সংবাদ মাধ্যেমের একাংশের প্রথমেই ইঙ্গিত দিয়েছিল, যে মহিলা চিকিৎসককের সঙ্গে গণধর্ষণও হয়ে থাকতে পারে। এই তত্ত্ব চাউর হতেই আমজনতার মধ্যে একটা বিস্ফোরণ ঘটে। প্রশ্ন ওঠে, কলকাতা পুলিশ কি তাহলে কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছে? তাই সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকদেরও এব্যাপারে অকাট্য আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ প্রয়োজন ছিল। ওই সেমিনার রুম বা ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা নেই। বেঁচে নেই ওই নির্যাতিতা তরুণী। নেই প্রত্যক্ষদর্শীও। ফলে এই রহস্যের কিনারা হতে পারে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে। সেই তুরুপের তাস এখন সিবিআইয়ের হাতে। তবে এরপরও সমস্যা আছে। আর জি কর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক গুজব ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট সামনে এলেই সব বিতর্ক-সংশয় মিটে যাবে, এমনটাও নয়। সেক্ষেত্রে ধৃত সঞ্জয় রাইয়ের সম্মতি মিললে সিবিআই হয়তো নারকো অ্যানালিসিসের পথে হাঁটবে। কেউ এই ভয়াবহ ঘটনা লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছিল কি না, সেই তদন্ত চলছে। কিন্তু ধর্ষণে সঞ্জয় রাই অন্য কারও উপস্থিতি যে পাওয়া যাচ্ছে না, সেটা দেখিয়ে দিল ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট। সিবিআইও কিন্তু ওই ল্যাবেই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠিয়েছে। সেই রিপোর্ট হাতে এসেছে কি না, সে ব্যাপারে এজেন্সির তরফ থেকে সরকারি ভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি।