সন্দেশখালিকাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে শেষপর্যন্ত গ্রেফতার করল রাজ্য পুলিশ। গভীর রাতে মিনাখার একটি জায়গা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত দেড়মাস ধরে এই একটিই নাম রাজ্য তথা গোটা দেশের খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল। মিনাখাঁ থেকে নিখোঁজ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই তাঁকে বসিরহাট আদালতে তোলা হবে। এই মুহূর্তে তাঁকে বসিরহাট আদালতের লক আপে রাখা হয়েছে বলে খবর। এনিয়ে এবার মুখ খুললেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে এডিজি বলেন, একটি অভিযানের সময়ে ইডি আধিকারিকরা আক্রান্ত হন। সেই ঘটনায় ইডির ডেপুটি ডিরেক্টর একটি অভিযোগ দায়ের করেন ন্যাজাট থানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্ত শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ইডির তরফে উচ্চআদালতে গিয়ে ওই তদন্তের উপরে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। সেই আর্জি উচ্চ আদালত মঞ্জুর করে। সুতরাং ওই মামলায় কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা ছিল। এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার আরও বলেন, সবাই জানেন সন্দেখালিতে কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। তার পর থেকে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা শুরু হয়েছে। কিন্তু গত ৮ ফেব্রুয়ারির পর যেসব মামলাগুলি দায়ের করা হয়েছে সেগুলি প্রত্যেকটাই ২-৩ বছর আগে ঘটা ঘটনার ভিত্তিতে করা। ২-৩ বছর আগে যে ঘটনা ঘটে এবং তার ভিত্তিতে যে অভিযোগ দায়ের হয় তাতে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করবে অনেকটা সময় লাগে। কিন্তু যে মামলা সম্প্রতি হয়েছে ৫ জানুয়ারি হয়েছে তার তদন্ত করতে, তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে আমরা পারতাম। সেই তদন্তে স্থগিতাদেশ ছিল। তাই শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যায়নি। অথচ সংবাদমাধ্য়ম সহ বিভিন্ন মহল থেকে বারবার বলা হয়েছে, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করছে না। এটা ঠিক নয়। এটা ভুল। আমাদের আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। উল্লেখ্য, দুদিন আগেই কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয় শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারের ব্যাপারে কোনও বাধা নেই। তাকে গ্রেফতার করতে পারবে ইডি, সিবিআই ও রাজ্য পুলিশ। সেই রায়ের প্রসঙ্গ টেনে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ বলেন, ওই নির্দেশের পর পুলিশ জোর কদমে তল্লাশি শুরু করে। গত রাতে মিনাখাঁর বামুনপুকুর অঞ্চল থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে বসিরহাটে কোটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে হেফজতে নেওয়ার আবেদন করা হবে। আমরা এটাও বলি, আমাদের উপরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল কিন্তু ইডির উপরে তা ছিল না। তার পরেও তারা কেন গ্রেফতারে উদ্যোগ নেননি তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা উচিত। আরও দুটি বিষয় উঠে আসছে। একটি হল ন্যাজাট থানার একটি এফআইআর। দেখা যাচ্ছে অভিযোগকারী যেদিন অভিযোগ দায়ের করছেন তার একদিন আগে এফআইআর স্টার্ট হয়ে গিয়েছে। এটা নিয়ে একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই তারিখ লেখায় ভুল হয়েছে। যেকোনও ভুল যখন হয় তখন দেখা উচিত সেই ভুলটা ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত। স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই ভুলটা একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। এর মধ্যে কোনও অসত্ উদ্দেশ্য ছিল না। ছিল যে না তা স্বপক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। পুলিশ সুপারের কাছে উচ্চ আদালত একটা রিপোর্ট চেয়েছে। আজ সেই রিপোর্ট পুলিস সুপার পেশ করবেন। কাজ করতে গিয়ে সবার ভুল হয়। আর একটি বিষয় হল সন্দেশখালিতে পুলিশি নিরাপত্তা রয়েছে। তার মধ্যেই অনেক জন প্রতিনিধি আসছেন। কিন্তু লক্ষ্য করছি, জন প্রতিনিধিদের কেউ কেউ পুলিসের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক, প্ররোচনামূল মন্তব্য করছেন। এমনকি এমনকিছু মন্তব্য করা হয়েছে যাতে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগে, একটা ভেদাভেদের বাতাবরণ তৈরি হয়। এটা আমাদের পক্ষে অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আশাকরব জনপ্রতিনিধিদের একাংশ এমন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবেন যাতে মানুষে মানুষে ধর্মীয় বিভেদ তৈরি না হয়। শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে তৃণমূলের নেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রমাণ করে আমাদের সরকার রাজধর্ম পালন করে। আমরা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছি। শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে দল। ঠিক একইভাবে এবার গ্রেফতার শেখ শাহজাহান। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন কোর্টের স্টে অর্ডারের কারণেই শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাচ্ছিল না। স্টে অর্ডার সরানোর তিন থেকে চারদিনের মাথাতেই গ্রেফতার করা হল তাঁকে।