অশিক্ষক কর্মী থেকে নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কারও চাকরি আপাতত যাচ্ছে না। শিক্ষাদপ্তরের গ্রুপ ডি পদে বেআইনিভাবে নিয়োগের অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্ট ১,৯১১ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই রায়ের উপর বুধবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তা-ই নয়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) গ্রুপ সি ক্লার্ক এবং নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলাতেও হাইকোর্টের রায় এই মুহূর্তে কার্যকর হচ্ছে না। আপাতত সেই নির্দেশ নিষ্ক্রিয় রাখল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ। কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গ্রুপ ডি পদের চাকরি হারানোদের একাংশ। কিন্তু ততদিনে উচ্চ আদালত নির্দেশ অনুযায়ী ওই শূন্যপদ পূরণে নতুন প্রার্থীদের কাউন্সেলিং শুরু করে দেয় এসএসসি। মামলাকারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ শীর্ষ আদালত মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাউন্সেলিং বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। এদিন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চে মামলাটি ফের শুনানির জন্য ওঠে। চাকরি হারানো অশিক্ষক কর্মীদের আইনজীবী পার্থসারথি দেববর্মন বলেন, ‘হাইকোর্ট আমাদের কথা ঠিক মতো না শুনে চাকরি বাতিল করেছে। তাই স্রেফ কাউন্সেলিং নয়, চাকরি বাতিলের রায়ের উপরও স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক।’ আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করে। আগামী ৯ মে এই মামলার শুনানি হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৮৪২ জন গ্রুপ সি কর্মী এবং নবম-দশম শ্রেণির ৯৫২ জন সহকারী শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন দাবি পার্থসারথিবাবুর। কলকাতা হাইকোর্টের এই সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশকেও এদিন আপাতত নিষ্ক্রিয় রাখার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চ জানিয়েছে, সর্বোচ্চ আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের কোনও রায় আপাতত কার্যকর হবে না। আগামী বুধবার মামলাটির শুনানি হতে পারে। উল্লেখ্য, নবম-দশমের শিক্ষক পদে চাকরির পরীক্ষায় ৯৫২ জনের ওএমআর শিট বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই মামলায় প্রথমে ৬১৮ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। পরে নবম-দশমের আরও ১৫৭ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করে এসএসসি। বাকি ১৭৭ জন চাকরিতে যোগ দেননি বলেই খবর। অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ মামলায় এদিন ২৮ পাতার তদন্ত রিপোর্ট জমা দিল সিবিআই। গোড়ায় মুখবন্ধ খামেই রিপোর্টটি দেওয়ার আবেদন করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী এস ভি রাজু। কিন্তু বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু বলেন, ‘না। মুখবন্ধ খামে নয়। মামলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকেই এই রিপোর্ট দিন।’ একইসঙ্গে তিনি আরও জানান, ‘আপাতত সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইয়ের এই রিপোর্ট নিয়ে চর্চা করছে না। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে যে ২৬৯ জন চাকরি হারিয়েছে, তাদের কথা শুনব।’ সেইমতো চাকরি হারানোদের হয়ে সওয়াল চালিয়ে যান আইনজীবী পি এস পাটওয়ালিয়া। তিনি এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী কুণাল চট্টোপাধ্যায় একযোগে জানান, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত টেট পাশ করা ২৬৯ জনের এক নম্বর বেশি পেয়ে চাকরিতে নিয়োগে কোনও দুর্নীতি নেই। প্রশ্নপত্রে ভুল ছিল। পরে পর্ষদ তা স্বীকার করায় অতিরিক্ত নম্বর পেয়ে এই ২৬৯ জন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। এবং চাকরি পান।