আগামী রবিবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৪টে পর্যন্ত একান্ত প্রয়োজন না থাকলে রোদে না বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশ দাস বুধবার জানান, রবিবারের পরেও তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি চলতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচদিনের নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া যায়। তাই আপাতত সেই ক’দিনের পূর্বাভাসই দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের মালদা এবং দুই দিনাজপুর জেলায়ও এই সময়ে তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। গত কয়েকদিন ধরে গোটা রাজ্যেই চলছে তীব্র গরমের প্রকোপ। কালবৈশাখীর দেখা নেই। এই পরিস্থিতিতে কমপক্ষে আরও চারদিন তাপপ্রবাহের পূর্বাভাসে উদ্বিগ্ন বঙ্গবাসী। বুধবারও দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। সন্ধ্যায় জানা যায়, এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। উপকূল এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি হলেই তাপপ্রবাহ বলে ধরা হয়। সমতলের অন্যান্য এলাকায় তাপপ্রবাহ ঘোষণা করতে গেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অন্তত ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ ডিগ্রি ছুঁতে হয়। এদিন মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির বেশি। সল্টলেক, থেকে আসানসোল, বর্ধমান, পুরুলিয়া—সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। কেন এমন পরিস্থিতি? আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শুকনো গরম হাওয়া ঢুকছে। সঙ্গে রয়েছে চড়া রোদ। অথচ বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প খুবই কম ঢুকছে স্থলভাগে। তাই আপেক্ষিক আর্দ্রতাও কম। মঙ্গল ও বুধবার তা ছিল যথাক্রমে ২২ ও ১৬ শতাংশ। ফলে গায়ে ছেঁকা দেওয়া গরম অনুভূত হলেও ঘাম খুব বেশি হচ্ছে না। আবহাওয়া দপ্তরের রেকর্ড বলছে, শেষবার ২০১৬ সালের এপ্রিলে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করেছিল। সেই আশঙ্কা থাকছে এবারও।
বৈশাখ না পড়তেই চৈত্রের গরম ৪০ ডিগ্রিকে ছুঁয়ে ফেলাটা বেশ অস্বাভাবিক। রোদের তেজে চোখ ঝলসে গেলেও বাংলার সেই ঘেমো গরম এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। বাতাসে জলীয় বাষ্প কমের জেরে ঘাম না হলেও দুপুরের পর থেকে গরম হাওয়া (লু) বয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে স্বস্তির কোনও খবর নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। পরবর্তী কয়েকদিন তাপপ্রবাহের সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে গতকালই গাইডলাইন জারি করেছে নবান্নের তরফে। এই গাইডলাইনে তৃষ্ণার্ত না হলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর জলপান, হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরা, ছাতা, টুপি কিংবা অন্যকিছু দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা, হালকা খাবার ও শশা-তরমুজ জাতীয় ফল খাওয়া, বাড়িতে লেবুজল বা সরবত বানিয়ে পান করা, চাষবাষের কাজ সকাল ও বিকেল নাগাদ করা । যাঁরা বাইরে কাজ করেন, তাঁদের দুপুরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। শরীরে জলের ঘাটতি যাতে না হয়, তার জন্য বার বার জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট মিশ্রিত পানীয় খাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সানস্ট্রোকের সম্ভাবনা এড়াতে সরাসরি রোদ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এই নির্দেশিকায়। রোদে কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর ছায়ায় এসে বিশ্রাম নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। রোদে বেরিয়ে কারও মাথা ঘুরলে কিংবা বমি পেলে সঙ্গে সঙ্গে ছায়ায় বসে জল খাওয়া এবং বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শরীর খারাপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সহ একাধিক কথা বলা হয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তি জ্ঞান হারালে তাঁকে দ্রুত হাসপাতাল কিংবা স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আগাম সতর্কতা হিসাবে হালকা রঙের সুতির পোশাক, রোদচশমা, ক্ষেত্রবিশেষে দস্তানা পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রখর সূর্যালোকে না বেরনো, তীব্র রোদে কাজ না করা এবং বেশি তেল মশলাযুক্ত খাবার না খাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কারও হিট-স্ট্রোক হলে কী করণীয় সেই সম্পর্কেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।