কলকাতা

‘বাংলা পথ দেখাবে দেশকে, দিদিই ঠিক করলেন, ভবানীপুর নয়, নন্দীগ্রামে স্কুটি থেকে পড়বেন’, কটাক্ষ প্রধানমন্ত্রীর

ব্রিগেড থেকে তৃণমূল এবং মমতাকে একযোগে আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্নীতি থেকে তোলাবাজি, কাটমানি থেকে সিন্ডিকেট ইস্যু নিয়ে তৃণমূলকে লাগাতার আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদি। কয়েকদিন আগেই পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে নবান্নে ই-স্কুটি করে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফেরার সময় নিজে স্কুটি চালিয়েছিলেন তিনি। মাঝে খানিকটা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ধরে ফেলেন তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীরা। আর মমতার সেই স্কুটি চালানো নিয়ে তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কেউ পড়ে গিয়ে আঘাত পান, আমি সেটা চাইনা। কিন্তু যদি পরে যেতেন হয়তো সেই স্কুটি প্রস্তুতকারী রাজ্যকেই আপনি দোষারোপ করে তাদের শত্রু বানিয়ে ফেলতেন’। মোদি বিদ্রুপের সুরে বলেন, মমতার স্কুটি ভবানীপুরের বদলে নন্দীগ্রামে গিয়ে এবার পড়বে। এর মাধ্যমে ফের একবার নন্দীগ্রামে তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়েও তোপ দাগলেন‌ প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে বললেন তৃণমূলের খেলা শেষ। এদিন তিনি জানিয়েছেন,’দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এত বড় সভা দেখিনি। হেলিকপ্টার থেকে দেখছিলাম। ময়দানে জায়গা নেই। রাস্তায় লোক উপচে পড়ছে। মনে হয় না ওঁরা পৌঁছতে পারবেন। সকলকে প্রণাম জানাই। বাংলার মাটি থেকেই ভারতীয় সংস্কৃতির বিকাশ, বাংলার মাটি থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু। বাংলার মহাপুরুষরা এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত ভাবনাকে মজবুত করেছিলেন।’ আজ ব্রিগেডে গ্রাউন্ডে ভিড় দেখে ও লোকসভায় বিজেপির ১৮ আসন জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘কখনও আমাকে রাবণ, কখনও দৈত্য, কখনও গুন্ডা বলছেন দিদি। এত রাগ কেন দিদি? আপনার দল এবং আপনার সরকারের পাঁকেই আজ বাংলায় পদ্ম ফুটছে। গণতন্ত্রের নামে বাংলায় লুঠতন্ত্রকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, জাত-ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতি করেছেন, তাই আজ বাংলায় পদ্ম ফুটছে। দিদিকে অনেক দিন ধরে চিনি। বামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়া দিদি এমন ছিলেন না। কিন্তু আজ দিদির রিমোট কন্ট্রোল অন্যের হাতে। ২ মে-র পর বাংলা থেকে সমস্ত ভয় দূর হবে। পদ্মে ছাপ, তৃণমূল সাফ।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘আগামী ৫ বছরে বাংলায় যে বিকাশ ঘটবে, তাতে পরবর্তী ২৫ বছরের ভিত তৈরি হবে। বাংলার উন্নয়নের কথা ভেবেই ভোট দিন। ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার ১০০তম পূর্তিতে বাংলা আবার ফের দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করবে। মাছ হোক বা ভাত, বন্দর হোক বা বাণিজ্য, বাংলার মাটিতে সবকিছু রয়েছে। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোতে হবে। আমাদের এনডিএ সরকার সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোবে। কলকাতা সিটি অব জয়। কলকাতার কাছে সমৃদ্ধশালী অতীত এবং সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত্‍ রয়েছে। কলকাতার সংস্কৃতিকে সুরক্ষিত রেখে তাকে ভবিষ্যতের শহর বানানোর সামনে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই।’ এরই সঙ্গে রাজ্যের কাটমানি কিংবা সিন্ডিকেট নিয়েও তোপ দাগেন মোদি। এছাড়াও সারদা, নারদা, কয়লা কাণ্ড কিংবা গরু পাচারের মতো দুর্নিতিও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মোদি। তিনি বলেছেন, ‘ গোটা বাংলা এক স্বরে বলছে, আর নয় অন্যায়। তৃণমূল সরকারের আয়ু কমে আসছে। আজ গোটা দেশ শুনুক, দুর্নীতি আর নয়, তোলাবাজি আর নয়, কাটমানি আর নয়, সিন্ডিকেট আর নয়, বেকারত্ব আর নয়, হিংসা আর নয়, আতঙ্ক আর নয়, তুষ্টিকরণ আর নয়, অন্যায় আর নয়। এত জোরে বলুন যাতে আপনাদের রাগ, ক্ষোভ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতার লড়াইকে ভিত্তি করে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল। তার পর কিছু দিন কাজ হয়েছিল। তার পর থেকেই রাজনীতির খেলা শুরু হয়। বামপন্থীরা অত্যাচার চালাতে শুরু করে। বামপন্থীরা একসময় বলতেন কংগ্রেসের কালো হাত ভেঙে দাওয়, গুঁড়িয়ে দাও। এই স্লোগানবাজির দৌলতেই ক্ষমতা দখল করে। প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় ছিল। আমি জানতে চাই, আজ সেই কালো হাতের কী হল। কালো হাত ফরসা হয়ে গেল কী ভাবে। যে হাতকে বামপন্থীরা কালো ভাবতেন, আজ তা সাদা হল কী ভাবে। যে হাত গুঁড়িয়ে দিতে চাইতেন, আজ সেই হাত ধরেই এগোচ্ছেন। বামেদের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের স্লোগান তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মা-মাটি-মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন কি?’