পার্কসার্কাসে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে শুটআউটের ঘটনায় সম্ভবত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন আত্মঘাতী পুলিশ কনস্টেবল চোডুপ লেপচা ৷ ঘটনাস্থলে গিয়ে এমনটাই জানালেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী ৷ তবে, তিনি সেই কারণেই এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ প্রশাসন। সূত্রে খবর, ঘটনাস্থল কড়েয়া থানার লোয়ার রেঞ্জ রোড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগোচ্ছিলেন সি লেপচা ৷ সেই সময় তাঁর কাঁধে সার্ভিস এসএলআর ছিল ৷ একটি আউটপোস্টের সামনে কর্তব্যরত ছিলেন তিনি ৷ কাঁধে এসএলআর নিয়ে হাঁটার সময়ই আচমকাই গুলি চালাতে শুরু করেন সি লেপচা ৷ সেই সময় সেখান দিয়ে একটি বাইকের সওয়ারির আসনে বসে যাচ্ছিলেন হাওড়া দাসনগরের বাসিন্দা রিমা সিং ৷ গুলি গিয়ে তাঁর গায়ে লাগে৷ কড়েয়া থানা এবং বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ৷ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ ঘটনায় আরও ২ জন পথচারী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷ আহতদের মধ্যে একজন বাইক চালক, যাঁর বাইকে রিমা সিং বসেছিলেন ৷ তার পরেই নিজেকে গুলি করেন কনস্টেবল চোডুপ লেপচা ৷ মর্মান্তিক পরিণতিতে হতভম্ব হাওড়ার দাসনগরের সিং পরিবার ৷ এই এলাকারই ফকির মিস্ত্রী বাগানের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন এই পরিবারের সদস্যরা ৷ শুক্রবার বেলায় হঠাৎই তাঁদের কাছে খবর আসে, পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচ থেকে কমে হয়ে গিয়েছে চার ! এদিন একটি ব্যক্তিগত কাজে কলকাতায়
গিয়েছিলেন রিমা সিং ৷ পার্ক সার্কাসে গুলিচালনার ঘটনায় বেঘোরে প্রাণ যায় তাঁর ৷ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দাসনগরে সিং পরিবার ভাড়া রয়েছে প্রায় পাঁচ বছর ধরে ৷ নিম্নবিত্ত পরিবার ৷ সদস্যসংখ্যা শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ছিল পাঁচ! রিমা থাকতেন তাঁর বাবা, মা, ভাই এবং দিদার সঙ্গে ৷ রিমা নিজে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন ৷ তাঁর বাবা ও ভাইও টুকটাক কিছু রোজগার করেন ৷ সকলের মিলিত আয়েই কোনও মতে সংসার চলে ৷ শুক্রবার খুব সম্ভবত, চিকিৎসাজনিত কোনও কারণে কলকাতায় গিয়েছিলেন রিমা ৷ কিন্তু, গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই সব শেষ ! এদিন পার্ক সার্কাসের কাছে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে কর্তব্যরত এক জওয়ান হঠাৎই এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন ৷ তাতেই প্রাণ যায় রিমার ৷ পরে ওই জওয়ানও আত্মহত্যা করেন ৷ প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তাঁরা সকালেই সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনার কথা জানতে পারেন ৷ কিন্তু, ঘটনায় নিহত তরুণী যে তাঁদেরই পাড়ার মেয়ে, তা তাঁরা ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি ৷ পরে এলাকারই এক বাসিন্দার কাছে একটি ফোন আসে ৷ জানতে চাওয়া হয়, এই এলাকায় রিমা দাস নামে কেউ থাকেন কি না ৷ পরে বোঝা যায়, রিমা দাস নয়, আদতে রিমা সিংয়ের খোঁজ করা হচ্ছে ৷ এরপর গোটা ঘটনা পরিষ্কার হতে আর খুব বেশি সময় লাগেনি ৷ মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পড়েন রিমার মা ৷ রিমার বাবা কলকাতায় যান মেয়ের দেহ শনাক্ত করতে ৷ গোটা ঘটনায় হতবাক রিমার পরিবার ও প্রতিবেশীরা ৷ একজন পুলিশের এমন আচরণে সম্পূর্ণ নির্দোষ এক তরুণীর অকাল প্রয়াণ কেউই মেনে নিতে পারছেন না ৷